গার্মেন্টসের গলার কাঁটা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স

S M Ashraful Azom
গার্মেন্টস শিল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে নিয়োজিত দুটি প্রতিষ্ঠান অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স কারখানা মালিকদের জন্য এখন গলার কাঁটা। মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেছেন, তাদেরকে আমরা সাহায্যের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কিন্তু অবস্থার প্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে তারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
 
রানা প্লাজাসহ নানা দুর্ঘটনার পর ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকার ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা মান খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর আমেরিকা অঞ্চলের জন্য অ্যাকর্ড এবং ইউরোপের জন্য অ্যালায়েন্সকে দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে এ সংস্থা দুটি দেশের তিনশ কারখানার নিরাপত্তা মান পরীক্ষা করে। কিন্তু পোশাক শিল্প মালিকরা অভিযোগ করে বলেছেন, সংস্থা দুটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে মালিকদের হয়রানি করছে।
 
পোশাক কারখানার একজন মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, কারখানা ভবনগুলোর স্ট্রাকচারাল ডিজাইন ঠিক আছে কিনা তা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার পরীক্ষা করতে পারেন। কিন্তু অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স তাদের দিয়ে পরীক্ষা না করিয়ে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পরীক্ষা করাচ্ছে। যার ফলে ওই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নানা ধরনের ত্রুটিপূর্ণ রিপোর্ট দিচ্ছে। কোন কোন মালিক বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করালেও তা তারা মানছে না’।
 
এদিকে যেসব মালিক দক্ষিণ আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি করে তাদের কারখানাগুলো অ্যাকর্ড পরীক্ষা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। আর ইউরোপে যারা পোশাক রপ্তানি করে তাদের কারখানা অ্যালায়েন্স-এর পরীক্ষা করার কথা। কিন্তু যেসব মালিক ওই দুই অঞ্চলে রপ্তানি করে তাদের বেলায় ঘটেছে বিপত্তি। শুরুতে কথা ছিলো এই কারখানাগুলো প্রথমে যে সংস্থা পরীক্ষা করবে অপর সংস্থাটি সে রিপোর্ট মেনে নেবে। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না।
 
মালিকরা অভিযোগ করেছেন যে, একটি ভবন হয়তো অ্যাকর্ড পরীক্ষা করে ইতিবাচক রিপোর্ট দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে অ্যালায়েন্স পরীক্ষা করে বলেছে ওই ভবন ত্রুটিপূর্ণ। এতে করে সমস্যা বেড়েছে। রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত দেশের বড় কারখানা ড্রাগন স্যুয়েটার নিয়ে এমন রিপোর্ট এসেছে।
 
মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি এবিএম সামছুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়াররা পৃথিবীর নানা উন্নত দেশে কাজ করে তাদের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের রিপোর্ট গ্রহণ করা হচ্ছে না, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের এ অবস্থার জন্য সরকারের কিছু লোক এবং বিজিএমইএর বর্তমান নেতৃত্ব দায়ী। তাদের দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার জন্য অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স যাচ্ছে তাই করছে।
 
এবিএম সামছুদ্দিন আরো বলেন, রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর ক্রেতারা আমাদের সাথে নানা ধরনের ব্ল্যাকমেইল করেছে। শুরুতে বলা হয়েছিলো কারখানার মান বাড়ানো হলে ক্রেতারা পোশাকের দাম বাড়াবে। কিন্তু এখন অনেক কারখানা মালিক এ খাতে অনেক খরচ করার পর দেখা গেলো ক্রেতারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পোশাকের দাম কমিয়েছে।’
 
অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স ইতোমধ্যে দেশের তিনশ পোশাক কারখানার মান পরীক্ষা করিয়েছে। পরিদর্শন রিপোর্ট অনুযায়ী মালিকরা তাদের কারখানার মান উন্নত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ফলো-আপের নামে তারা এখন বাংলাদেশে অফিস খুলে বসেছেন। পোশাক মালিকরা অভিযোগ করেছেন এখন তারা কিছু নামধারী শ্রমিক নেতার সহযোগিতায় এখানে শ্রমিকদের নানা ধরনের ট্রেনিং দিচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা শ্রমিকদের অধিকারের নামে উস্কে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ মালিকদের।
 
বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখার জন্য ওই দুটি সংস্থা বাংলাদেশে আসলেও এখন তাদের কাজ আরো বিস্তৃত করতে চাইছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এখন মালিক পক্ষ শ্রমিকদের ছাঁটাই করেত পারছে না। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকদিন আগে একটি কারখানা থেকে ছয়জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছিলো। কিন্তু অ্যাকর্ড এর প্রধান রব ওয়েস তাদের ছাঁটাই না করার জন্য কারখানা মালিকদের চাপ দিয়েছেন। তিনি রব ওয়েসকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠন এএফএলসিআইওর এজেন্ট হিসেবে অভিহিত করেন।
 
এসব বিষয়ে অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। দুটি সংস্থার দুজন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা জানান, এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা নিষেধ আছে।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top