এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আসফাকুস সালেহীন বাংলামেইলকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে তারপরই ১৮টি কলেজকে চিহ্নিত করে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত (বুধবার বিকেল) দুইটি কলেজ নোটিশের জবাব দিয়েছে। বাকিরাও আগামী দু’একদিনের মধ্যে জবাব দেবে বলে আশা করছি। নোটিশের জবাব না দিতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তির প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ঢাকা, যশোর, কুমিল্লা ও বরিশাল বোর্ডের ১১টি কলেজকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা বোর্ডে আরো প্রায় ১৫টি কলেজকে নজরদারিতে রেখেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বোর্ডের কলেজগুলো হলো- রাজধানীর দক্ষিণখানের মোল্লারটেক উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নারায়ণগঞ্জের আমলাপাড়া গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টঙ্গীর সাহাজ উদ্দিন সরকার মডেল হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল ও টঙ্গী কলেজ। আর যশোর বোর্ডের অধীনে কলেজগুলো হলো- যশোরের চৌগাছা ডিগ্রি কলেজ, চৌগাছার এ.বি.সি.ডি কলেজ, চৌগাছার জিসিবি কলেজ, চৌগাছার মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ, খুলনার পাইকগাছার লক্ষীখোলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাগুরার শালিখা’র আড়পাড়া কলেজ, যশোর চৌগাছার আজ-জামতলা কলেজ।
তবে অন্যান্য বোর্ডের কলেজগুলোর নাম এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সূত্রে আরো জানা যায়, কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া কলেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চলতি বছর মাধ্যমিক বা এসএসসি পরীক্ষা যারা উত্তীর্ণ হয়েছে, সেসব শিক্ষার্থীর অনুমতি না নিয়ে তাদের রোল নম্বর সংগ্রহ করে নিজেরাই অনলাইনে ভর্তির আবেদন ফরম পূরণ করেছে তারা। এখন শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে গেলে তাদের আবেদন হয়ে গেছে ফরমে উল্লেখ রয়েছে।
অন্যদিকে, অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদনে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির অভিযোগের স্তূপ জমেছে শিক্ষাবোর্ডগুলোতে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগে হিমশিম খাওয়া বোর্ডগুলো সম্মিলিতভাবে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সময়সীমাও তিনদিন বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২১ জুন পর্যন্ত একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
এ বিষয়ে আসফাকুস সালেহীন বলেন, ‘অনলাইনে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সমস্যার অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। সেসব সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সময়সীমা বৃদ্ধির বিষয়টি আসলে সবার জন্যই করা হয়েছে। অনেকেই নানা সমস্যার কারণে আবেদন করতে পারেননি। সব মিলিয়ে সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
বুধবার বিকেল পর্যন্ত সারা দেশে থেকে প্রায় তিন হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলোতে। তবে এর মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের ভুল বলে জানা গেছে। তবে নানা ধরনের অভিযোগ পড়েছে প্রায় হাজার খানেক। অধিকাংশ অভিযোগই অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছে, তাদের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে। আবেদনে যেসব পছন্দের কলেজের নাম এসেছে তার কোনটিই তাদের পছন্দের নয়। এর বাইরে অনলাইনে আবেদন শেষ করে টেলিটকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধে সমস্যা, টাকা পাঠানো হলেও ফিরতি ম্যাসেজ না পাওয়া ইত্যাদি।
এসব সমস্যা সমাধান করার জন্য গত ৬ জুন থেকে শুরু হওয়া অনলাইনে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়ার সংশোধনও আনা হয়। প্রাথমিকভাবে শুধু শিক্ষাবর্ষ, শিক্ষাবোর্ড ও রোল নাম্বার দিয়ে আবেদন করা যেতো।
পরবর্তী সময়ে রেজিস্ট্রেশন নম্বরও যোগ করা হয়। কিন্তু তারপরও নানাবিধ সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগের বিষয়ে আসফাকুস সালেহীন বলেন, ‘আমাদের কাছে নানা সমস্যার অভিযোগ এসেছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে যেসব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি। গত কয়েকদিনের তুলনায় আজকে (বুধবার) অভিযোগের সংখ্যা অনেক কম। আশা করছি, ২১ জুনের মধ্যে সকল শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে।’
এদিকে, বুধবার পর্যন্ত ৮টি সাধারণ, কারিগরি ও মাদরাসা- এই ১০টি শিক্ষাবোর্ড থেকে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন ১০ লাখ ৭ হাজার ৭৬ জন শিক্ষার্থী। তারা মোট ২৭ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৭টি আবেদন করেছে। ২১ জুন আবেদন প্রক্রিয়া শেষে ২৫ জুন ফলাফল প্রকাশ পাবে। আর ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হবে।