সেবা ডেস্ক: দখলদার ইসরায়েলের হুমকির কারণে ইরানের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়লে ইরান তার পরমাণু নীতি পরিবর্তন করার হুঁশিয়ারি দিলো দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খাররাজি।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) ইরানের স্টুডেন্ট নিউজ নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে বলে পালটা হুঁশিয়ারি দেন খাররাজি।
খাররাজি বলেছেন, আমাদের পরমাণু বোমা তৈরির কোনো পরিকল্পনা নেই। কিন্তু ইরানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে সামরিক মতবাদ পরিবর্তন করা ছাড়া আমাদের কোনও বিকল্প থাকবে না।
এ ধরনের মন্তব্যের পর ইরান দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি চালাচ্ছে বলে যে দাবি করে আসছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তেহরান বরাবরই বলে আসছে তাদের পরমাণু অস্ত্র অর্জনের কোনও পরিকল্পনা নেই। পশ্চিমা সরকার সন্দেহ করে আসছে, পরমাণু কর্মসূচির নামে পারমাণবিক বোমা তৈরির খুব কাছাকাছি চলে গেছে ইরান।
গত ১৩ এপ্রিল তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায় ইরান। তেহরান বলেছে, ১ এপ্রিল দামেস্কে তার দূতাবাস প্রাঙ্গণে একটি সন্দেহভাজন ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেই হামলাটি চালানো হয়েছিল। এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। যদিও এখন পর্যন্ত ইরানে সরাসরি হামলা চালায়নি ইসরায়েল । তবে গাজায় অভিযান আরও জোরদার করেছে। বিশেষ করে রাফাহ শহরে রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে পরিকল্পনা মাফিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
২০০০ সালের শুরুর দিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি পরমাণু অস্ত্রের উন্নয়ন নিষিদ্ধ করে একটি ফতোয়া জারি করেন। তিনি বলেন, ইসলামে এটি হারাম বা নিষিদ্ধ।
এরপর ২০২১ সালে ইরানের তৎকালীন গোয়েন্দামন্ত্রী বলেন, পশ্চিমা চাপের মুখে ইরানকে পরমাণু অস্ত্রের দিকে অগ্রসর করতে পারে।
সম্প্রতি ইরানের পরমাণু অস্ত্র সক্ষমতা নিয়ে সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে একটি নিবন্ধ লিখেছেন মার্কিন সাংবাদিক জবি ওয়ারিক। যেখানে তিনি দাবি করেন, ইরান পরমাণু বোমা তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে। সাংবাদিক জবি ওয়ারি লেখেন, ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে বড় ভুল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নজর এড়িয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়— বর্তমানে নিজেদের নাতাঞ্জ ও ফোরদো পরমাণু প্রকল্পে ৬০ শতাংশ হারে ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধ করছে ইরান। পরমাণু অস্ত্র বা বোমা তৈরি করতে প্রয়োজন ৯০ শতাংশ বা তার বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম। ইরান যে গতিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, তাতে শিগগিরই পরমাণু অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করবে।
জবি ওয়ারিক লেখেন, পশ্চিমা বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। জবাবে ইরান বলে আসছিল—তাদের এই প্রকল্প শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক উদ্দেশ্যে নির্মিত। তবে, সম্প্রতি ইরানি কর্মকর্তরা বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছেন। দেশটির পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামির একটি বক্তব্য ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। প্রথমবারের মতো ইরানের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি বলেন, আগ্রাসন রুখতে ইরান এই অস্ত্র ব্যবহার করবে।
নিবন্ধে বলা হয়— পরমাণু অস্ত্র বানানোর আগেই ইরানকে যদি থামানো না যায়, তাহলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে গণবিধ্বংসী এই অস্ত্র বানানোর হিড়িক পড়ে যাবে। এই দৌড়ে সবার আগে নাম লিখাবে সৌদি আরব। দেশটির কার্যত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন— ইরান পরমাণু বোমা বানালে বসে থাকবে না সৌদিও। অন্যদিকে আঞ্চলিক শক্তিধর তুরস্ককেও তখন থামিয়ে রাখা যাবে না। ভয়াবহ সেই প্রতিযোগিতার ফলে আবারও বিস্তার ঘটবে পরমাণু অস্ত্রের, যা গোটা বিশ্বের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।