পিনাকী ভট্টাচার্য কি আওয়ামী লীগের রাজনীতি শক্তিশালী করছেন?

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের উপর চলা গণহত্যা, যা হলোকাস্ট (Holocaust) নামে পরিচিত, তা নিয়ে পশ্চিমে বেশ ইন্টারেস্টিং কিছু আলাপ আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে প্রচারিত একটা বিষয় হলো, আসলে বলা হয় তত ইহুদি মারা যায়নি। ইহুদিরা সিম্প্যাথি (Sympathy) পেতে বাড়িয়ে বলেছে। এবং এদের একটা এক্সট্রিম অংশ দাবি করে এমন কিছু আসলে হয়নি। এটাকে বলা হয় হলোকাস্ট ডিনায়াল (Holocaust denial)। 

পিনাকী ভট্টাচার্য কি আওয়ামী লীগের রাজনীতি শক্তিশালী করছেন


হলোকাস্ট ডিনায়ালকারীরা সবচেয়ে সহজ এবং সরাসরি কৌশল হিসেবে সংখ্যাগত সংশোধন ব্যবহার করে। তারা বিভিন্ন ডকুমেন্ট বা রিপোর্টের আংশিক তথ্য নিয়ে দাবি করে যে, নিহতের সংখ্যা মাত্র কয়েক হাজার বা কয়েক লাখ। 


উদাহরণস্বরূপ, হলোকাস্ট ডিনায়ালকারীদের মধ্যে অন্যতম ডেভিড আয়ারস (David Ayers) ১৯৭০-এর দশকে বলেছিলেন, “হলোকাস্টে মাত্র ৩০০,০০০ মানুষ মারা গেছে,” যা প্রকৃত সংখ্যার তুলনায় অনেক কম। এটার একটা কৌশল হলো নাৎসিদের বিভিন্ন ডকুমেন্ট হাজির করা যেখানে মৃতের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কম দেখানো হয়েছে।


আবার একই কায়দায় জাপানিরা চীনের নানকিং (Nanking) শহরে চালানো গণহত্যা অস্বীকার করে। নানকিং গণহত্যায় অন্তত ৪০,০০০-২,০০,০০০ মানুষকে হত্যা করে জাপানিরা। 

কিন্তু জাপানি বেশ কয়েকজন ইতিহাসবিদ দাবি করেন, নানকিং (Nanking) এর মত ছোট এলাকায় ২,০০,০০০ মানুষের থাকা এক প্রকার অসম্ভব। তাই এমন কিছু আসলে হয়নি বা মৃতের সংখ্যা হবে ৮-১০ হাজার। 

কিন্তু তারা যেটা উল্লেখ করে না, সেসময় যুদ্ধের কারণে ৫-৬ লাখ মানুষ নানকিং এ আশ্রয় নিয়েছিল। আসলে পৃথিবীতে যত গণহত্যা হয়েছে প্রায় সবগুলোর ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে। 

সাধারণত গণহত্যায় জড়িত পক্ষের লোকেরাই এসব প্রচারণায় জড়িত থাকে। যেমন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জামাতের অ্যাকটিভিস্টদের মধ্যে এমন টেন্ডেন্সি দেখা যায়।


১৯৭১ বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কারণ এটা না হলে বাংলাদেশ হত না। এই জনপদের সুদীর্ঘ ইতিহাসে এত বড় স্কেলে যুদ্ধ খুব কমেই হয়েছে। 

তাই আওয়ামী লীগ দ্বারা গত ১৫ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের অপব্যবহার সত্বেও এটা এখনও বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক দর্শনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। 

এই কারণেই ’২৪ এ শেখ হাসিনারা রাজাকার ট্যাগিং তার পতনে প্রভাবকের কাজ করে। 

এমনকি এই কারণেই মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে আলোচনা হয়। 


এখন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত শহীদের সংখ্যা নিয়ে আমরা আলাপে যাব না। কারণ, আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় যখন পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র জনতার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। 

এই যুদ্ধের নৈতিক দায় তাদের। রাজাকাররা তখন পাক বাহিনীর এসব কাজে সাহায্য করেছে। তাই তারাও অপরাধী। মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ, ৩০ লাখ না ৩ কোটি! এটা তাদের অপরাধ হালকা করে দেয় না।


