মেঘনা নদীর
অব্যাহত ভাঙ্গনে হাতিয়ার উল্লেখযোগ্য অংশ বিলীন হয়েছে। সমৃদ্ধ জনপদ হাতিয়া
মেঘনায় বিলীন হচ্ছে দ্রুত। ভাঙনে সব হারিয়ে অসংখ্য মানুষ আশ্রয় নিয়েছে নতুন
জেগে ওঠা চর ও বেড়িবাঁধে।
১৯৮১
সালে পরীক্ষামূলক ভাবে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে হাতিয়ার ভাঙন কবলিত এলাকায় স্পার
নির্মাণ করা হয়েছিল। অবশ্য সে কর্মসূচি সফল হয়নি। ১৯৭০-এর দশকে তত্কালীন
সরকার হাতিয়ার ভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। ভূমি পুনরুদ্ধার ও
হাতিয়া ভাঙন রোধ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৯৭৫ সালের ২৯ অক্টোবরে বাংলাদেশ
সরকার ও নেদারল্যান্ড সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। ১৯৮৪
সালের এপ্রিলে ‘ভাঙন রোধের সুপারিশমালা’ বাংলাদেশ সরকারের কাছে উপস্থাপন
করা হয়েছিল। কিন্তু আজো ভাঙনরোধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
১৯৬০
সাল থেকে হাতিয়া মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনের কবলে। ১৯৬৮ সালে এই ভাঙন ভয়াবহ আকার
ধারণ করে। বর্তমানে হাতিয়ার আয়তন ২১০০ বর্গকিলোমিটার। ১৯৬৮ সাল থেকে ২০১৪
সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা মেঘনায় বিলীন হয়েছে। সবচেয়ে
ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে হরণী-চানন্দী, সুখচর ও নলচিরা ইউনিয়ন। ১৯৬০ সালে
হাতিয়ার ইউনিয়ন ছিল ১১ টি। ৫৪ বছরে হাতিয়ার ২টি ইউনিয়ন নীলক্ষী ও হরণী
সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়। সুখচর ও নলচিরা ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা
ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনের কারণে হাতিয়া উপজেলা পরিষদসহ
বিভিন্ন অফিস ওছখালীতে স্থানান্তর করা হয়। জরিপে দেখা যায় হাতিয়ার ৫৫ ভাগ
৩৫-৭০ বছর বয়সী মানুষ কমপক্ষে ৪/৬ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। হাতিয়ার ৮০
ভাগ লোক কৃষক এবং দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। কৃষি জমি ভেঙ্গে যাওয়ার
কারণে অনেক কৃষক বেকার হয়ে পড়েছে। হাতিয়ার ভূমিহীনদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার
প্রায় অর্ধেক। এসব কারণে কেউ কেউ হাতিয়া ছেড়ে সদর উপজেলা চরমজিদ,
চরমহিউদ্দিন, নিঝুমদ্বীপসহ বিভিন্ন চরে আশ্রয় নিচ্ছে।
হাতিয়া
নদী ভাঙনের জন্য প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট দুই কারণই দায়ী।১৯৬৪ সালে
ভবানীগঞ্জ চর লরেন্সে একটি ক্রস ড্যাম এবং ১৯৬৭ সালে আটকপালিয়া মান্নান
নগরে আরেকটি ক্রস ড্যাম নির্মাণ করা হয়। এই দুটি ক্রস ড্যাম নির্মাণের পর
হাতিয়ার নদী ভাঙন বহুগুণে বেড়ে যায়। এছাড়া সন্দ্বীপ চ্যানেল, হাতিয়া
চ্যানেল, কুতুবদিয়া চ্যানেল এবং নাফ নদীর জোয়ারের পানি হাতিয়া ও তত্সংলগ্ন
উপকূলীয় এলাকায় বেশি ক্রিয়াশীল। প্রবল স্রোতের তোড়ে হাতিয়ার মূল ভূ-খণ্ড
প্রতিনিয়ত মেঘনা নদীতে বিলীন হচ্ছে।