পবিত্র
রমজানে দু’টি শব্দের
সঙ্গে আমরা
বিশেষভাবে পরিচিত। যার একটি হচ্ছে
সেহরি; অপরটি
ইফতার। ইফতার
সম্পর্কে ইতিপূর্বে
কিছু আলোচনা
পাঠকের জন্য
তুলে ধরা
হয়েছে। আজ
সেহরি বিষয়ে
কিছু কথা
জাগো নিউজের
পাঠকদের উদ্দেশে
তুলে ধরা
হলো।
সাধারণত আমরা ভোর রাত্রে ঘুম থেকে উঠতে অলসতা করি। এ অলসতা ত্যাগ করতে না পারায় রাতে শোয়ার সময়ই অনেকে সেহরি খেয়ে ফেলেন। এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন।
সেহরির গুরুত্ব বর্ণনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষ্য
হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আসসুহুরু আক্লুহু বারাকাতুন ফালা তাদাউহু ওয়া লাও আইইযরাউ আহাদুকুম যুরআ’তাম মিন মাইন ফা ইন্নাল্লাহু আয্যা ওয়া ঝাল্লা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসাল্লুনা আলাল মুতাসাহহিরিনা। (মুসনাদে আহমদ)
অর্থ : সেহরি বরকতময় খানা, তোমরা তা ত্যাগ করো না, যদি তোমাদের কেউ একঢোক পানিও গলাধঃকরণ করে, কারণ আল্লাহ তাআলা সেহরি ভক্ষণকারীদের উপর রহমত প্রেরণ করেন ও ফেরেশতাগণ তাদের ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করেন। (মুসনাদে আহমদ, জামে সগির)
অপর বর্ণনায় এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আগমন করেন, তখন তিনি সেহরি খাচ্ছিলেন, তিনি বললেন, ইন্নাস সাহুরা বারাকাতুন আ’ত্বা কুমুহাল্লাহু আয্যা ও ঝাল্লা ফা লা তাদাউহা। (মুসনাদে আহমাদ, আলবানি সহিহুল জামে)
অর্থ : নিশ্চয় সেহরি বরকতময়, আল্লাহ তোমাদেরকে তা দান করেছেন, অতএব তোমরা তা ত্যাগ করো না।
কিছু বিষয় লক্ষণীয়, একজন রোজাদার সারাদিন রোজা রেখে যাবতীয় কাজকর্ম করে থাকে, খাবার, পানি পানসহ যাবতীয় পানাহার থেকে বিরত থাকার পরও যেখানে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা; সেখানে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে ওই মানুষটি সারা দিনের কর্মব্যস্ত সময়ে অসুস্থ না হয়ে আল্লাহর রহমতে দিব্যি কাজ-কর্ম করে চলেছেন সাবলীলভাবে। অতএব বুঝতে হবে, রমজানের রোজার সেহরির মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অনেক কল্যাণ রেখেছেন। যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনা থেকে আমরা পেয়েছি।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ সেহরি ভক্ষণকারীদের উপর রহমত প্রেরণ করেন ও তার ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ইসতেগফার করেন। (ইবনে হিব্বান)
যেখানে আল্লাহর তার বান্দার জন্য কল্যাণ প্রেরণ করেন; পাশাপাশি ফেরশতাকুল সমসত বনি আদমের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করেন।
অপর বর্ণনায় হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, খেজুর মুমিনের উত্তম সেহরি। সুতরাং খেজুরের মধ্যে মানুষের দেহের ২০টিরও বেশি উপকারী উপাদান রয়েছে। যাতে আল্লাহ বান্দার দুর্বলতায় শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে দেন।
সুতরাং বোঝা গেল;
ক. সেহরি ফজিলতপূর্ণ, সেহরি আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত, এ জন্য আল্লাহর শোকর আদায় করতে হবে।
খ. সেহরির বরকত যেমন আল্লাহ সেহরি ভক্ষণকারীদের উপর রহমত বর্ষণ তথা কল্যাণ দান করেন ও তার ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ইস্তেগফার করেন।
গ. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেহরি ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন; যা সেহরির গুরুত্ব প্রমাণ করে।
