সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশের গুম হওয়া বন্দিদের আয়নাঘরে কীভাবে রাখা হতো? ভুক্তভোগী মেহেদি হাসান মুরাদের বর্ণনায় উঠে এল অমানবিক পরিস্থিতি ও ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র।
![]() |
গুম হওয়া ব্যক্তির ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আয়নাঘরের বন্দিশালার অমানবিকতা |
বদনা দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকতাম কোন রকম: আয়নাঘরের এক ভিক্টিমের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশের গুম হওয়া ব্যক্তিদের রহস্যজনক বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ নিয়ে প্রতিনিয়ত ভয়ংকর সব তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। সম্প্রতি কয়েক বছর আগে গুম হওয়া এক ভুক্তভোগী মেহেদি হাসান মুরাদ তার ফেসবুক পোস্টে এই বন্দিশালার অমানবিক পরিস্থিতির বিবরণ দিয়েছেন।
অমানবিক পরিস্থিতি: কোনো পর্দা ছিল না, টয়লেট ছিল একই রুমে
মেহেদি হাসান মুরাদ তার পোস্টে জানান, আয়নাঘরের ভেতরে থাকা বন্দিদের একসঙ্গে একই রুমে টয়লেট ব্যবহার করতে হতো। কোনো পর্দার ব্যবস্থা ছিল না, এমনকি লজ্জাস্থান ঢাকার জন্যও পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল না। তিনি বলেন, “কোনো পর্দাও ছিল না, বদনা দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকতাম কোন রকম, যেহেতু সিসি ক্যামেরা ছিল।”
তিনি আরও জানান, কিছু নির্দিষ্ট বন্দি ‘ভিআইপি আয়নাঘর’-এ থাকতেন, যাদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল। মেহেদি বলেন, “আজ আজমী, হুম্মাম সাহেবদের বর্ণনা মতে, অন্য রুমে গিয়ে তাদের টয়লেট সারতে হতো, তার মানে তারা ছিলেন ভিআইপি আয়নাঘরে। কিন্তু আমাদের একই রুমে টয়লেট সারতে হতো।”
নারী বন্দিদের কান্নার শব্দ শুনতেন
মেহেদি তার পোস্টে আরও ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, আয়নাঘরে নারীদেরও আটক রাখা হতো এবং পাশের রুম থেকে তাদের কান্নার শব্দ শোনা যেত। “আমি তাজ্জাব হয়ে যাই! আমার সাথেই আলেমরা ছিল, পাশের রুমে নারীর কান্নার শব্দও শুনতাম। ভাবতাম, তারাও কিভাবে ওপেন টয়লেট করছে?”
সংকীর্ণ বন্দিশালার ভিতরের অবস্থা
এই গোপন বন্দিশালার ভেতরের দৈহিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মেহেদি বলেন, “আমাদের রুমে পা সোজা করে শুলে কমোডের দুই পাশে পা রাখতে হতো, কাত হয়ে শুলে তবেই পা মেলা যেত। দুই হাত মোটেই মেলার সুযোগ ছিল না।”
পরিদর্শিত আয়নাঘর তার চেনা নয়
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আয়নাঘরগুলোর পরিদর্শন শুরু হয়েছে। তবে মেহেদির মতে, “আজ পরিদর্শন করা রুমগুলো আমার চেনা আয়নাঘর নয়।” অর্থাৎ, হয় এই বন্দিশালাগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে, নয়তো সত্যিকারের আয়নাঘরগুলো গোপন রাখা হয়েছে।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভয়ংকর স্মৃতিচারণা
আয়নাঘরের বাস্তবতা প্রকাশের পর গুমের শিকার হওয়া অনেকেই তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। যেসব বন্দিশালার অস্তিত্ব নিয়ে আগে সন্দেহ ছিল, এখন তা স্পষ্ট হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসব আয়নাঘর গোপন বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের আটক রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে আয়নাঘর ও গুমের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে এবং দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।