বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

S M Ashraful Azom
0

: সেই ১৯৪৭ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে একদম সন্মুখ সাড়িতে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতার বন্দরে মুক্তিকামী বাঙালি জাতিকে নিয়ে গেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
সংবাদ সংস্থা Press Trust of India এর ২৬ মার্চ, ১৯৭১-এর টেলেক্স বার্তার নথি



বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এটা ইতিহাস স্বীকৃত, এর জন্য কোনো প্রমাণ দরকার হয় না। ইতিহাসের পাতায় পাতায় এর অনেক প্রমাণ রয়ে গেছে, তবুও দুঃখের বিষয় একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একে মিথ্যা প্রমাণের জন্য দীর্ঘ দিন প্রচার প্রচারণা  চালিয়ে আসছে। তারা ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১, এই সুদীর্ঘ সময়ের ইতিহাসকে মুছে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ২৭ মার্চ (অধুনা দাবী ২৬ মার্চ) ১৯৭১, মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ দিয়ে শুরু বলে হাস্যকর প্রচারণা চালাচ্ছে। এ জন্য নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত

হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস জেনে বড় হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার কিছু প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করছি নতুন প্রজন্মের জন্য।


‘দ্য ইকোনমিস্ট’ ১৩ মার্চ লিখেছে, ‘৭ মার্চে দেয়া মুজিবের চার শর্তের মধ্যে দুটি শর্ত অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর কার্যত রাষ্ট্রপতির পক্ষে গ্রহণ করা অসম্ভব। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শিগগিরই ঢাকায় যাচ্ছেন, শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সেটাই হতে পারে তার শেষ বৈঠক।’


১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ ঢাকায় ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়। আলোচনার জন্য ভুট্টোও ঢাকায় আসেন। ২৪ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ইয়াহিয়া-মুজিব-ভুট্টো আলোচনা হয়। ২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেন। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা রাইফেল সদর দপ্তর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনেস।


২৬ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ট্রান্সমিটারযোগে চট্টগ্রাম ইপিআর হেড কোয়াটার্সসহ দেশের অনেক জায়গায় প্রেরণ করেন।


বঙ্গবন্ধুর উক্ত ঘোষণাটি ছিল নিম্নরূপ:


‘This may be my last message, from today Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh. Final victory is ours.’


[বঙ্গানুবাদ: ‘সম্ভবত এটাই আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনসাধারণকে আহ্বান জানাচ্ছি, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যা-ই তোমাদের হাতে আছে তার দ্বারাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দখলদার সৈন্যবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে হবে। যতক্ষণ না পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ ব্যক্তি বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত হবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হবে, তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’]


এর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বাংলায় নিম্নলিখিত একটি ঘোষণা পাঠান: ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ- দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোনো আপস নাই। জয় আমাদের হবেই। পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক প্রিয় লোকদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’


বঙ্গবন্ধু এভাবেই হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাঙালি সামরিক ও বেসামরিক যোদ্ধা, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষকসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বান বেতার যন্ত্র মারফত তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় সারাদেশে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা প্রচার করা হয় এবং চট্টগ্রামে সাইক্লোস্টাইল কপি করে ২৬ মার্চ জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়।


২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার বার্তা প্রেরণের পর পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তাকে বন্দি অবস্থায় ঢাকা সেনানিবাস থেকেই পাকিস্তানে নিয়ে লায়ালপুর (বর্তমানে ফয়সালাবাদ) জেলে বন্দি করে রাখে।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার দলিলঃ 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার দলিল
সংবাদ সংস্থা Press Trust of India এর ২৬ মার্চ, ১৯৭১-এর টেলেক্স বার্তার নথি

সংবাদ সংস্থা Press Trust of India এর ২৬ মার্চ, ১৯৭১-এর টেলেক্স বার্তার নথি-

যেখানে প্রথম অংশে বলা হচ্ছে-  আগরতলা থেকে প্রাপ্ত সংবাদ (২৬ মার্চ, ১৯৭১: রাত ০৯ টা ০৭ মিনিট): শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ, ১৯৭১ এ "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ" নাম দিয়ে পূর্ব-পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেছেন।

দ্বিতীয় অংশে বলা হচ্ছে- আগরতলা থেকে প্রাপ্ত সংবাদ (২৬ মার্চ, ১৯৭১: রাত ০৯ টা ০৮ মিনিট): বেতারকেন্দ্র নাম দিয়ে একটি রেডিও স্টেশন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষিত স্বাধীনতার বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।

তৃতীয় অংশে বলা হচ্ছে- শিলং থেকে প্রাপ্ত সংবাদ (২৬ মার্চ, ১৯৭১): বাংলা বেতারকেন্দ্র নামে একটি রেডিও স্টেশন থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত পূর্ব-পাকিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণার প্রচার শোনা যাচ্ছে।



শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top