মাইগ্রেইন যাদের আছে তাদের মাথাটা মনে হয় একটা টাইম বম্ব। একটু বেচাল হলেই ভয়ঙ্কর মাথাব্যথা শুরু হয়ে সব কাজ পণ্ড হয়ে যেতে পারে। রাত জাগা, কাজের চাপ, বেশি বা কম কফি খাওয়ার কারণে মাইগ্রেইনের ব্যথা শুরু হতে পারে। সত্যি বলতে কি, এর চেয়ে অনেক তুচ্ছ কারণেও মাইগ্রেইনের ব্যথা শুরু হতে পারে।
যাদের এই ব্যথা আছে শুধু তারাই জানেন এটি কী পরিমানে যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। মাইগ্রেইনের ব্যথা উঠলে কেবল মাথা ব্যথা হয় তা নয়, অনেক সময় চোখ খুলে তাকানোও যায় না। কারো কারো এসময় বমিও হতে পারে।
সাধারণত মাইগ্রেইনের সময় মাথা দপ দপ করে এবং মাথার একপাশে ব্যথা শুরু হয়ে তা সারা মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। অতিরিক্ত আলো এবং শব্দে এই ব্যথা বাড়তে পারে। অনেক সময় মাইগ্রেইনের রোগীদের বিষণ্ণতা (depression) থাকে, এবং সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে তাদের সমস্যা হতে পারে।
মাইগ্রেইনের সমস্যার ওষুধ থাকলেও জীবন যাপনের ধরন এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেও আপনি এই সমস্যা কমিয়ে আনতে পারেন।
কোন ধরনের খাবার খেলে আপনার ব্যথা শুরু হয় তা বের করুন
একেকজনের একেক ধরনের খাবারের কারণে মাইগ্রেইনের ব্যথা শুরু হয়। আপনার যাতে ব্যথা শুরু হয় তাতে আরেকজন মাইগ্রেইন রোগীর সমস্যা নাও হতে পারে। কয়েক সপ্তাহ একটি নোটবুকে কী কী খাবার খাচ্ছেন এবং কোন কোন দিন ব্যথা হচ্ছে তা টুকে রাখুন।
আপনি এভাবে কোন খাবারের কারণে মাইগ্রেইনের ব্যথা শুরু হয় তা বিশ্লেষণ করে বের করতে পারবেন। এটি একটি ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া মনে হলেও অনেকে এতে উপকার পেয়েছেন। মাইগ্রেইনের ব্যথা শুরু করে এমন খাবারগুলো এড়িয়ে চললে, সময়মত ঘুমালে এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন করলে মাইগ্রেইন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
রোজ সবুজ শাকসবজি এবং বাদাম
ম্যাগনেসিয়াম ও রিবোফ্লাভিন বা ভিটামিন B2 (Riboflavin (vitamin B2)) মাথাব্যথা কমানোর কাজ করে। এগুলো সবুজ শাকসবজি এবং বাদামে পাওয়া যায় তাই রোজ দুপুরে বা রাতে শাক খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন ৪-৬ টি বাদাম (almond) খাওয়ারও চেষ্টা করুন। আলু এবং লাল আটাতেও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। ডিম এবং কম চর্বিযুক্ত দুধে (low fat milk) রিবোফ্লাভিন থাকে।
ভিটামিন D-এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিন
ভিটামিন D মুলত দাঁত এবং হাড়ের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হলেও মাথা ব্যথার সাথেও এটির সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। সাধারণত প্রতিদিন ১০০০ IU ভিটামিন D শরীরের জন্য প্রয়োজন হলেও মেয়েদের ঋতুচক্র বন্ধ (menopause) হয়ে যাওয়ার পর এই চাহিদা ১২০০ IU-তে গিয়ে পৌঁছয়। ভিটামিন D-এর বেশিরভাগটাই আসে সূর্যের আলোর সংস্পর্শ থেকে তবে খাবার থেকেও অনেকটুকু শরীরে গ্রহণ করতে হয়।
যেসব খাবারে ভিটামিন D রয়েছে সেগুলো হচ্ছে মাশরুম, ডিমের কুসুম, চিজ বা পনির, দই, দুধ, কড লিভার অয়েল এবং গরুর কলিজা। আপনি একসাথে পাওয়া যায় এমন ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন D-এর সাপ্লিমেন্ট খেয়ে দেখতে পারেন। এটি বিশেষ করে ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এবং ষাটোর্ধ যে কারো জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করুন। সুবিবেচকের মত খান।
প্রতিদিন তিনবার ভরপেট খাওয়ার চাইতে অল্প করে বেশ কয়েকবার খান যাতে রক্তচাপ কখনো কমে না যায়।
চর্বিযুক্ত খাবার কম খান এবং জটিল ধরনের শর্করাজাতীয় খাবার (complex carbohydrates) বেশি খান। যেসব খাবার থেকে আস্তে আস্তে চিনি শরীরে পৌঁছয়, যেমনঃ বাদামি রুটি (brown bread), লাল আটার রুটি, ওটমিল, লাল চাল, কম GI যুক্ত চাল (low GI rice), শাকসবজি, সেগুলোকে জটিল ধরনের শর্করাজাতীয় খাবার বলে।
আপনার মাইগ্রেইন হয়ত কখনই পুরোপুরি ভাল হবে না, তবে কিছু বিবেচনাপ্রসুত সিদ্ধান্তের কারণে জীবনের মান অনেক উন্নত হয়ে উঠতে পারে।
লেখক: ডা. নাওমি মির্জা
মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