মার্কিন
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ক্ষমতায় থাকাকালে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ
আইন পাস করতে ব্যর্থ হওয়াকে হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন। এছাড়া সার্বিক
বিশ্ব পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকা উচিত বলেও জানান
ওবামা। শুক্রবার বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
এদিকে ওবামা গতকাল বাবার দেশ কেনিয়ায় গেছেন।
বার্তা
সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ওবামা গতকাল শুক্রবার কেনিয়ার
উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আফ্রিকার
এই দেশটিতে ওবামা প্রথমবারের মতো সফর করছেন। এই দেশে তার বাবা জন্মগ্রহন
করেন। গতকাল তার কেনিয়ায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তার এই সফর হবে ৩৬ ঘন্টার।
এরপর তিনি ইথিওপিয়া সফর করবেন। কেনিয়া সফরে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক
সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা
জানিয়েছেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই ‘আলোচনার কেন্দ্রীয় বিষয়’ হতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সফরের পাশাপাশি বাবার দেশে ওবামার এই ভ্রমণে তার পারিবারিক
বিষয়গুলোও প্রাধান্য পাবে। এ প্রসঙ্গে ওবামা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে
না গিয়ে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে যেতে পারলে ভাল হতো। তাহলে হোটেলেই
বাইরে যেতে পারতাম।’ ওবামা তার পারিবারিক স্বজনদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবেও
সময় কাটাবেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা। তবে এবারের সফরে
ওবামা নিজেদের গ্রামে যাবেন না বলে জানিয়েছেন তারা। প্রতিবেশি দেশ
সোমালিয়ার ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেনিয়া পশ্চিমা
দেশগুলোর এক গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।
সাক্ষাত্কারে
ওবামা বলেন, তার ক্ষমতাকালে সবচেয়ে হতাশার বিষয় ছিল এই যে, তিনি অস্ত্র
নিয়ন্ত্রণে শক্ত আইন করতে পারেননি। কিন্তু একটি উন্নত দেশ হিসাবে এমন আইন
জরুরি বলে তিনি মনে করেন। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে অস্ত্র
নিয়ন্ত্রণে কার্যকর একটি আইন পাসে ব্যর্থ হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে ওবামা
জানান, এই ইস্যুতেই নিজেকে খুব কোণঠাসা মনে হয়েছে। তবে তিনি যথাসাধ্য
চেষ্টা করেছেন। ব্যক্তি মালিকানাধীন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ‘কমন সেন্স
গান সেফটি লজ’ নামে একটি আইন পাসের পরিকল্পনা থাকলেও তাতে ব্যর্থ হন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ ব্যাপারে তিনি জানান, ব্যক্তি মালিকানাধীন
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে উল্লেখযোগ্য
পরিবর্তন আসেনি। বাকি সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের জন্য কাজ করে
যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করেন তিনি।
সম্প্রতি
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের সাথে সহিংসতা আর বর্ণবিদ্বেষের যে অভিযোগ উঠেছে,
তাতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এখনকার শিশুরা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বড়
হচ্ছে এবং একদিন আমেরিকায় আর এসব ঘটনা ঘটবে না। তবে তিনি প্রেসিডেন্ট
থাকাকালীন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি আরো
বেড়েছে বলেও দাবি করেন।
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট মনে করেন, যুক্তরাজ্য যদি বিশ্বে তাদের প্রভাব বজায় রাখতে
চায়, তাহলে তাদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করা ঠিক হবে না। বরং যুক্তরাজ্য
ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকলে তা ইউনিয়নকেও শক্তিশালী করবে বলেই তিনি মনে করেন।
সাক্ষাত্কারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয়
ইউনিয়নের মতো একটি প্রতিষ্ঠান বিশ্বকে আরো নিরাপদ আর উন্নত করে তুলছে। এ
রকম একটি প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবদান রাখার জন্যই যুক্তরাজ্যের সেখানে থাকা
উচিত বলেই মনে করেন তিনি। ইউনিয়নে থাকা না থাকা নিয়ে ২০১৭ সালে ব্রিটেনে
গণভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
কেনিয়ার উদ্দেশে যাত্রা ওবামার