জাবিতে জমজমাট ইফতার আড্ডা

S M Ashraful Azom
প্রধান ফটকের সাথে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। মাঠে গোল হয়ে বসে আছে তরুণ-তরুণীরা। কয়েকজন করে দল-উপদলে ভরে গেছে গোটা মাঠ। সবুজ ঘাসের উপর বিছানো খবরের কাগজ। কাগজের উপর হরেক রকম খাবার। মাঠজুড়ে পিনপতন নীরবতা। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কখন সময় হয়! কখন সময় হয়! মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি কানে ভাসতেই সকলেই একযোগে রোজা ভাঙে। টানা দু’মাসের বন্ধ থাকা শর্তেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ইফতারের পূর্বমুহূর্তে এ দৃশ্যের দেখা মেলে।কি হিন্দু! কি বৌদ্ধ! কি বা খ্রিস্টান! সকলেই বসে একসাথে ইফতারে। বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে ধর্ম-বর্ণে ভেদাভেদ দূর করে ইফতার এ অসাম্প্রদায়িক বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও দিয়েছে পূর্ণতা। ইফতারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গাতে জড়ো হয় বন্ধু-বান্ধবরা। বসে আড্ডার আসর, চলে বাহারি গল্প, মুহূর্তেই সেই গল্পের তালে ভুলে যায় সারাদিন রোজা থাকার ক্লান্তির কথা। বিকাল হলেই উপচেপড়া ভিড় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া চত্বর, পরিবহন চত্বর, শহীদ মিনারের পাদদেশ, অডিটরিয়ামের বারান্দা এবং টারজান পয়েন্টে। তবে সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম ঘটে কেন্দ্রীয় মাঠেই। কিন্তু এবারের আষাঢ়ের বৃষ্টিতে এ আয়োজনে অনেকাংশই বাধাগ্রস্ত হয়ছে, জানালেন শহিদুল। ক্যাফেটেরিয়া বারান্দায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগর ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ইফতার পার্টিতে আজানের পূর্বেই নুরুন্নাহার আর শরীফের ইফতার করার দৃশ্য দেখে অবাক! ওরা রোজা না থেকেও ইফতার করার দৃশ্য দেখে মনে হয় ওরাই বড় রোজাদার। আর এ দৃশ্য দেখে হেসে ওঠে অন্যরা। বাড়িতে থাকা বন্ধুরা ফেসবুকের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে আনন্দময় ইফতারের ছবিগুলো দেখে। মুহূর্তেই মিস করছি! থেকে শুরু করে অসংখ্য কমেন্টে ভরে যায় ফেসবুকে পেজ। শুধু ক্যাম্পাসের বর্তমান শিক্ষার্থীরাই নয় অনেক প্রবীণরাই ক্যাম্পাস ইফতারের মধুর স্মৃতির কথাগুলো তুলে ধরে ফেসবুকে।  শুধুই কি ক্যাম্পাসের খোলা চত্বরে ইফতারি আড্ডা জমে উঠে? তা নয় কিন্তু! হলগুলোতেও প্রাণের আড্ডা জমে উঠে রমজানের ইফতারকে ঘিরে। ভিড়ের মধ্যে ইফতার কেন, সেহরি খেতে যেয়ে ক্যান্টিনে হুমড়ি খেয়ে পড়া, সেহরির শেষ সময় তড়িঘড়ি পানি খাওয়া, সবকিছুতেই যেন আসে এক চাঞ্চল্য। রোজার মাসে হলগুলোতে রাতে যেন রাত থাকে না! হই-হুল্লোড়-গল্পগুজবে কাটে সেহরি অবধি। যারাই ঘুমিয়ে পড়ে চেঁচামেচিতে উঠতে বাধ্য হয় তারাও। ইফতারে মেয়েদের হলগুলোর আশপাশও হয়ে ওঠে জমজমাট। নওয়াব ফয়জুন্নেসা ও বেগম খালেদা জিয়া হলের সামনে কাঁঠাল তলায় জমে ওঠে ইফতারির একটি বড় আয়োজন। তবে এ চত্বরে ইফতারির নিয়মিত আইটেমের পাশাপাশি কিছু ভিন্নতাও থাকে। আর তা হলো নিজের তৈরি করা খাবার! মেয়েদের হলের অনেকই দুপুর থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজ হাতে ইফতারি তৈরিতে। বন্ধু-বান্ধব আর কাছের মানুষটিকে খাওয়াতে পেরেই যেন পরিশ্রম সার্থক হয়।ইফতারকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ব্যস্ত হয়ে পরে। এখানের ইফতারে নিয়মিত আইটেমÑ মুড়ি, ছোলা, বুন্দিয়া, বেগুনি, খেজুর, পেঁয়াজু, কলা, জিলাপি, শশা, বিভিন্ন প্রকৃতির চপ প্রাধান্য পায়। এ ক্যাম্পাসে ইফতারে আড়ম্বরা না থাকলেও আছে উৎসাহ-উদ্দীপনা, সৌহার্দ্য-ভালোবাসা। ইফতার সমনে নিয়ে বসতেই আসে ছিন্নমূল পথ শিশুরা। ইফতারির অংশ থেকে তাদের কিছু দিয়েই অন্তরে যেন আসে প্রশান্তি, আসে তৃপ্তি। ষ জুনাইদ আহম্মেদ 
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top