দুই সপ্তাহ ধরে স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনা আর দফায় দফায় আলোচনার পর গ্রিসকে তৃতীয় দফায় ঋণ দিতে সমঝোতায় পৌঁছেছে ইউরোজোন।
সোমবার
ইউরোজোনের নেতাদের বৈঠকের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডোনাল্ড টাস্ক
এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গ্রিসকে বেইল আউট দেয়ার বিষয়ে ইউরোপের নেতারা
‘নীতিগতভাবে সম্মত’ হয়েছেন। 'অন্যভাবে বললে এর অর্থ গ্রিসকে সমর্থন দিয়ে
যাওয়া,' বলেন তিনি। এর মধ্যদিয়ে অর্থ সঙ্কটে খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়া
গ্রিসের সমস্যা আপাতত মিটল।
একক
মুদ্রা ব্যবহারকারী ১৯ দেশের ইউরো পরিবার থেকে গ্রিকদের ছিটকে পড়ার
দুশ্চিন্তাও আপাতত কাটল। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জ্যঁ-ক্ল ইয়াঙ্কার বলেন,
'গ্রিক্সিট (গ্রিক এক্সিট) হচ্ছে না।'
বিবিসির
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব সংস্কারের শর্তে ইউরোজোনের দাতারা নতুন করে
টাকা দিতে রাজি হয়েছে, তা বুধবারের মধ্যে গ্রিসের পার্লামেন্টে পাস করাতে
হবে। জরুরী শীর্ষ বৈঠকে প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়া গ্রিসের সঙ্গে রবিবার গভীর
রাতেও দর কষাকষিতে ব্যস্ত ছিলেন ইউরো জোনের নেতারা।
গ্রিসকে
ঋণ সঙ্কট থেকে টেনে তুলে ইউরোপীয় একক মুদ্রায় ধরে রাখার আলোচনা শুরু করার
আগে আস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে ইউরো জোনের দাতারা।
আস্থা
ফিরিয়ে আনতে চলতি সপ্তাহেই মূল সংস্কার কর্মসূচিগুলো শুরু করতে গ্রিসের
প্রতি চাপ সৃষ্টি করছেন জোনের নেতারা। এজন্য গ্রিসের বামপন্থি
প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসকে পার্লামেন্টের মাধ্যমে আইন জারি করতে
বলেছেন তারা। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে ইউরো জোনে থাকা গ্রিসের বাকী ১৮
অংশীদার সন্তুষ্ট হলে আট হাজার ছয়শ’ কোটি ইউরোর তৃতীয় বেইল আউট কর্মসূচি
নিয়ে আলোচনা শুরু করার কথা বলেছেন তারা।
এর মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রিসের দেউলিয়া হয়ে যাওয়া ঠেকাতে তাত্ক্ষণিকভাবে তহবিল যোগানোর বিষয়টিও আছে।
কর
ও পেনসনসহ বেইল আউট কর্মসূচির ছয়টি মূল প্রস্তাব বুধবার রাতের মধ্যে
গ্রিসের পার্লামেন্টে পাস করে আইন জারি করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আলোচনার
শুরু করার আগেই বেইল আউটের পুরো প্যাকেজের পক্ষে গ্রিক পার্লামেন্টের
সমর্থন চাওয়া হয়েছে।
ইউরো
গ্রুপের অর্থমন্ত্রীদের খসড়া সিদ্ধান্তের যে তালিকা জোনের নেতাদের কাছে
পাঠানো হয়েছে তাতে এসব কথাই বলা হয়েছে। শর্তগুলো মানতে ব্যর্থ হলে গ্রিসকে
‘সাময়িকভাবে’ ইউরো জোনের বাইরে রাখার জার্মানির প্রস্তাবও ওই
সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রাখা হয়েছে।
তবে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এক জ্যেষ্ঠ সূত্র বলেছে, জার্মানির ওই প্রস্তাবটি
বেআইনি, সিপ্রাস যদি অন্য কঠোর শর্তগুলো মেনে নেন তাহলে এটি সম্মেলনের
বিবৃতি থেকে বাদ দেয়া হতে পারে।
ব্রাসেলসে
অনুষ্ঠিত ইউরো জোনের নেতাদের বৈঠকে যোগ দিতে এসে সিপ্রাস বলেছেন, ইউরোপকে
একত্রিত রাখতে তিনি ‘আরেকটি সৎ সমঝোতা’ করতে চান।
তবে
এখনই আলোচনা শুরু করার জন্য এসব শর্তও যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন জার্মান
চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। ইউরো জোনের বেইল আউট প্রস্তাবের সবচেয়ে বড়
দাতাদেশ জার্মানি। গ্রিসকে অতিরিক্ত ঋণ সহায়তা দেয়ার বিষয়ে নিজ দেশের
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতায় চাপে আছেন মার্কেল।
বুধবার
রাতের মধ্যে শর্তগুলো পালনের বিষয়ে গ্রিস অনুকূল সাড়া দিলে, বৃহস্পতিবার
বিষয়টি নিয়ে জার্মান পার্লামেন্ট অধিবেশনে বসবে। ওই অধিবেশনে মার্কেল সরকার
নতুন ঋণ নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারবেন কিনা তা নির্ধারিত হবে। সূত্র:
রয়টার্স