নিম্নচাপে সাগর
এখন উত্তাল। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত
লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। নিম্নচাপ এলাকায়
বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো
হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী
বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সারাদেশে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কক্সবাজার,
বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তৃতীয়দিনের
মতো বান্দরবানের সঙ্গে সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কক্সবাজার ও বান্দরবানে
অন্তত আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। রাজধানী ঢাকার নিম্নাঞ্চলও
তলিয়ে গেছে। মেঘনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটে ফেরি
চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে লঞ্চ,
ট্রলারসহ ছোট নৌযান চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
খুলনা
অফিস জানায়, পাঁচদিনের টানা বর্ষণ এবং নদ-নদীতে মাত্রারিক্ত পানি বৃদ্ধি
পাওয়ায় খুলনার উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার চালনা পৌরসভাসহ নয়টি ইউনিয়নের ৩০
গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে
বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বিরামহীন বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে
শত শত একর আমন ধানের বীজতলা।
আবহাওয়া
অধিদপ্তর জানায়, নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং তা
আরো বাড়তে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং
কক্সবাজারকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
নিম্নচাপটি গতকাল সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কিলোমিটার
পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ২০০ কিলোমিটার
পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ও
পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরো
ঘনীভূত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে
পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে
বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ ইত্তেফাককে জানান, নিম্নচাপের প্রভাব
আরো অন্তত দুইদিন থাকবে।
অপরদিকে
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা,
গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামী ২৪
ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড আরো জানায়, সারা দেশে মোট
২১ পয়েন্টে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্ট,
কুশিয়ারা নদীর অমলশীট ও শেওলা পয়েন্ট, কপোতাক্ষ নদীর ঝিকরগাছা পয়েন্ট,
মুহুরি নদীর পরশুরাম পয়েন্ট, হালদা নদীর নারায়ণহাট পয়েন্ট, সাংগু নদীর
বান্দরবান ও দোহাজারি পয়েন্ট, মাথামুহুরী নদীর লামা ও চিরিঙ্গা পয়েন্টে
নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নিম্নচাপের
প্রভাবে রাজধানী ঢাকাতেও গত দুইদিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝে মধ্যে ভারি
বৃষ্টিপাত হওয়ায় জুরাইন, রায়ের বাজার, শ্যামপুর, পোস্তগোলা, খিলগাঁও,
মাদারটেক, শেখের জায়গা, মধ্য বাড্ডা থেকে শুরু করে কুড়িল পর্যন্ত এলাকা,
উত্তর বাড্ডা, আনন্দনগর, বাইদারটেক, সাঁতারকুল, নূরেরচালা, ছোলমাইদ, নর্দা,
শাহজাদপুর, বড় কাঠালিয়া, জগন্নাথপুর, ভাটারা, নয়ানগরসহ নগরীর বিভিন্ন
নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে। হাজার হাজার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে ভোগান্তি
সৃষ্টি করেছে লাখ লাখ মানুষের। পেশাজীবী-শ্রমজীবী গরিব মানুষের দুর্ভোগের
শেষ নেই। ঘরে পানি, বাইরে পানি, স্কুলে, বাজারে- সর্বত্রই পানি আর পানি। এই
পানিবন্দী মানুষের জীবন এখন দুর্বিষহ।
চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
চকরিয়া
(কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ায় টানা ভারী বর্ষণ ও
মাতামুহুরী নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি কমেছে। তবে বন্যার পানিতে নতুন করে প্লাবিত
হয়েছে উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের কোণাখালী, বিএমচর, ঢেমুশিয়া, বদরখালী,
পশ্চিম বড়ভেওলাসহ অন্তত পাঁচ ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের বেশিরভাগ বসতবাড়ি তলিয়ে
গেছে বুক সমান পানিতে। বর্তমানে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে প্রায় দুই লাখ মানুষ
পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। গতকাল দুপুরে মাতামুহুরী নদীতে ভেসে আসা
আনুমানিক ৪৬ বছর বয়সের অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
বান্দরবানে পাহাড় ধস
বান্দরবান
প্রতিনিধি জানান, অব্যাহত বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানে প্রায় পঞ্চাশ
হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনে পাহাড় ধসে প্রায় শতাধিক
ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ তৃতীয়
দিনের মত বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
রোয়াংছড়িতে বিদ্যুত্ নেই
রোয়াংছড়ি (বান্দরবান) সংবাদদাতা জানান, বিদ্যুতের খাম্বা পড়ে যাওয়ায় গত চার দিন ধরে রোয়াংছড়ি উপজেলা অন্ধকারে রয়েছে।
চট্টগ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
চট্টগ্রাম
অফিস জানায়, চট্টগ্রামে গত ক’দিনের প্রবল বর্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ
আসছে। গতকাল সোমবারও জেলার সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও আনোয়ারার
বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্লাবিত এলাকা থেকে পানি না সরায় মানুষ পানিবন্দি
অবস্থায় দিন কাটিয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার
বিস্তীর্ণ এলাকার মহাসড়ক ও সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম
মহানগরীর সার্সন রোডে পাহাড়ের রিটেইনিং ওয়ালসহ একটি প্রাচীন সিরিষ গাছ ভেঙে
পড়লে ঐ স্থান দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে আরো বৃষ্টিপাতের
পূর্বাভাস থাকায় পাহাড় সংলগ্ন বসতি ও নিচু এলাকার জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে
অবস্থান করার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন।
লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
লক্ষ্মীপুর
প্রতিনিধি জানান, মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় সোমবার সকাল থেকে
লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ
নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এতে শত শত ট্রাক ও অর্ধ-শতাধিক নৈশ
কোচ আটকা পড়েছে।
লাকসামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
লাকসাম
(কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, প্রবল বর্ষণ ও উজানের পানির চাপে লাকসাম
উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ডাকাতিয়া নদীর পানি বিপদসীমা
অতিক্রম করেছে।
ফেনীতে ভারী বর্ষণ
ফেনী
প্রতিনিধি জানান, মুহুরী ও কহুয়া নদীর তিন স্থানের ভাঙন দিয়ে ফুলগাজীর
নিম্নাঞ্চলে পানি দ্রুত প্রবেশ করায় আটটি গ্রামসহ ফেনী-ফুলগাজী-পরশুরামের
আঞ্চলিক সড়ক পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়লে ফেনীর সাথে ফুলগাজী পরশুরামের সড়ক
যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
দাকোপে ডুবেছে বীজতলা