শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্যানিটেশন সংকট

S M Ashraful Azom
আইসিডিবিআরবি তথা আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের এক গবেষণায় বলা হইয়াছে যে, এই মুহূর্তে ৪৫ শতাংশের বেশি স্কুলে স্যানিটেশন বা শৌচাগার সংকট রহিয়াছে। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলিতেছে। তাই এই ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ না করিয়া পারা যায় না। একই গবেষণায় ইহাও বলা হইয়াছে যে, বাংলাদেশে স্কুলগামী ৪০ শতাংশ কিশোরী প্রতি মাসে গড়ে তিন দিন ক্লাসে যায় না। ইহারও মূল কারণ ঐ স্যানিটেশন সংকট। ভাল ও পৃথক শৌচাগার না থাকায় তাহাদের জন্য এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করিয়াছে। তাহাছাড়া ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সাধারণ শিক্ষা, প্রকৃত ধারণা ও সচেতনতার অভাবে ছাত্রীদের এই সমস্যার মুখোমুখি হইতে হইতেছে। মোটকথা, স্কুল-কলেজ-মাদরাসাগুলিতে প্রয়োজনীয় ও মানসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা একান্ত জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।

উল্লেখ্য, সরকার ইতোমধ্যেই সকল স্কুলে শৌচাগারের মানোন্নয়নের তাগিদ ও নির্দেশনা দিয়াছে। এমনকি ছাত্রীদের জন্য পৃথকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হইয়াছে; কিন্তু কোন কোন স্কুল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিতেছে না বলিয়া অভিযোগ পাওয়া যাইতেছে। বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের যেমনি সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রহিয়াছে, তেমনি স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটিরও এই ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ-খবর ও দেখভাল করা উচিত। শুধু তাহাই নহে, এই ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই বা কেন উদাসীনতার পরিচয় দিবেন? এইসব তো জনহিতকর কাজের মধ্যেই পড়ে। ভারতীয় উপ-মহাদেশের অবিস্মরণীয় নেতা মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হইয়াছিল জনগণের স্যানিটেশন সমস্যার ইস্যুকে কেন্দ্র করিয়া। তাই এই ব্যাপারে আমাদের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অবশ্যই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া বাঞ্ছনীয়। এই সমস্যা কেবল গ্রাম-গঞ্জের স্কুলে রহিয়াছে এমন নয়, একইভাবে শহর-নগরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আছে। রাজধানীর অনেক নামকরা স্কুল-কলেজেও এই সমস্যা থাকার ব্যাপারে অভিযোগ করেন অভিভাবকগণ। এইসব স্কুলে নিয়মিত তদারকির অভাবে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন যেন অরণ্যে রোদনে পরিণত হইয়াছে। এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সময় অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে হাজার হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়; কিন্তু সেই অনুযায়ী ব্যয় করা হয় না বলিয়া যে অভিযোগ আছে তাহা নূতন নহে। শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের এই রকম সুযোগ-সুবিধার দিকে ভ্রুক্ষেপ করা হয় না। স্কুলের ম্যানেজমেন্ট কমিটি এইসব সমস্যা ম্যানেজ করেন না। তাহারা তাহা হইলে কী ম্যানেজ করেন, তাহাই এখানে বড় প্রশ্ন হইয়া দেখা দিয়াছে।

বর্তমানে দেশে সামগ্রিকভাবে স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি হইয়াছে। এই ব্যাপারে সকল সরকারের কমবেশি অবদান আছে। এমনকি এইক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হইয়াছে। এমতাবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি উপেক্ষিত হইবে তাহা মোটেও আশা করা যায় না। বিশেষ করিয়া ছাত্র-ছাত্রীদের শৌচাগার সমস্যার সমাধানে সরকার স্কুল কর্তৃপক্ষকে যে নির্দেশনা দিয়াছেন, আমরা তাহার সঠিক বাস্তবায়ন দেখিতে চাই। যাহারা ইহার বাস্তবায়নে উদাসীনতার পরিচয় দিবেন, তাহাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হইবে। কেননা ইহার সহিত শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সকলের স্বাস্থ্যের বিষয়টি ওেপ্রাতভাবে জড়িত। ছাত্রীদের জন্য আলাদা স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করিতে হইবে যাহাতে তাহারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিতে পারে। সরকারি নির্দেশনায় শৌচাগারে পর্যাপ্ত সাবান, পানি, অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ রাখিবার কথা বলা হইয়াছে। ইহাও সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হইতেছে কিনা তাহা শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্কুল কমিটিকে মাঝে-মধ্যে সরেজমিনে গিয়া দেখিতে হইবে। এই ব্যাপারে আপোস করা যাইবে না। ছাত্র-ছাত্রীদেরও এই ব্যাপারে সচেতন করিয়া তুলিতে হইবে। স্বাস্থ্য ও মানসম্মত এবং আধুনিক স্যানিটেশন নির্মাণ বা সংস্কারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও পৃথকভাবে পদক্ষেপ বা প্রকল্প গ্রহণ করিতে পারে।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top