মেলান্দহে বিষমুক্ত সব্জির চাষের গ্রাম

S M Ashraful Azom
0

: জামালপুরের মেলান্দহে কৃষকদের মাঝে বিষমুক্ত সব্জি চাষের আগ্রহ বাড়ছে। স্থানীয় কৃষি অফিসের সহায়তায় ১শ’ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের সব্জির চাষাবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা। 

মেলান্দহে বিষমুক্ত সব্জির চাষের গ্রাম



ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট (আইপিএম) বা সমন্বিত বালাই নাশক পদ্ধতিতে দেশের ২০টি ইউনিয়নের আওতায় মেলান্দহের শ্যামপুর এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষকদের মাঝে পরিক্ষামূলক এই প্রকল্প চালু করেছে কৃষি বিভাগ। প্রতিটি গ্রুপে ২৫ জন করে ২০ টি গ্রুপের মোট ৫শ’ কিষাণ-কিষাণী এই প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছেন। ৫শ’ কৃষকের মধ্যে প্রায় ২শ’ মহিলা, বাকিরা সবাই পুরুষ। স্থানীয়রা এই এলাকাকে বিষমুক্ত সব্জি চাষের গ্রাম বলে সম্বোধন করছেন।

ইতোমধ্যেই কীটনাশকমুক্ত চাষাবাদে উদ্বোদ্ধ হয়ে অন্যান্য কৃষকরাও এই পদ্ধতিতে সব্জির চাষ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মধ্যে এটি পরিবেশবান্ধব সর্বশেষ-সময়োপযোগি আধুনিক পন্থা। প্রত্যেক কিষাণ-কিষাণীদের ৫দিনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। কৃষকদের মাঝে বিনামুল্যে বীজ, কীটনাশক মারণাস্ত্র ফেরোমিন, ফাঁদ, ভার্মিকম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্ট-জৈব সার, নেট হাউজ, মানচিং শিট, প্রযুক্তিসহ আনুসাঙ্গিক সাপোর্ট প্রদান করেছে কৃষি বিভাগ। এই প্রকল্পের শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন স্থানীয় ভূমিহীনরা। এতেই শেষনয়, সব্জির বাজারজাতকরণের জন্য গ্রæপ ভিত্তিক ভ্যান গাড়ি এবং পরিমান মতো ২৫টি করে ক্যারেট (খাঁচা জাতীয়) প্রদান করেছে।

বৈজ্ঞানিক এই পদ্ধতিতে চাষা করা হচ্ছে, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, ধুন্দল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করল্লা। এ ছাড়াও কৃষকদের নিজ প্রয়োজনে চাষ করছেন-তরমুজ, রঙ্গিন তরমুজ ছাড়াও আরো ৪ জাতের স্কোয়াশ, ৩ জাতের ক্যাপসিক্যাম, লাল ঢেড়স, নতুন নতুন জাতের ফুলকপি, লাল শাক, পাট শাক, সারিসারি পেপের গাছ, টমেটো ইত্যাদি।

কৃষক শফিকুল ইসলাম (৫৬) নিজের জমিতে আবাদ করেন না। তিনি কৃষকের জমি লিজ নিয়ে সারাবছর সব্জির চাষ করেন। বছর শেষে খরচপাতির পর প্রায় অর্ধেক লাভ টিকে। তিনি স্বচ্ছলতায় ফিরেছেন। ছনের ঘর ছিল। এখন পাকা বাড়িতে ঘুমান! তিনি জানান-২০০৩ সাল থেকে সব্জির চাষাবাদ করছি। খরচপাতি বাদে আমার অনেক লাভ থাকে। এবারও সাড়ে ৪ বিঘার জমিতে সব্জির চাষ করছি। কৃষি অফিসের পরামর্শে বিনামুল্যে বীজ-সার পেয়েছি। খরচও কমেছে। এবারের ফসলে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হচ্ছে না। ফলনেরও কমতির সম্ভাবনা দেখছি না। 

শ্যামপুর গ্রামের কৃষক দিদারুল আলম (৪৫) জানান-সারা বছর সব্জির চাষে খরচের পর ৭০/৮০ হাজার টাকা থাকে। এই টাকায় প্রতিবছর আমি গরু ক্রয় করি। সব্জির ক্ষেতেই প্রচুর ঘাষ হয়। এই ঘাস গরুর খাদ্যের চাহিদাও মেটে।

কৃষক ইসরাফিল (৪০) জানান-কৃষি অফিস থেকে বীজের সাথে আনুসাঙ্গিক সহায়তা পেয়েছি। প্রতি বছর বিঘাপ্রতি খরচ হতো লক্ষাধিক টাকার কাছাকাছি। এবার খরচ হয়েছে ৩০/৪০ হাজার টাকা। সার-কীটনাশক দিতে হয়নি। এবার লাভের আশা বেশি করছি।

আরেক কৃষক শহিদুল ইসলাম (৫০) জানান-আমি ১৩ বছর যাবৎ সব্জির চাষ করি। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার খরচ কম। সার-কীটনাশক দিতে হচ্ছে না। কৃষি অফিস একধরণের ফাঁদ এবং তাবিজ জাতীয় পানির পাত্র দিয়েছে। এই কেরামতিতে সব পোকামাকড় ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যায়।

কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল জানান-পোকামাকড়ের জেনিটিক আচরণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রংয়ের ফাঁদ আবিস্কার করেছে কৃষি বিভাগ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-কীটনাশক মারণাস্ত্র ফেরোমিন, ফাঁদ, নেট হাউজ, মানচিং শিট। পোকামাকড়ের আকৃষ্টকারি হলুদ, লাল, কালো ফাঁদে একধরণের আঠা থাকে। সেই আঠাতে বসলেই পোকামাকড় মারা যায়। আরো মজার বিষয় হচ্ছে-সব্জি ছিদ্রকারি পোকা দমনের জন্য একটি পাত্রে কেমিক্যালের তৈরি (কৃষকের ভাষায় তাবিজ) ফেরোমিন রাখা হয়। ফেরোমিনে নারী পোকার গন্ধ ছড়ায়। প্রজননের জন্য পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে ফেরোমিনের পাত্রে প্রবেশকরেই পানিতে পড়ে মারা যায়। এ ছাড়াও মানচিং পদ্ধতিতে চাষ করলে ফসলে আগাছা হয় না। ক্ষেতে পানিরও সংকট পড়ে না। মানচিং হচ্ছে বপনকৃত বীজের স্থান উন্মুক্ত রেখে বাকি জমি পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। পোকার আক্রমনের সম্ভাবনা বেশি থাকলে নেট দিয়ে ক্ষেতের চারদিকে ঢেকে দিতে হয়। বিষমুক্ত সব্জি কিংবা ফসলাদি পেতে এই¬ পদ্ধতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কৃষি বিভাগ।



শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top