অ্যান্টিভাইরাস ও সিকিউরিটি পণ্য হ্যাক করে নজরদারি চালাচ্ছে এনএসএ ও জিসিএইচকিউ

S M Ashraful Azom
একের পর এক গোপন তথ্য ফাঁস বিশ্ববাসীকে নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছেন ‘হুইসেলব্লোয়ার’খ্যাত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক সদস্য এডওয়ার্ড স্নোডেন। তার কল্যাণে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার অনেক গোপন নজরদারির তথ্য উঠে এসেছে বিশ্ববাসীর সামনে। তার ফাঁস করে দেওয়ার এমনই একটি নথি থেকে আবারও বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা প্রযুক্তিবিশ্বে রীতিমতো ঝড় তুলেছে।

এই নথি থেকে জানা যাচ্ছে, ক্যাসপারস্কির মতো বড় বড় সব অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতাদের তৈরি অ্যান্টিভাইরাস ও অন্যান্য সিকিউরিটি পণ্যগুলোকে নিয়মিত হ্যাক করে এগুলো থেকে ব্যক্তিগত অনেক তথ্যই হাতিয়ে নেওয়া হয়। এসব তথ্যের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও নজরদারি করা অনেক সহজ হয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ) এবং যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন্স হেডকোয়ার্টার (জিসিএইচকিউ) যৌথভাবেই এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করে গেছে। অ্যান্টিভাইরাস ও ডিজিটাল সিকিউরিটি পণ্য নির্মাণে বিশ্বের শীর্ষ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই দুই রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায়। মজার বিষয় হলো—এই ২৩টি কোম্পানির কোনোটিই যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের নয়। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে আবার শীর্ষস্থানীয় টার্গেট কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে রাশিয়ার ক্যাসপারস্কি। আড়াই লক্ষাধিক কর্পোরেট ক্লায়েন্ট এবং ৪০ কোটিরও বেশি ব্যবহারকারী থাকায় ক্যাসপারস্কি হ্যাক করার মাধ্যমেই বিপুল পরিমাণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব বলেই এই কোম্পানিকে শীর্ষ টার্গেট করা হয়েছে বলে উঠে এসেছে স্নোডেনের ফাঁস করা নথিতে।

আর সাধারণভাবে হ্যাকিং বা অন্যান্য সাইবার ক্রাইম থেকে মুক্ত থাকার জন্য সকলেই অ্যান্টিভাইরাস বা সিকিউরিটি পণ্যের ওপরেই নির্ভর করে থাকে। ফলে সংবেদনশীল এমন অনেক তথ্যই মানুষ এসব নিরাপত্তা পণ্যের মাধ্যমে শেয়ার ও ব্যবহার করে থাকে, যা অন্যান্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে করে না। ফলে সংবেদনশীল তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এই ধরনের পণ্যগুলো অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে বলেই মূলত এসব পণ্যকে টার্গেট করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী। এর জন্য তারা অ্যান্টিভাইরাসে সফটওয়্যার রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং (এসআরই) পদ্ধতিও প্রয়োগ করেছে, যা কোনো সফটওয়্যারে প্রয়োগ করা হলে সেই সফটওয়্যারে রক্ষিত ব্যবহারকারীর সব তথ্য উদ্ধার করে দিতে পারে ব্যবহারকারীর কোনো ধরনের সন্দেহ উদ্রেক না করেই।

এমনকি এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই সফটওয়্যারে মনিটরিংয়ের কাজটি করা সম্ভব হয়ে থাকে। দ্য ইন্টারসেপ্টে প্রকাশিত এই নথির সূত্র ধরে প্রকাশিত খবরের প্রতিক্রিয়ায় ক্যাসপারস্কির পক্ষ থেকে এক বার্তায় জানানো হয়েছে, খবরটি তাদের হতাশ করলেও তারা বিস্মিত নয়। সরকারি এসব নজরদারি কার্যক্রমের সমালোচনা তারা আগেও করেছে জানিয়ে এই ধরনের নজরদারি কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top