ভূতুড়ে শহরে 'রাজ' করছেন বৃদ্ধ পিতা

S M Ashraful Azom
একটি পরিত্যক্ত শহর। দূর-দূরান্তে জনমানব চোখে পড়ে না। ক্কচিত্ একটি কুঁড়েঘর। তাও মানুষ আছে কিনা, বোঝা দায়। গুটি কয়েক পরিবারের বাস। তবে পারিপার্শ্বিক দূরত্ব অনেক। আশেপাশের জনবহুল এলাকার মানুষদের কাছে, ওটা একটা ভূতুড়ে শহর। সমুদ্রের ধারে তামিলনাড়ুর ধনুশকোড়ি শহর অর্ধশতকের বেশি সময় ধরেই কার্যত জনশূন্য। ১৯৬৪ সালের ভয়াবহ সাইক্লোনের সময়ই তীব্র জলোচ্ছাসের ভীত প্রায় সকলেই শহরটি ছেড়ে পালান। শুধু রয়ে যান এক যুবক। ফাঁকা শহরে শুরু করেন আদিম জীবন। উপজাতি রাজার মতো। সে দিনের যুবক আজ ৭৫ বছরের বৃদ্ধ। সন্তান, নাতি, নাতনিদের নিয়ে তার সুখের সংসার। ফাদার্স্ ডে-তে পরিচিত হওয়া যাক সেই বৃদ্ধ পিতার সঙ্গে।

আক্ষরিক অর্থেই স্বাধীন জীবন। গাড়ির আওয়াজ, বিষাক্ত ধোঁয়া, স্মার্টফোন, আইপড, থিকথিকে ভিড়, রাজনৈতিক অশান্তি, মিটিং, মিছিল, খবরের কাগজ, ব্রেকিং নিউজ-- সব কিছু থেকেই বহু দূরে। সে আজ থেকে ৫০ বছর আগের কথা। '৬৪ সালের ভয়াবহ সাইক্লোনে ভারতের তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী শহর ধনুশকোড়ি ছেড়ে পালান বহু বাসিন্দাই। সকলের কাছে শহরটি ভুতুড়ে শহর নামেই পরিচিত। রয়ে যান হাতে গোনা কয়েকজন। তাদেরই মধ্যে ছিলেন বছর পঁচিশের এক যুবক। নাম কে মুকুপরি। সবাই শহর ছেড়ে পালালেও, তিনি রয়ে যান ফাঁকা শহরেই। স্বপ্ন ছিল, এই ফাঁকা শহরেই জীবনযাপন করবেন রাজার মতো। নিজের ইচ্ছেমতো কাটাবেন জীবন। কারও চোখ রাঙানি সহ্য করতে হবে না।
সভ্যতার পাশেই শুরু হয় এক আদিম শান্তির জীবন। সমুদ্রের কাছে একটি ঘর বাঁধেন। পেশা হিসেবে বেছে নেন মাছ ধরা। তারপর বিয়ে করে জমিয়ে সংসার শুরু। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে মুকুপরি ধনুশকোড়ির অঘোষিত সম্রাট মুকুপরি। এহেন স্বাধীন জীবনের মধ্যেও সংসারের বাঁধন একটুও আলগা হতে দেননি দায়িত্বশীল পিতার মতোই। ৭ কন্যার পিতা। প্রত্যেকেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সুখের সংসার। নাতি-নাতনিদের কাছে খুবই প্রিয় তাদের দাদু। ৭৫ বছর বয়সেও শরীর ফিট। কোনও সমস্যা নেই। শুধু বছর দুয়েক হল চোখে একটু কম দেখছেন। তাই মাছ ধরা ছেড়ে দিয়ে চায়ের দোকান চালান।

তামিলনাড়ু বেড়াতে গিয়ে ধনুশকোড়ি দেখতে যান অনেকেই। ভূতুড়ে শহর দেখে আলো থাকতেই ফিরে যান পর্যটকরা। সেই পর্যটকদের আতিথেয়তার কোনও ত্রুটি রাখেন না মুকুপরির পরিবার। তাদের আতিথেয়তায় সকলেই মুগ্ধ। বার বার ফিরে আসেন।

বৃদ্ধের কথায়, 'সেদিন রাত (৬৪ সালের কোনও এক দিন) পর্যন্তও এই শহরটি ছিল ছবির মতো সাজানো। তীব্র ঢেউ সব শেষ করে দিল। সবাই যখন পালিয়ে যাচ্ছিল, আমি ঠিক করলাম ঢেউয়ের মোকাবিলা করব। পালাবো না। এখন বুঝি, সেদিন সিদ্ধান্তটা ঠিকই ছিল। জীবনটা রাজার মতো কাটছে।'-ওয়েবসাইট।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top