মো. শাহ্ জামাল, জামালপুর সংবাদদাতা : জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেছেন-সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যাকান্ড বরদাশÍ করা হবে না। এটি একটি জঘন্যতম এবং পরিকল্পিত হত্যা। আর কোন সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনও সহ্য করা হবে না। সাংবাদিকরা রাষ্ট্র এবং গণমানুষের জন্য কাজ করেন। সাংবাদিকরা অসহায় থাকতে পারে না। নিহত সাংবাদিক নাদিম এবং তাঁর পরিবারের পাশে রাষ্ট্র আছে। থাকবে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, নাদিম হত্যাকান্ডের বিষয়ে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং লোকাল প্রশাসনের সাথে আন্তরিকভাবে যোগাযোগ রাখছে। শুধু তাই নয়, বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার প্রতিও সুক্ষè নজর রাখছে। যাতে সাংবাদিক হত্যার ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি নিরীহ-নিরাপরাধ কেও যাতে হয়রানি না হয়; এজন্য আন্তরিকভাবে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন অতিউৎসাহী বা বিভ্রান্তির প্রতিও সজাগ থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, একটা অপরাধ থেকে যাতে আরেকটা অপরাধের জন্ম না হয়।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহম্মেদ ২০ জুন জামালপুরের বকশীগঞ্জে ৭১ টিভি, মানবজমিন, বাংলা নিউজ ২৪.কমের নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের কবর জিয়ারত, শোকাহত পরিবারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। ওইদিন বিকেল ৩টায় জামালপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মানবাধিকার সুরক্ষা কমিটি, সাংবাদিক-মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিক নাদিমের পরিবারকে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে অর্থ সহায়তা পেতে জেলা প্রশাসনকে দ্রæত উদ্যোগ নিতে বলেন। একই সাথে নাদিম হত্যার মামলাটি দ্রæত সম্পন্নের জন্য ডিবিকে তদন্তের ভার দেয়ার কথাও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে সাংবাদিক নাদিম হত্যার আবেগঘন অনুভূতি, সাংবাদিকদের দু:খ-কষ্ট-দুরবস্থার প্রতিচিত্র, মানবাধিকার লঙ্গন, মানবাধিকার ও সাংবাদিক অধিকার সুরক্ষাসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয়ের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। পরে সাংবাদিকদের দাবি-দাওয়ার সাথে একমত পোষণ করে বলেন, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং ডিজিটাল নিরাপত্ত¡া আইন বাতিল/সংশোধনীর প্রয়োজন আছে। তিনি আরো জানান-আইন মন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, জাতীয় পর্যায়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্যদের সাথেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রয়োজনে আরো কথা বলবেন।
ড. কামাল উদ্দিন আরো বলেন, কিছু মানবাধিকার সংগঠন নিবেদিত হয়ে কাজ করছে। কিছু সংগঠন মানুষকে হয়রানি করছে। তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিলও করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার সংগঠনের নামের সাথে মিল রেখে পরিচয় দেয়া হচ্ছে। মানুষকে বিভ্রান্তি ও হয়রানি করা হচ্ছে। এমন সংগঠন চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের অনেকেই গ্রেপ্তার আছে। সবশেষে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সামনের দিনে বাংলাদেশ আরো ভালো করবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবির্ক) মুক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন-জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট বাকি বিল্লাহ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ-তদন্ত) আশরাফুল আলম, পরিচালক (প্রশাসন-অর্থ) কাজী আরফান আশিক, উপপরিচালক সুস্মিতা পাইক, সিভিল সার্জন ডা. প্রণয়কান্তি দাস, পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা বার সমিতির সভাপতি এড. আমান উল্লাহ আকাশ, জামালপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা, (চ্যানেল আই), জেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এড. ইউসুফ আলী (যায়যায়দিন), জামালপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান (এটিএন বাংলা), অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি-মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম (বাংলার চিঠি), জেলা প্রেস ক্লাবের সদস্য-এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ্ জামাল (ইত্তেফাক/নিউ নেশন) প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ওইদিন বিকেলে নিহত সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের খোঁজখবর নিতে যান সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এমপি। এ সময় তিনি সাংবাদিক নাদিম হত্যাকারিদের কাওকে ছাড় দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন।
বকশীগঞ্জের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার, ইউএনও লুৎফুন্নাহার, এসি ল্যান্ড আতাউর রাব্বী, ওসি সোহেল রানা, বকশীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি শাহীন আল আমিন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গসহ স্থানীয় সাংবাদিক, আ’লীগের নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগের দিন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নেতা রশিদুজ্জামান মিল্লাত সাবেক এমপি, জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এড.ওয়ারেছ আলী মামুনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক নাদিমের পরিবারকে ১ লাক টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করেছেন।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।