মৌসুমী নিম্নচাপের
প্রভাবে গত ছয় দিনের টানা বর্ষণে উপকূলীয় অনেক অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত
হয়ে পড়েছে। বরিশাল শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে
যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বান্দরবানের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ এখনো
বিচ্ছিন্ন রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি দেড় ফুট বৃদ্ধি
পেয়েছে। বেড়েছে জল বিদ্যুত্ উত্পাদন।
ধুনট
(বগুড়া) : বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙ্গন
শুরু হয়েছে। গতকাল রঘুনাথপুর গ্রামে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত তীর
সংরক্ষণ প্রকল্পের ৫০ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সঙ্গে ভাঙ্গন
স্থানে অবস্থিত ১০টি বসত বাড়ি বিলীন হয়। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে
আতংক বিরাজ করছে।
বরিশাল : মৌসুমের প্রথম ভারী বৃষ্টিতেই বরিশাল নগরী কার্যত ডুবে গেছে।
কোথাও এক হাঁটু আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ
সড়ক। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে নাগরিক দুর্ভোগ চরমে উঠেছিল।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ রুটে চতুর্থ দিনের মত গতকাল
বৃহস্পতিবারও এমএল টাইপের একতলা লঞ্চ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।
বৃহস্পতিবার
ভোর হওয়ার আগেই শুরু হয় মুশলধারে বৃষ্টি। সকাল ১০টা পর্যন্ত কোন বিরতি
ছাড়াই বৃষ্টির গতি বাড়তে থাকে। ততক্ষণে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড,
হাসপাতাল রোড, কালীবাড়ি রোড, ফকির বাড়ি রোড, বগুড়া রোড, চকবাজার, বাজার
রোড, কাউনিয়া, আমানতগঞ্জ, রূপাতলী, বটতলা ও আলেকান্দাসহ নগরীর প্রায় সব
এলাকার রাস্তায় এক হাঁটু কোথাও কোথাও বেশি পরিমাণ পানি জমে যায়। নগরীর
সিংহভাগ রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যান-বাহন চলাচল ব্যাহত হয়। নগরীর বিভিন্ন
বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। ফকির বাড়ি রোড এলাকার কয়েকটি কাঁচা ঘর-বাড়িতে
পানি জমে যাওয়ায় বাসিন্দারা মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়। নগরীর পরেশ সাগরসহ
কয়েকটি পুকুরের মাছ ভেসে যায় বৃষ্টির পানিতে। সেই মাছ শিকারে নগরীর বটতলাসহ
বিভিন্ন এলাকার উত্সুক মানুষ নেমে পড়ে রাস্তায়। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। যারা বেরিয়েছেন তারাও অটো বা
রিকশা না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হন। ঢাকা-বরিশাল রুটসহ ডাবল ডেকার
লঞ্চের যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিস গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত ২১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করেছে।
মহেশখালীর একাধিক গ্রাম পানির নিচে
মহেশখালী: আষাঢ়ের ভারী বর্ষণে মহেশখালীর একাধিক গ্রামের ৫০ হাজার
মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি
এবং বাতাসের দমকা হাওয়ার কারণে উপজেলায় ৭২ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুত্ নেই।
বিভিন্ন
সূত্রে খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ছোট মহেশখালী তেলী পাড়ার ৫০টি বাড়ি,
হোয়ানকের ২০টি, কালারমারছড়ার ১২টি, সোনাদিয়ার ৩০টি, ধলঘাটার ৪৩টি,
মাতারবাড়ীর ২৪টি এবং পৌরসভা এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘর পানির নিচে রয়েছে।
কক্সবাজার-টেকনাফ যান চলাচল বন্ধ
কক্সবাজার: গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কয়েকটি
স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ
হয়ে গেছে।
কক্সবাজার
সদর উপজেলার লিংক রোড থেকে রামু উপজেলার খুলিয়াপালং এলাকায় চার কিলোমিটার
সড়কে অতিরিক্ত পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত পানির কারণে ওই
সড়কেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে
যায়। এছাড়াও মেরিন ড্রাইভ সড়কে একটি স্থানে ভাঙন ও কয়েকটি স্থানে পাহাড়
থেকে মাটি রাস্তার উপর ধসে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কলাতলি মসজিদ এলাকার
সড়কেও ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি হিমছড়ি থেকে রেজু ব্রিজ পর্যন্ত