তবে আজকের দিনে এসে হুট করে মুক্তিযুদ্ধের সংখ্যা নিয়ে অহেতুক বির্তক করার পেছনে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা আছে। 

রাজনীতি ব্যালেন্স অব পাওয়ার মেনে চলে। যারা ৭১ দেখেছে এবং যারা ৭১ এর ন্যারেটিভে বড় হয়েছে তাদের কাছে আওয়ামীলীগের রাজনীতির একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। 

বাংলাদেশে ২০০৯ থেকে আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভ দিয়ে তার ক্ষমতা দখলের গ্রাউন্ড সৃষ্টি করেছে, তাতে এই মানুষগুলোর এপ্রুভাল ছিল। এদের অনেকেই ২০২৪ এ আন্দোলনে গিয়েছে। 

আবার এদের বড় একটা অংশ এখনও আওয়ামী লীগের সমর্থক। এই বিরাট অংশ বর্তমানে রাজনৈতিক রিপ্রেজেন্টেশন (Political representation) এর অভাবে ভুগছে। এনসিপি-এর কাছে সবার আশা ছিল এটা এই চাহিদা পূরণ করবে। 

কিন্তু তারা এখানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আওয়ামীলীগের সমর্থক গোষ্ঠী এখন অস্তিত্বের সংকটে আছে। ঠিক এই সময় পিনাকি ভট্টাচার্য (Pinaki Bhattacharya) নতুন করে এই বিতর্ক উসকে দিলেন কেন?


এর কারণ বুঝতে হলে আমাদের বুঝতে হবে পিনাকীর রাজনৈতিক দর্শনকে। তিনি একজন লেনিনিস্ট কমিউনিস্ট (Leninist Communist) হিসেবে রাজনীতির পাঠ নিয়েছিলেন। 

লেনিনিস্ট রাজনীতির দর্শন হলো ক্ষমতা দখলের আগ পর্যন্ত অস্থিরতা সৃষ্টি করা। যাতে বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। তিনি দেশে ক্ষমতা দখলের জন্য, বিপ্লবের গ্রাউন্ড সৃষ্টি করার জন্য এমন করছেন। অথবা….?


অথবা এটা এভাবেও দেখা যেতে পারে, আওয়ামীলীগের সময় ইসলামী রাজনীতির উপর দমন পীড়ন চালানোয় কারণে যেভাবে জামায়াত ৭১ এ বিতর্কিত ভূমিকা সত্বেও রাজনীতিতে গ্রাউন্ড ফিরে পেয়েছে তেমনি ৭১’কে আক্রমণ করলে 

বাংলাদেশের জনগণের মনে ৭১ কেন্দ্রিক সেন্টিমেন্ট পুনঃজাগরিত (71-centric sentiment revived) হবে। এতে আওয়ামীলীগ আবার কথা বলার রিলেভেন্সি পাবে। 


পিনাকি কি এমন কিছু, আওয়ামী লীগকে গ্রাউন্ড দিতে করেছেন? আওয়ামী লীগের সমর্থক রিপ্রেজেন্টেশন এর অভাবে ভুগছে, এ ধরনের কাজ তাদেরও উগ্রপন্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে, যেমনটি হয়েছিল ২০১৩-১৪ সালে জামাতকে দমন-পীড়ন করার পরে। 

বাংলাদেশে যদি স্থিতিশীল রাজনীতি আর সরকার না থাকে আর একই সাথে উগ্রপন্থার উত্থান ঘটে তবে এটা কি ভারতের হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশে উগ্রপন্থার উত্থান ঘটবে এমন ন্যারেটিভকে শক্তিশালী করবে কি না? 

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে গেলে ভাবনা এসে যায় অতি বিপ্লবী পিনাকী কি তবে ভারতের ডবল এজেন্ট (Indian double agent)? গুপ্তচর বৃত্তিতে এ ধরনের এজেন্টদের বলে Agent Provocateur যারা মিত্র সেজে টার্গেটের দলে ভিড়ে তাদের ভুল পথে নিয়ে যায়। পিনাকীর অব্যাহত উসকানি কিন্তু এমন কিছুরই ইংগিত দেয়।


লেখক:

জাহিদ হাসান জুয়েল
রাজনৈতিক বিশ্লেষক




সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top