দেশের প্রচীন ও
ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ।
সকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধনী
অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য
রাখবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি
থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জমান সোহাগ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল রবিবার সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ারিং
ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির ধারক ও বাহক
ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটের প্রক্রিয়া।
ছাত্রলীগের
কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ জানান, নেত্রী
(আওয়ামী লীগ সভানেত্রী) যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত
হবে। তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখবো। তারপরও
কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হবে, নাকি নেত্রী নিজেই কাউকে মনোনীত
করবেন- সে সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন।
শৃঙ্খলা
বজায় রাখার স্বার্থে কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী
নেতাদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকের মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও শেষ
পর্যন্ত তা সফল না হওয়ায় ভোটের মাধ্যমেই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব
নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে প্রথমে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে
নেতৃত্ব ঠিক করার দায়িত্ব দেয়া হবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার ওপর। এরপর দলীয় সভানেত্রী ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করার
নির্দেশনা দেবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে
সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনে মেধাবি, পরিশ্রমী, যাদের কোন বদনাম নেই এমন
ক্লিনইমেজের অধিকারী এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসীদের ছাত্রলীগের শীর্ষ
নেতৃত্বে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ
হাসিনা। বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও
সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সঙ্গে দেখা করেন। তারা সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে দলীয়
সভানেত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উল্লিখিত নির্দেশনা দেন বলে
জানা গেছে।
সূত্র
জানায়, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।
এবারও ছাত্রলীগের নেতৃত্বে নতুন মুখ আসছে। বয়সের কারণে বর্তমানে নেতৃত্বে
থাকা অনেকেই শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। ২৯
বছরই ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার বয়সসীমা। দুই বছর মেয়াদী ছাত্রলীগের সর্বশেষ
কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১১ সালের ১০ জুলাই সংগঠনের সর্বশেষ কাউন্সিলের
মাধ্যমে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও
সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের কথা। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবার প্রার্থীদের
পারিবারিক ও অতীত ব্যাকগ্রাউন্ড গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। যাদের
মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে তাদের শীর্ষে নেতৃত্বে না নিয়ে আসারও প্রাথমিক
সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদসহ ১১২টি ইউনিটের
কাউন্সিলর তালিকা এবং ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ চূড়ান্ত হয়েছে। এবারই প্রথম
ছবিসহ ভোটার তালিকা ও বিদেশি ইউনিটগুলোকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয়া
হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার কাউন্সিলরের ভোটে নতুন সভাপতি ও সাধারণ
সম্পাদক নির্বাচন করার কথা রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল প্যান্ডেলে
আয়োজিত এ সম্মেলনে ১৫ হাজার ডেলিগেটসহ লক্ষাধিক নেতাকর্মী যোগ দেবেন। ছাত্র
শিবির বাদে অন্য সব ছাত্র সংগঠনকে এ সম্মেলনে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো
হয়েছে। এর আগে ২০০২, ২০০৬ ও ২০১১ সালের সম্মেলনে গোপন ব্যালটে কাউন্সিলরদের
প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা
হয়।
গত ১২
জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের জন্য
মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়। মোট ২৪০ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন।
এদের মধ্যে ৭৮ জন সভাপতি এবং ১৬২ জন সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন।
সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক পদ পেতে অনেকেই শীর্ষ দুই পদের মনোনয়নপত্র
সংগ্রহ করেছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে সভাপতি পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে
১৪ জন বাদ পড়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে বাদ পড়েছেন ২০ জন। বয়স জালিয়াতির
কারণে তিন জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তারা হলেন, কেন্দ্রীয়
ছাত্রলীগের কৃষি সম্পাদক রাইসুল ইসলাম জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা
ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এনায়েত হোসেন রেজা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। শিক্ষা বোর্ডের জন্ম তারিখের
সঙ্গে জমাকৃত জন্ম তারিখের মিল না থাকায় তাদের প্রার্থিতা বাতিল করেছে
নির্বাচন কমিশন। বয়স না থাকার কারণে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ, ঢাকা মহানগর
দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আনিসুজ্জামানের প্রার্থিতা বাতিল করা
হয়েছে। তাদের একজন ইত্তেফাককে বলেন, ‘দুই বছরের কমিটি চার বছর পার করায়
আমরা বাদ পড়েছি। এখন আমরা নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি
যা করবেন, সেটাই হবে।’ এছাড়া ইসলামী ছাত্র সেনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার
কারণে হিরণ আহমেদ ও ইসলামী ছাত্রফ্রন্টের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য মাসুদ
রানার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সাংগঠনিক
সম্পাদক নাহিদ মিয়ার ছাত্রলীগে আগে কোনো পদ না থাকায় তার প্রার্থিতাও বাতিল
করা হয়। এছাড়া জাকির হোসেন নামে এক পদ প্রত্যাশীর মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড
থাকার অভিযোগ পেয়েছে বাছাই কমিটি।
জানা
গেছে, রাইসুল ইসলাম জুয়েল প্রার্থিতার আবেদনে জন্ম তারিখ ১৯৮৬ সালের ৩১
ডিসেম্বর উল্লেখ করলেও শিক্ষা বোর্ডের নথি অনুযায়ী প্রকৃত তারিখ ৩১
ডিসেম্বর ১৯৮৫। এনায়েত হোসেন রেজার প্রদত্ত জন্ম তারিখ ২৫ নভেম্বর ১৯৮৬
হলেও প্রকৃত তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫। সিরাজুল ইসলামের প্রদত্ত জন্ম তারিখ
১০ জুন ১৯৮৭ হলেও প্রকৃত তারিখ ১০ জুন ১৯৮৬। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন
কমিশনার সুমন কুণ্ড বলেন, ‘শিক্ষা সনদের সঙ্গে আবেদন পত্রে দেয়া বয়সের মিল
না থাকায় তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত
নেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকা, শিক্ষা সনদ না থাকা, বয়স
না থাকা, চাকরিজীবী হওয়াসহ অন্যান্য কারণে আরো ১০ জন সাধারণ সম্পাদক
প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সুমন কুণ্ড আরো বলেন,
আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স ২৯, অবিবাহিত, ছাত্রত্ব-এ তিনটি বিষয়কে সামনে
রেখে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছি।
এদিকে
ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে এগিয়ে আছেন
ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান
সোহাগ, সমাজ সেবা সম্পাদক কাজী এনায়েত, গোলাম রাব্বানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শাখার সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, যুগ্ম সম্পাদক এইচ এম আল আমিন, প্রচার
সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শাহেদ, আসাদুজ্জামান নাদিম, নজরুল ইসলাম, এনামুল হক
প্রিন্স।
চার
বছরের বেশি সময় পর অনুষ্ঠেয় ছাত্রলীগের এই জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে সারা
দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। দিনভর
সরগরম থাকছে জাতীয় রাজনীতির সূতিকাগারখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ঐতিহ্যবাহী মধুর ক্যান্টিন। ঈদের ছুটি শেষ হতে না হতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাস, পার্টি অফিসে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পদপ্রত্যাশী ও তাদের
সমর্থকরা উপস্থিত থাকছেন।