ঘ. সামান্য বস্তু দ্বারা সেহরি হয়, যদিও তা একঢোক পানি, যা হাদিসে সুস্পষ্ট।
ঙ. খেজুর সর্বোত্তম সেহরি, পারলে আমরা সেহরির সময় সামান্য পরিমাণ খেজুর খেতে পারি; যার প্রশংসা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন।
চ. সেহরি ভক্ষণ করলে রোজা ও ইবাদতের শক্তি অর্জিত হয়, ক্ষুদা ও পিপাসা থেকে সৃষ্ট খারাপ অভ্যাস দূর হয়।
ছ. সেহরি খাওয়া শরিয়তের নির্দেশ বাস্তবায়ন করা। কারণ এতে ইহকাল ও পরকালের সফলতা রয়েছে।
জ. সেহরি ভক্ষণকারী যথা সময়ে ফজর নামাজে হাজির হয়, অনেক সময় মসজিদে আগে এসে প্রথম কাতারে ও ইমামের নিকটবর্তী দাঁড়ানোর সাওয়াব লাভ করা যায়, আজানের জওয়াব ও ফজরের সুন্নাত আদায়ে সক্ষম হয়। হাদিসে এসেছে- দুনিয়া ও তার মধ্যে বিদ্যমান সবকিছু থেকে ফজরের দুই রাকাআত সুন্নত উত্তম।
ঝ. সেহরিতে রয়েছে আল্লাহর নিয়ামতের শোকর ও তার রুখসতের প্রতি সমর্থন, কারণ আল্লাহ আমাদের জন্য সূর্যাস্ত থেকে ফজর পর্যন্ত পানাহার বৈধ করেছেন, যা পূর্বে হারাম ছিল।
ঞ. মুসলমানের সেহরি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা; বিশেষভাবে যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা তা ত্যাগ করো না; নেক নিয়তে সাওয়াব ও কল্যাণের আশায় সেহরি খাও; শুধু অভ্যাসে পরিণত করা নয়।
সুতরাং সকল মুসলিম উম্মাহর উচিত আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই সুন্নত পালন করা এবং রমজানের রহমত ও বরকত লাভের মাধ্যমে জান্নাতে তার একান্ত ঠিকানা তৈরি করে নেয়া।
আল্লাহ আমাদের সেহরির মাধ্যমে রোজা পালনের এবং বরকত গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
তথ্যসূত্র : সহিহ বুখারি, মুসলিম, ইবনু হিব্বান, মুসনাদে আহমদ।
জাগো নিউজের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি-জিন্দেগি যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন -
সাধারণত আমরা ভোর রাত্রে ঘুম থেকে উঠতে অলসতা করি। এ অলসতা ত্যাগ করতে না পারায় রাতে শোয়ার সময়ই অনেকে সেহরি খেয়ে ফেলেন। এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন।
সেহরির গুরুত্ব বর্ণনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষ্য
হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আসসুহুরু আক্লুহু বারাকাতুন ফালা তাদাউহু ওয়া লাও আইইযরাউ আহাদুকুম যুরআ’তাম মিন মাইন ফা ইন্নাল্লাহু আয্যা ওয়া ঝাল্লা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসাল্লুনা আলাল মুতাসাহহিরিনা। (মুসনাদে আহমদ)
অর্থ : সেহরি বরকতময় খানা, তোমরা তা ত্যাগ করো না, যদি তোমাদের কেউ একঢোক পানিও গলাধঃকরণ করে, কারণ আল্লাহ তাআলা সেহরি ভক্ষণকারীদের উপর রহমত প্রেরণ করেন ও ফেরেশতাগণ তাদের ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করেন। (মুসনাদে আহমদ, জামে সগির)
অপর বর্ণনায় এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আগমন করেন, তখন তিনি সেহরি খাচ্ছিলেন, তিনি বললেন, ইন্নাস সাহুরা বারাকাতুন আ’ত্বা কুমুহাল্লাহু আয্যা ও ঝাল্লা ফা লা তাদাউহা। (মুসনাদে আহমাদ, আলবানি সহিহুল জামে)
অর্থ : নিশ্চয় সেহরি বরকতময়, আল্লাহ তোমাদেরকে তা দান করেছেন, অতএব তোমরা তা ত্যাগ করো না।
