সেবা ডেস্ক: ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে পাকিস্তানের বিক্ষোভে সরব বুশরা বিবি। তার রাজনৈতিক উপস্থিতি এবং নেতৃত্ব দেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে।
বুশরা বিবি: দাবায় সৈন্য যখন হেরে যায়, রানি এগিয়ে আসেন |
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি একসময় ছিলেন অরাজনৈতিক একজন নারী। কিন্তু ইমরান খানের কারাবন্দি হওয়ার পর তিনি তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সম্প্রতি ইসলামাবাদে বুশরার সরব উপস্থিতি এবং আন্দোলনে তার ভূমিকা রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
গত সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাতেই রাজধানী ইসলামাবাদে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রায় ১০ হাজার কর্মী-সমর্থক ডি-চক এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেয়। তবে মঙ্গলবার মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের হটিয়ে দেয়। সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এই আন্দোলনে বুশরা বিবি প্রথমবারের মতো সরাসরি অংশ নেন। একটি ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "ইমরান খান এখানে না আসা পর্যন্ত আপনারা যাবেন না।" তার এই আহ্বান আন্দোলনে নতুন প্রাণসঞ্চার করে। তবে এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেন, "এই সংঘাতের জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী বুশরা বিবি।"
ইমরানের সঙ্গে আধ্যাত্মিক যোগাযোগ থেকে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় বুশরা বিবির। ২০১৮ সালে তারা বিয়ে করেন। বুশরার রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে বরাবরই আলোচনা কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে তিনি ইমরান খানের 'বার্তাবাহক' হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ইমরানের একটি সাম্প্রতিক বার্তায় তিনি বলেন, "রাজনীতির সঙ্গে বুশরা বিবির কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আমার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন মাত্র।" তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বুশরার এই উপস্থিতি পিটিআইয়ের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে পারে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে নারীদের হঠাৎ সক্রিয় হওয়া নতুন নয়। বেনজির ভুট্টো, মারিয়াম নওয়াজ শরিফের মতো নারীরাও পরিবারতন্ত্র থেকে উঠে এসে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে ইমরান খান যখন পরিবারতন্ত্রের সমালোচক ছিলেন, সেই তিনি এখন বুশরার নেতৃত্বে দল পরিচালনা করছেন।
লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক আসমা ফাইজ বলেন, "বুশরা বিবি অরাজনৈতিক মানুষ বলে মনে করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তার ভিন্ন রূপ দেখা যাচ্ছে।"
ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, বুশরার উপস্থিতি বিক্ষোভকারীদের কাছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে। তবে তার এ ভূমিকা দলীয় নেতাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে বলেও মত দেন তিনি।
বুশরার আন্দোলনে সরব উপস্থিতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচিত। পাকিস্তানের এক বাসিন্দা এক্সে লিখেছেন, "যখন দাবার সৈনিকেরা পরাজিত হয়, তখন রানি এগিয়ে আসেন।" বুশরার ট্রাকে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের অনুপ্রাণিত করার ছবিকে অনেকে প্রশংসা করছেন।
এখন দেখার বিষয়, ইমরান খানের নেতৃত্বে পরিবারের বাইরে দল পরিচালনার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, সেটি তার তৃতীয় স্ত্রীর নেতৃত্বে কীভাবে বাস্তবায়ন হয়।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।