গতকাল শেষ হলো
গেমিং দুনিয়ার সবচেয়ে বৃহত্ আয়োজন ইলেক্ট্রনিক এন্টারটেইনমেন্ট এক্সপো,
সংক্ষেপে যা ইথ্রি নামেই বেশি পরিচিত। নতুন নতুন সব গেম আর জনপ্রিয় সব
গেমের সিক্যুয়েলের খবর মূলত গেম নির্মাতারা এই প্রদর্শনীতেই জানিয়ে থাকেন।
গেমিং বিশ্বের পূর্ণ মনোযোগটা তাই ইথ্রি চলাকালীন নিবদ্ধ থাকে এই
প্রদর্শনীর দিকেই। অন্যান্যবারের মতো এই বছরের ইথ্রিতেও ঘোষণা এসেছে এমন সব
গেমের, যেগুলো আগামী বছরখানেক সময় মাতিয়ে রাখবে বিশ্বব্যাপী গেমারদের।
এমনই কিছু অনাগত গেমের কথা জানাচ্ছেন তরিকুর রহমান সজীব
ব্রেভহার্ট,
লর্ড অব দ্য রিংস বা গেম অব থ্রোনসের মতো জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্র বা
সিরিয়ালের মূলেই রয়েছে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ধুন্ধুমার লড়াই। কিন্তু দর্শক
হিসেবে এইসব লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগই নেই। গেমারদের এমন সব কাহিনীর
গেমে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতেই ইউবিসফট তৈরি করেছে ফর অনার গেমটি। হ্যাক
অ্যান্ড স্ল্যাশ ধরনের এই গেমটি তৈরি করা হয়েছে মধ্যযুগীয় সময়ের পটভূমিতে।
নন-ফ্যান্টাসি অ্যাকশন রোল-প্লেয়িং এই গেমে গেমার চরিত্র হিসেবে বেছে নিতে
পারবেন ভাইকিং, সামুরাই কিংবা নাইট। আর্ট অব ব্যাটল নামের ভিন্ন ধরনের
কমব্যাট সিস্টেম এতে চালু করা হয়েছে। মাল্টিপ্লেয়ার মোডেও খেলা যাবে গেমটি।
ইউবিসফট মন্ট্রিল গেমটি তৈরি করেছে পিসি, এক্সবক্স ওয়ান এবং প্লেস্টেশন
৪-এর জন্য।
ফলআউট ৪
আকাশচুম্বী
প্রত্যাশা নিয়ে ফলআউট সিরিজের নতুন গেম নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে বেথেসদা
সফটওয়ার্ক। গেমটি তৈরি করেছে বেথেসদা গেম স্টুডিও। ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু
হয় ফলআউট সিরিজের। এর পরের বছরই ফলআউট ২ বাজারে আনলেও তার দশ বছর পর মুক্তি
দেওয়া হয় এই সিরিজের তৃতীয় গেম ফলআউট ৩। পরে ২০১০ সালে ফলআউট :নিউ ভেগাস
মুক্তি দিলেও সিরিজের পঞ্চম গেমটি নিয়ে আসার জন্য আরও পাঁচ বছর সময় নেওয়া
হলো। পিসি ছাড়াও এক্সবক্স ওয়ান এবং প্লেস্টেশন ৪-এর জন্যও তৈরি করা হবে
ফলআউট ৪। এই গেমের সময়টা ২০৭৭ সাল, যা অনেকটাই ফলআউট ৩-এর সমসাময়িক। গেমের
কাহিনীও আবর্তিত হয়েছে এই সিরিজের আগের গেমগুলোর মতোই বোস্টনে।
ডুম
১৯৯৩
সালে আইডি সফটওয়্যার তৈরি করেছিল ডুম নামের ফার্স্ট-পারসন শুটার ভিডিও
গেম। অনেকটাই সারভাইভ্যাল হরর ঘরানার এই গেমটি তখন ব্যাপক সাড়া ফেলে। পরের
বছরই ডুম ২ :হেল অন দ্য আর্থ নামে এই সিরিজের দ্বিতীয় গেম বাজারে আসে। এরপর
১০ বছরের বিরতি দিয়ে ডুম ৩ আসে। আবারও এক যুগের বিরতি দিয়ে ডুম সিরিজের
চতুর্থ গেমটি বাজারে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে এর প্রকাশক বেথেসদা। নতুন
গেমটির নাম রাখা হয়েছে সিরিজের প্রথম গেমটির মতোই ‘ডুম’। আর এটি তৈরিও
করেছে প্রথম গেমটির মতো আইডি সফটওয়্যার। মঙ্গল গ্রহের ভৌতিক আবহে তৈরি করা
হয়েছে গেমটি। আগের মতোই সিঙ্গেল-প্লেয়ার মোডের পাশাপাশি এই গেমে থাকছে
মাল্টি-প্লেয়ার মোডে খেলার সুযোগ। সেইসাথে চার জনে মিলে ডেথম্যাচ,
ডোমিনেশন, ফ্রিজ ট্যাগ এবং ক্লিন অ্যারেনার মতো বিশেষ মোডেও খেলা যাবে
গেমটি। আসছে বছরে গেমটি বাজারে নিয়ে আসার ঘোষণা রয়েছে।
স্টার ওয়ারস ব্যাটলফ্রন্ট
বিশ্বখ্যাত
সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র স্টার ওয়ারসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা স্টার
ওয়ারস :ব্যাটলফ্রন্ট শিরোনামের গেম দিয়ে ২০০৪ সালে গেমিং জগতে প্রবেশ করে
স্টার ওয়ারস। ফার্স্ট এবং থার্ড-পারসন শুটার গেম হিসেবে এর তুমুল
জনপ্রিয়তার কারণে পরের বছরই স্টার ওয়ারস :ব্যাটলফ্রন্ট ২ বাজারে নিয়ে আসা
হয়। শুরুর দিকে লুকাস আর্টের ব্যানারে এই গেমগুলো তৈরি করে প্যানডেমিক
স্টুডিওজ। এর পর পিসি গেম হিসেবে দীর্ঘ বিরতি দিলেও মাঝখানে গেম কনসোল এবং
মোবাইল ডিভাইসের জন্য এর বেশ কয়েকটি গেম তৈরি করা হয়। ২০১৩ সাল থেকে গেমটির
তত্ত্বাবধান করছে ডিজনি ইন্টার্যাকটিভ স্টুডিওজ; আর তাদের হয়ে গেম তৈরি
করছে ডিজিটাল ইলাস্ট্রেশন সিই। সেই হিসেবে ডিজনি এই প্রথমবারের মতো আনতে
যাচ্ছে স্টার ওয়ারস সিরিজের কোনো গেম। এবারে এর নাম রাখা হয়েছে স্টার ওয়ারস
ব্যাটলফ্রন্ট। চলতি বছরের নভেম্বরে একে বাজারে আনার কথা জানিয়েছে ডিজনি।
দ্য লাস্ট গার্ডিয়ান
২০০৫
সালে শ্যাডো অব দ্য কলোসাস গেম তৈরি করে গেমিংবিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলে
জাপানের টিম ইকো। সনি এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে ভিন্ন ধরনের গেম হিসেবে
গেমারদের কাছে সমাদৃত হয় শ্যাডো অব দ্য কলোসাস। টিম ইকো আর সনি
এন্টারটেইনমেন্টের যুগলবন্দীতে এবারে তৈরি হয়েছে দ্য লাস্ট গার্ডিয়ান নামের
গেম। এই গেমটিও ডিজাইন করা হয়েছে থিম-নির্ভর গেম হিসেবে। অনেকে অবশ্য একে
শ্যাডো অব দ্য কলোসাসের সিক্যুয়েল গেম হিসেবেও মনে করছেন। দ্য লাস্ট
গার্ডিয়ান গেমের মূল চরিত্রে রয়েছে এক তরুণ যার সঙ্গী হয় কুকুর ও পাখির
সমন্বিত আকারের একটি বিশেষ চরিত্র যার নাম ট্রিকো। এই ট্রিকোকে নিয়েই নানা
ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি ও ধাঁধাঁ সমাধান করে করে এগিয়ে যেতে হবে দ্য
লাস্ট গার্ডিয়ান গেমটিতে। অনেকটা অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার ধরনের এই গেমটি
প্লেস্টেশনের জন্য মুক্তি পাবে আসছে বছরে।
ফাইনাল ফ্যান্টাসি ৭ রিমেক
চলচ্চিত্র
ও গেম—উভয় মিডিয়াতেই জনপ্রিয় একটি নাম ফাইনাল ফ্যান্টাসি। গেম হিসেবে
ফাইনাল ফ্যান্টাসি সিরিজে ১৯৯৭ সালে যুক্ত হয় ফাইনাল ফ্যান্টাসি ৭। তখনও
ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে গেমটি। ১৮ বছর পর এসে রিমেক করা হয়েছে তখনকার
জনপ্রিয় গেমটিকে। অনেকদিন হলো এই রিমেক গেমটিকে নিয়ে আলোচনা চলে আসছে
গেমিংবিশ্বে। তবে ইথ্রিতে এসে সেই আলোচনার অবসান ঘটিয়েছে এর নির্মাতা ও
প্রকাশ স্কয়ার এনিক্স। গেমটি নিয়ে আসার ঘোষণা দিলেও রিমেক হিসেবে আগের
সংস্করণের তুলনায় এতে কী কী সংযোজন-বিয়োজন থাকছে, তার বিস্তারিত জানায়নি
স্কয়ার এনিক্স। মূলত চমক হিসেবেই এই গেমের বিভিন্ন ফিচারকে এখনও
পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশ করছে না তারা। চলতি বছরের শেষের দিকে কিংবা আগামী
বছরের শুরুতেই একে প্লেস্টেশনের জন্য মুক্তি দেওয়া হবে। পরবর্তীকালে অবশ্য
অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের জন্যও একে তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে স্কয়ার
এনিক্স।
হালো ৫ :গার্ডিয়ানস
এই
বছরের সাড়া জাগানো গেম হিসেবে আবির্ভূত হতে যাওয়া গেমগুলোর একটি হালো ৫।
মাইক্রোসফট প্রকাশিত হালো সিরিজের পঞ্চম গেম হিসেবে চলতি বছরের অক্টোবরেই
বাজারে আসবে হালো ৫। ২০০১ সালে হালো :কমব্যাট ইভলভড শিরোনামে প্রথম বাজারে
আসে এই সিরিজের প্রথম গেমটি। পরে ২০০৪ সালে হালো ২, ২০০৭ সালে হালো ৩ এবং
২০১২ সালে হালো ৪ আসে বাজারে। এই সিরিজের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবারে আসতে
যাচ্ছে হালো ৫ :গার্ডিয়ানস। এটিও একটি ফার্স্ট-পারসন শুটিং গেম। মূলত
মাইক্রোসফটের এক্সবক্স ওয়ান গেম কনসোলের জন্য তৈরি করা হবে গেমটি।
ফর অনার