দক্ষিণাঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

S M Ashraful Azom
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্টনমেন্ট স্থাপনের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, আমার প্রত্যাশা আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাপূর্ণ বাহিনীতে পরিণত করবেন। সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ও কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন। রবিবার বিকালে ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদর দফতরে স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের ৪০তম বার্ষিকী-২০১৫ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অংশীদার। তিনি বলেন, আমি আপনাদের কল্যাণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমার ভাইদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে চলেছি। নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে সেনা সদস্যদের সকল কাজে এগিয়ে যাওযার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কার্যকর কমান্ড চ্যানেল সেনাবাহিনীতে যে কোন কাজ সমাধানে মুখ্য ভূমিকা রাখে। নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে সকল কাজে আপনারা এগিয়ে যাবেন এই আমার প্রত্যাশা। একই সাথে আমি আশা করি, সকল কমান্ডারগণও তাদের অধীনস্থদের প্রতি সব সময়ই প্রয়োজনীয় মনোযোগ বজায় রাখবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। আমি আশা করি, আপনারা তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পেশাগত অনুশীলন চালিয়ে যাবেন। স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান 'স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট' এর ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই এ রেজিমেন্টের উন্নয়নে কাজ করেছে। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই সর্বপ্রথম গার্ডস সদস্যদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে, গার্ডস ভাতার প্রচলন করে। ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল আমরা ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানকে স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রদান করি। একই বছর ৭ অক্টোবর পিজিআর এর নতুন সাংগঠনিক কাঠামোর অনুমোদন দেই যা এখন পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হয়েছে। এরফলে আপনাদের জনবল ২ হাজারে উত্তীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা পিজিআর-এর জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন, বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, এপিসিসহ আধুনিক সরঞ্জামাদির সরবরাহ বহুগুণে বৃদ্ধি করেছি। এরফলে রেজিমেন্টের সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্তব্য পালন সহজ হয়েছে। সদস্যদের মনোবল আরও দৃঢ় হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।
শেখ হাসিনা বলেন, গণভবনে ১৫০ জন গার্ডস সদস্যের জন্য বসবাসযোগ্য একটি ব্যারাক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এরফলে গণভবনে আপনাদের দীর্ঘদিনের আবাসিক সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে বলে আমার প্রত্যাশা। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের আগ পর্যন্ত সৈনিকদের দুপুরের খাবারে রুটি দেয়া হত। আমরা ১৯৯৭ সালে দুপুরে রুটির পরিবর্তে ভাত চালু করি। সেনাবাহিনীর জেসিও ও অন্যান্য পদবীর সৈনিকদের জন্য ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে শুকনা ও তাজা রশদ বৃদ্ধি করে নতুন রেশন স্কেল প্রণয়ন করি। আমরা গতবছর পহেলা এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনীর জেসিওদের ১ম শ্রেণী (নন ক্যাডার) এবং সার্জেন্টদের ২য় শ্রেণীর পদমর্যাদায় উন্নীত করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর জন্য উন্নত অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ২০১৬ সালের মধ্যে দুইটি এফএম-৯ সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল রেজিমেন্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হবে। মেইন ব্যাটেল ট্যাংক, সেল্ফ প্রোপেল্ড গান সিস্টেম, উইপন লোকেটিং রাডার, এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ারসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম আমরা সেনাবাহিনীতে সংযোজন করেছি। তিনি বলেন, এর ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব সমর শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আরও পেশাগত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারছে। শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান বর্তমানে প্রথম। বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার ৫৯৩ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বের ১০টি দেশে মিশনে অংশগ্রহণ করছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার আপনাদের কল্যাণে এসকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাতে আপনাদের চাকরি ও পারিবারিক জীবন স্বাচ্ছন্দময় হয়। দেশ ও জাতির সেবায় আপনারা যাতে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু সামরিক বাহিনী নয়,আমরা প্রতিটি সেক্টরে বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব। তার আগেই আমরা সে লক্ষ্য পূরণ করতে যাচ্ছি। বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ আমরা মধ্য আয়ের দেশের কাতারে উঠে গেছি। এটি আমাদের বিরাট অর্জন। আমরা বাংলাদেশকে আরও অনেক উচ্চতায় তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে। দারিদ্র্যের হার কমে ২২.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আমাদের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩০.২ ভাগ। বিনিয়োগ বেড়েছে ২৮.৯৭ ভাগ। আমাদের রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। এখন খাদ্য উৎপাদন ৩ কোটি ৮৩ লক্ষ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন।
শেখ হাসিনা দেশের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের ৭০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। দেশের জনগণ তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সেবা গ্রহণ করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা। আমরা ৫২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তুলেছি। আমরা এমজিডির ১ থেকে ৬ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করছে। পুরস্কৃত করছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত কমান্ডেন্ট কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর হারুন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top