কাজিপুরে চরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে কারণে এসএসসির ফল বিপর্যয়

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সদ্যঘোষিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে হতাশ কাজিপুরের চরাঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগী মানুষ।

কাজিপুরে চরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে কারণে এসএসসির ফল বিপর্যয়


বিগত দশ বছর চরের দশটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফলাফল অভিভাবকদের মনে আশার সঞ্চার করলেও  এবারে তারা হতাশ।  সদ্যঘোষিত ফলাফলে কোন কোন বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থীর অর্ধেকও কৃতকার্য হতে পারেনি। আর জিপিএ ৫  পাওয়ার হার গতবারের চেয়ে নি¤œমুখী। 

 চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে হাটুরে, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবার মুখে মুখে এবারের এই ফল বিপর্যয়ের আলোচনা চলছে। 


আরও পড়ুন:


 বিপর্যয়ের কারণ খঁজুতে গিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতিকে কাঠগড়ায় দাড় করাচ্ছেন অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগী মানুষজন।  


আওয়ামী লীগ সরকারের  বিগত দশ বছরে এইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীগণ পরীক্ষার হলে পেতো  অসৎ উপায় অবলম্বনের সুযোগ। 


বিশেষ করে গত তিন চার বছরে এই পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ পর্যায়ে যায় যে তা দূর থেকে সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরের পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের আসল কারণ। 


তারা জানিয়েছেন পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীরা কৌশলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো। এছাড়া, নৈব্যক্তিক প্রশ্নের সমাধান  বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের নিকটে চলে আসতো। অনেকের ফোনে চলে আসতো উত্তরপত্র। এছাড়া কোন বাছ বিচার  ছাড়াই ব্যবহারিক পরীক্ষার পুরো নম্বরই শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে। চরাঞ্চল হওয়ায় প্রশাসনের নজরদারি তেমনভাবে ছিলো না ওইসব কেন্দ্রে। কিন্তু গতবছর মনসুর আলী জাতীয় উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা সাংবাদিকগণ ফাঁস করে দিলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। 

তারই ফলশ্রুতিতে এবার কাজিপুর উপজেলা প্রশাসন চরের কেন্দ্রগুলোতে কেন্দ্রসচিব থেকে শুরু করে পুরো পরীক্ষা সিস্টেমকে এপার থেকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিগত দিনে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলা থেকে ম্যাজিস্ট্রেট ও কক্ষ পরিদর্শক এসে চরের অনেক কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছেন।  তাদের  ছিলোনা কোন দায়বদ্ধতা। 

এই সুযোগে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু পট পরিবর্তনের ফলে উপজেলা প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং এর কারণে সেই বিশেষ সুবিধা শিক্ষার্থীরা এবার পায়নি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সেলফোনে আসক্তিকেও অনেক অভিভাবক ফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 

 তবে এতোকিছুর মধ্যেও চরের বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবার অনেক ভালো ফলাফল করেছে। এবারে চরাঞ্চলের ঘোড়াগাছা উচ্চ বিদ্যালয় তুলনামুলকভাবে ভালো  রেজাল্ট করেছে। 

এই প্রতিষ্ঠান থেকে এবারে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৫৭ জন। 

এরমধ্যে পাস করেছে ২২৬ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২১জন। এই ফলাফল চরের বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সেরা। 

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খাষশুড়িবেড় উচ্চ বিদ্যালয় । এই প্রতিষ্ঠান থেকে এবারে এসএসসিতে অংশ নিয়েছিলো ১৮৩ জন। পাস করেছে ১৪২জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫ জন। 

এছাড়া নাটুয়ারপাড়া কেবি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৭৫ জন,  জিপিএ ৫ পায়নি কেউই। খাসরাজবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৪২ জন । জিপিএ ৫ নেই। 


সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে মনসুর নগর জাতীয় উচ্চ বিদ্যালয় ও মাজনাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়। মনসুরনগর জাতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের  ১৯৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে মাত্র ৮২ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ৪ জন। অথচ গতবার ফলাফলে এই বিদ্যালয় উপজেলার মধ্যে শীর্ষস্থানে ছিলো। 


এছাড়া মাজনাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০৩ জনের মধ্যে পাস করেছে মাত্র ২৬ জন. জিপিএ ৫ নেই। শালগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯৮ জনের মধ্যে পাস করেছে মাত্র ৪১ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ জন। 

রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৩৭ জন। জিপিএ ৫ পায়নি কেউই। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গতবার বোর্ডের পাসের হারে চেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করেছিলো। 

 ঘোড়াগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অনেকটা জোর করে ক্লাসমুখী করেছি। 


নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ, বিদ্যালয়ের ফলাফল অভিভাবকদের জানিয়ে দেয়া, কোন শিক্ষার্থী পরপর কয়েকদিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে তার খোঁজ নেয়ার মতো দায়িত্বগুলো আমার শিক্ষকগণ নিয়মিত পালন করেছেন। যার ফলে সামগ্রিকভাবে আমাদের বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো হয়েছে।




সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top