বিভিন্ন স্থানে পাহাড় থেকে মাটি ধসে সড়ক ভরাট হয়ে গেছে।
এদিকে
৬ দিনের টানা বর্ষণে জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম ভোগান্তিতে
পড়ে গেছেন। নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে বীজতলা ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে, চিংড়ি ঘের
তলিয়ে গেছে, কোথাও কোথাও ঢেউয়ের তোড়ে নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
চাষিরা ফসল নিয়ে রয়েছেন দারুণ উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার মধ্যে। উপকূলে তিন নম্বর
সতর্ক সঙ্কেত অব্যাহত রয়েছে। জেলার কয়েকটি স্থানে ভূমি ধসের ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষ করে কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় ব্যাপক হারে বন্যা
দেখা দিয়েছে।
কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়েছে
রাঙ্গামাটি : টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদে প্রায় দেড় ফুট পানি বৃদ্ধি
পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে কাপ্তাইয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদনে যে বড় ধরনের সঙ্কট
তৈরি হয়েছিল তার কিছুটা হলেও অবসান হয়েছে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুত্ কেন্দ্রের
ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ আবদুর রহমান বলেন, দেড় ফুট পানি বেড়ে লেকে
বর্তমানে পানি রয়েছে ৭৬.০৮ ফুট এমএসএল। পাহাড় ও ছড়ায় এখনো বৃষ্টির পানি
আটকে আছে। সেই পানি রাতের মধ্যে গড়িয়ে লেকে এসে পড়বে বলে তিনি জানান। আর
এতে সকালের মধ্যে লেকে আরো দেড় ফুট পানি বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ
করেন। লেকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিদ্যুত্ উত্পাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি
কম থাকায় গত কয়েকদিন দুইটি জেনারেটর চালু রেখে ৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত্
উত্পাদন করা হতো। পানি বৃদ্ধির ফলে গতকাল রাত থেকে আরো দুইটি জেনারেটর চালু
করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন বেড়েছে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বান্দরবান
বান্দরবান : টানা বর্ষণে বান্দরবানে প্রায় দু’সহস্রাধিক ঘরবাড়ি
প্লাবিত হয়েছে। জেলার চার উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার
মানুষ। বান্দরবান-কেরানীহাট প্রধান সড়কের বরদুয়ারা’সহ কয়েকটি স্থানে প্রধান
সড়ক ৪ থেকে ৫ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবারও বান্দরবানের
সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অপরদিকে পাহাড় ধসে সড়কে মাটি
জমে যাওয়ায় বান্দরবানের রুমা, থানছি এবং রোয়াংছড়ি উপজেলায়ও যানবাহন চলাচল
বন্ধ রয়েছে। পাহাড় ধসের ঝুঁকির মধ্যে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে
মাইকিং করা হচ্ছে। বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার
উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পিরোজপুরে বৃষ্টিতে জনজীবন অচল
পিরোজপুর : গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর টানা বৃষ্টিতে পিরোজপুরের জনজীবন অচল
হয়ে পড়ে। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা আমড়া গাছিয়া,
বেতমোড়-রাজপাড়া, বড়মাছুয়া ও তুষখালী ইউনিয়ন, ভান্ডারিয়ার তেলিখালী, ইকরি,
নদমুলা-শিয়ালকাঠী, সদর ও ভিটাবাড়িয়া, জিয়ানগরের পাড়েরহাট, পত্তাশী ও
বালিপাড়া সদরের সারিকতলা-ডুমুরিতলা, শংকরপাশা, টোনা, কলাখালী এবং কাউখালী
উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নই জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে।
জলাবদ্ধ গলাচিপা
জলাবদ্ধতার
শহর গলাচিপা পৌর শহর। ড্রেনই যেখানে জলাবদ্ধতার কারণ। সামান্য বৃষ্টি হলেই
শহরের রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। অধিকাংশ রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে
থাকে। বছর জুড়ে চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এবং রাস্তার ওপর যেখানে সেখানে
নির্মাণ সামগ্রী রাখায় জলাবদ্ধতা আরও বেড়েছে।
ধুনটে যমুনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙ্গন