সেবা ডেস্ক: জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পরিকল্পিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ১৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত, তদন্তে জাতিসংঘ।
![]() |
আওয়ামী লীগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ |
বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতার মুখেও ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল সাবেক সরকার। আর সে লক্ষ্য পূরণে বিক্ষোভ দমন করার জন্য পরিকল্পিত কৌশল নিয়েছিল তারা। এর অংশ হিসেবে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গ্রেপ্তার, আটক ও নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এমন অভিমত দিয়েছেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন: ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ
আজ বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় প্রকাশিত এক বিশদ প্রতিবেদনে টুর্কের এমন বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়: আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মকাণ্ড এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘন। সরকারের নির্দেশে বিক্ষোভ দমন করতে সহিংসতা এবং গুম-খুনের ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তা বাহিনী হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে গুলি করেছে।
আরও পড়ুন:
এ প্রসঙ্গে ফলকার টুর্ক বলেন, “ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে সাবেক সরকার পরিকল্পিতভাবে নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে এবং সমন্বয়ে এই অপরাধ সংগঠিত হয়েছে।”
জাতিসংঘের তদন্তে উঠে আসা চাঞ্চল্যকর তথ্য
জাতিসংঘের তদন্তে বলা হয়: ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ হত্যা করা হতে পারে। নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। বাংলাদেশ পুলিশের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হন।
যখন সাবেক সরকার দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছিল, তখন প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বেড়ে যায়। হিন্দু, আহমদিয়া মুসলিম ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসীরাও এ সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেক প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ডের অপরাধী এখনো দায়মুক্তি ভোগ করছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতায় জাতিসংঘের তদন্ত
প্রাণহানির ঘটনাগুলো নিয়ে স্বাধীন তদন্তের জন্য প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘ বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায়। এতে ছিলেন: একজন মানবাধিকার তদন্তকারী। একজন ফরেনসিক চিকিৎসক ও একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তদন্তকাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। তদন্তকারীদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রদান করা হয়েছে এবং যেখানে যেখানে প্রবেশাধিকার চাওয়া হয়েছে, সেখানে যেতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, এটি একটি বিরল ঘটনা যেখানে একটি সরকার মানবাধিকার তদন্তে এতটা স্বচ্ছতা দেখিয়েছে।
জবাবদিহি ও ন্যায়বিচারের আহ্বান
জাতিসংঘ হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক মনে করেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাটা জরুরি। তিনি বলেন, “আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও পরিকল্পিত হত্যার উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে।”
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।