কিছু বিষয় লক্ষণীয়, একজন রোজাদার সারাদিন রোজা রেখে যাবতীয় কাজকর্ম করে থাকে, খাবার, পানি পানসহ যাবতীয় পানাহার থেকে বিরত থাকার পরও যেখানে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা; সেখানে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে ওই মানুষটি সারা দিনের কর্মব্যস্ত সময়ে অসুস্থ না হয়ে আল্লাহর রহমতে দিব্যি কাজ-কর্ম করে চলেছেন সাবলীলভাবে। অতএব বুঝতে হবে, রমজানের রোজার সেহরির মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অনেক কল্যাণ রেখেছেন। যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনা থেকে আমরা পেয়েছি।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ সেহরি ভক্ষণকারীদের উপর রহমত প্রেরণ করেন ও তার ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ইসতেগফার করেন। (ইবনে হিব্বান)
যেখানে আল্লাহর তার বান্দার জন্য কল্যাণ প্রেরণ করেন; পাশাপাশি ফেরশতাকুল সমসত বনি আদমের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করেন।
অপর বর্ণনায় হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, খেজুর মুমিনের উত্তম সেহরি। সুতরাং খেজুরের মধ্যে মানুষের দেহের ২০টিরও বেশি উপকারী উপাদান রয়েছে। যাতে আল্লাহ বান্দার দুর্বলতায় শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে দেন।
সুতরাং বোঝা গেল;
ক. সেহরি ফজিলতপূর্ণ, সেহরি আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত, এ জন্য আল্লাহর শোকর আদায় করতে হবে।
খ. সেহরির বরকত যেমন আল্লাহ সেহরি ভক্ষণকারীদের উপর রহমত বর্ষণ তথা কল্যাণ দান করেন ও তার ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ইস্তেগফার করেন।
গ. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেহরি ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন; যা সেহরির গুরুত্ব প্রমাণ করে।
ঘ. সামান্য বস্তু দ্বারা সেহরি হয়, যদিও তা একঢোক পানি, যা হাদিসে সুস্পষ্ট।
ঙ. খেজুর সর্বোত্তম সেহরি, পারলে আমরা সেহরির সময় সামান্য পরিমাণ খেজুর খেতে পারি; যার প্রশংসা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন।
চ. সেহরি ভক্ষণ করলে রোজা ও ইবাদতের শক্তি অর্জিত হয়, ক্ষুদা ও পিপাসা থেকে সৃষ্ট খারাপ অভ্যাস দূর হয়।
ছ. সেহরি খাওয়া শরিয়তের নির্দেশ বাস্তবায়ন করা। কারণ এতে ইহকাল ও পরকালের সফলতা রয়েছে।
জ. সেহরি ভক্ষণকারী যথা সময়ে ফজর নামাজে হাজির হয়, অনেক সময় মসজিদে আগে এসে প্রথম কাতারে ও ইমামের নিকটবর্তী দাঁড়ানোর সাওয়াব লাভ করা যায়, আজানের জওয়াব ও ফজরের সুন্নাত আদায়ে সক্ষম হয়। হাদিসে এসেছে- দুনিয়া ও তার মধ্যে বিদ্যমান সবকিছু থেকে ফজরের দুই রাকাআত সুন্নত উত্তম।
ঝ. সেহরিতে রয়েছে আল্লাহর নিয়ামতের শোকর ও তার রুখসতের প্রতি সমর্থন, কারণ আল্লাহ আমাদের জন্য সূর্যাস্ত থেকে ফজর পর্যন্ত পানাহার বৈধ করেছেন, যা পূর্বে হারাম ছিল।
ঞ. মুসলমানের সেহরি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা; বিশেষভাবে যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা তা ত্যাগ করো না; নেক নিয়তে সাওয়াব ও কল্যাণের আশায় সেহরি খাও; শুধু অভ্যাসে পরিণত করা নয়।
সুতরাং সকল মুসলিম উম্মাহর উচিত আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই সুন্নত পালন করা এবং রমজানের রহমত ও বরকত লাভের মাধ্যমে জান্নাতে তার একান্ত ঠিকানা তৈরি করে নেয়া।
আল্লাহ আমাদের সেহরির মাধ্যমে রোজা পালনের এবং বরকত গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
তথ্যসূত্র : সহিহ বুখারি, মুসলিম, ইবনু হিব্বান, মুসনাদে আহমদ।
জাগো নিউজের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি-জিন্দেগি যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন -