শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান: মোহতাসীম হাদী রাফী (জন্ম.১৯৯৯) একজন তরুণ প্রকৌশলী, লেখক ও গবেষক। প্রকৌশল বিষয়ে তার গবেষণামূলক লেখা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
![]() |
মোহতাসিম হাদী রাফীর ‘মাটিতে ফুটে আছে ক্লাস্টার ফুল‘ যেন উদ্দাম তারুণ্যের জয়গান |
তিনি বিখ্যাত আমেরিকান ফ্যান্টাসি লেখক জিম বুচারের জনপ্রিয় দ্য ড্রেসডেন ফাইলস-এর বেশ কয়েকটি উপন্যাসসহ হরর কিং হিসেবে খ্যাত স্টিফেন কিং-এর নভেলা ‘দ্য মিস্ট‘ অনুবাদ করেছেন। তার প্রকাশিত অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে ‘ডেথ নোট’ (নিসিও ইয়াসিনের অ্যানাদার নোট : দ্য লস এঞ্জেলস বিবি মার্ডার কেসেস), জিম বুচারের দ্য ড্রেসডন ফাইলস ডেথ মাস্কস ড্রেসডেন (সালমান সাদের সঙ্গে যৌথভাবে), ড্রেসডেন ফাইলস গ্রেভ পেরিল, স্টিফেন কিং-এর ‘দ্য মিস্ট’ , দ্য ড্রেসডন ফাইলস :ফুলমুন (তানজীম রহমানের সঙ্গে যৌথভাবে) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
আলেচ্য গ্রন্থ ‘মাটিতে ফুটে আছে ক্লাস্টার ফুল’(২০২২) তার প্রথম মৌলিক উপন্যাস। তার এই উপন্যাসের নামের মধ্যেই একটি মৌলিকত্ব লক্ষ্য করা যায়। এই উপন্যাসে ছোট বড় সাতটি অধ্যায়কে পৃথক পৃথক নাম দিয়ে একটি সুতোয় গেঁথেছেন তিনি। গ্রন্থভুক্ত সাতটি অধ্যায়ের নাম হচ্ছে কালনিদ্রা, চরিত্রাবির্ভাব, অধিবিদ্যা, নতুন কবিতা, যে জলে আগুন জ্বলে, আসছে ফাগ্লুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো ও অবসান।
আরও পড়ুন:
এই উপন্যাসের বক্তব্য, স্থান, কাল প্রভৃতি সত্য হলেও চরিত্রগুলো কাল্পনিক। গ্রন্থভুক্ত প্রতিটি অধ্যায়ের আলাদা আলাদা প্রেক্ষাপট ও দর্শন রয়েছে। লেখক প্রত্যেক অধ্যায়ের ঘটনাকে পাঠকের নিকট আকর্ষণীয় ও জীবন্ত করে তুলে ধরেছেন।
এ প্রসঙ্গে গ্রন্থভুক্ত ‘যে জ্লে আগুন জ্বলে’ অধ্যায় থেকে কয়েকটি লাইন তুলে ধরা যাক :
“স্কুলের ওই বাচ্চাগুলোর দাবি ছিল একটা নিরাপদ সড়ক। খুব সাধারণ একটা দাবি। … এই বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে দেখিয়ে দিলো কীভাবে একটা দেশের সড়ক ব্যবস্থা খুব সহজে নিয়মতান্ত্রিক করে ফেলা যায়। পথচারীদের ট্রাফিক নিয়ম মানানো, রাস্তা পরিষ্কার এমনকি সংস্কারের কাজ করেছে ওরা। বাংলাদেশের রাস্তায় প্রথমবারের মতো ইমাজেন্সি লেন করে দেখালো ওরা।”
[উদ্ধৃতি : ‘মাটিতে ফুটে আছে ক্লাস্টার ফুল’, (যে জলে আগুন জ্বলে), পৃ. ৯২-৯৩]
উপর্যুক্ত লাইনটুকুতে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিশুকিশোর, তরুণ ছাত্র সমাজ ইতিবাচক ভূমিকাকে জীবন্ত করে তুলেছেন লেখক। মোহতাসিম হাদী রাফী তার এই উপন্যাসের প্রতিটি অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে তরুণ সমাজের নিরিখে স্বদেশের পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরেছেন। এতে ওঠে এসেছে স্বদেশের নানা ঘটনায় তরুণদের ভূমিকা।
মোট কথা, এই উপন্যাসে নানা চরিত্রের নেপথ্যে তরুণদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। সমকালীন নানা ঘটনা-সংকটে তরুণরা নির্মাণের শক্তি এই উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র হয়ে ওঠেছে। এ উপন্যাসের নানা চরিত্রে তরুণদের কথা বার বার সহায়ক শক্তি হিসেবে উচ্চারিত হয়েছে। নানা সংকটে-ঘটনায় তরুণরা বৃত্ত ভেঙ্গেছে এবং নির্মাণ করেছে আলাদা শক্তি ও স্থান। এ উপন্যাসে তরুণদের গল্প, জীবনবোধ প্রভৃতি বর্ণনার পাশাপাশি দেশকাল সমাজের নানা বাস্তব ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা আছে। লেখক, গবেষক মোহতাসিম হাদী রাফী তার এই মৌলিক উপন্যাসটির জন্য দীর্ঘদিন আলোচিত হবেন। আমরা মনে করি ‘মাটিতে ফুটে আছে ক্লাস্টার ফুল’ পাঠক সমাজে আদৃত ও গ্রহণীয় হবে অনেক দিন। লেখক এ ধরণের উপন্যাস আরও লিখবেন। তার প্রতি আমাদের উষ্ণ ভালোবাসা রইল।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।