রমজানে সুস্থ থাকুন

S M Ashraful Azom
এই মাসটি মূলত প্রার্থনা এবং সংযমের মাস।পরিবারিক এবং সামাজিক জীবনে পারস্পরিক সোহার্দ্য এবং একতা বৃদ্ধির সময় হলো মাহে রমজান। তবে রমজানে রোজা রাখতে গিয়ে অনেকেই নানা সমস্যায় পড়েন। প্রকৃতপক্ষে ভোররাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকার জন্য মানসিক এবং শারীরিক শক্তির প্রয়োজন আছে বৈকি। সঠিক খাদ্যভাসই পারে রমজানে দেহকে যতটা সম্ভব সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখতে। চলুন জেনে নেই এই রোজার মাসটি সুস্থভাবে কাটানোর কিছু উপায়।
 
সেহরিতে প্রোটিন গ্রহন করুন
রোজার সময় অনেকেই সাধের ঘুম ছেড়ে সেহরি খেতে উঠতে চাননা। রোজার মাসে এই ধরনের কুম্ভকর্ণের মত ঘুম আপনার সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। কারণ রোজার সময় সেহরি না করলে উপোস থাকার সময়কাল বেড়ে যায়। এই সময় শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তির জন্য একমাত্র ভরসা হল রাতের খাবার যা সকালের মধ্যেই হজম হয়ে যায়। এর ফলে শরীরে পানিশূন্যতা এবং ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। তাই এই রমজানজুড়ে সেহরিতে ঠিকমত খাওয়া উচিত।
 
তবে যা ইচ্ছে না খেয়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহন করা উচিত। এক্ষেত্রে বেশি করে ডিম, মটরশুঁটি বা মাছের মত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহন করা শ্রেয় কেননা প্রোটিন পরিপাকে কার্বোহাইড্রেটের চেয়েও বেশি সময় লাগে বলে সহজে ক্ষুধা লাগেনা।
 
ইফতারে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন
আমাদের দেশে রমজান মাসে ইফতারে বিশাল ভোজসভার আয়োজন লক্ষ্য করা যায় যা মোটেই উচিত নয়।ইফতারে সঠিক পুষ্টি এবং খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ খাবার বাছাই করা উচিত।তাই ইফতারে পেঁয়াজু, বেগুনি ইত্যাদি ভাজাপোড়া খাবারের বদলে বেশি করে পানি, ফলমূল, সালাদ ইত্যাদি সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। মনে রাখতে হবে অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার নয়, পুষ্টিকর খাবার অনেক বেশি দরকারি।
 
বেশি করে তরল পান করুন
বেশিক্ষণ উপোস থাকলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই ইফতারির সময় অন্যান্য খাবারের সঙ্গে বেশি করে পানি বা তরল গ্রহন করতে হবে। এক্ষেত্রে বেশি করে নারিকেলের পানি পান করা যেতে পারে। নারিকেলের পানিতে ভিটামিন, ইলেক্ট্রোলাইটস এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে যা শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে পারে। এছাড়া জুস বা স্যুপ পান করলেও ভাল ফল পাওয়া যাবে।
 
উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহন করুন
লম্বা সময় ধরে না খেয়ে থাকার ফলে স্বভাবতই ইফতারের সময় সবাই খুব ক্ষুধার্ত থাকেন। তাই এ সময় বেশি করে ভাত বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেতে মন চাইবে। এসব খাবার অল্প সময়ের জন্য আপনার ক্ষুধা নিবারণ করলেও শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারেনা। 
 
এছাড়া বেশি করে ভাত, পাস্তা বা রুটির মত খাবার খেলে পরবর্তীতে পেটে শাক-সবজি, ফলমূল, মাংসের মত পুষ্টিকর খাবারের জায়গা থাকেনা। ফলে ক্ষুধাভাব থেকেই যায়। এর ফলে এই ক্ষুধা কমানোর জন্য অনেকেই জাঙ্ক ফুডে আসক্ত হয়ে পড়েন যা পরবর্তীতে স্থূলতার মত সমস্যা সৃষ্টি করে।
 
এক্ষেত্রে প্লেটের অর্ধেকটায় শাক-সবজি, চার ভাগের এক ভাগজুড়ে ভাত, আলু বা রুটির মত স্টার্চ জাতীয় খাবার এবং বাকি ভাগে মাছ, মাংস বা ডিম নেওয়া যেতে পারে।
 
লবণাক্ত খাবারকে না বলুন
এই রোজায় চিপস কিংবা নোনতা বাদাম খাওয়ার অভ্যেস বাদ দিন। অতিরিক্ত লবণ খেলে দ্রুত তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়তে পারেন। মূলত শরীরকে সুস্থ রাখার জন্যই এই তৃষ্ণাভাব জাগে। অতিরিক্ত তৃষ্ণাভাবের ফলে রোজা রাখতে সমস্যা হতে পারে। তাই এই রমজানে লবণাক্ত খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকুন।
 
তৃষ্ণা না পেলেও পানি পান করুন
সাধারণত দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিলে তৃষ্ণার ভাব জাগে। তবে রমজান মাসে সেহরি বা ইফতারে তৃষ্ণা না পেলেও বেশি করে পানি পান করুন। এর ফলে রোজার দিনে শরীর দ্রুত পানিশূণ্য হবেনা। এক্ষেত্রে ইফতার এবং সেহরির সময় মিলিয়ে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করা উচিত।
 
সঠিক খাবার বাছাই করুন
ইফতারের পরে অনেকেই বেশ ক্লান্ত অনুভব করেন। এক্ষেত্রে ইফতারিতে সঠিক খাদ্য বাছাই করে পরবর্তী সময়ে শরীরকে সবল এবং কর্মক্ষম রাখা যায়। আমরা সাধারণত বেশিক্ষন উপোস থাকলে সামনে যা পাই তাই খেয়ে ফেলি যা মোটেও উচিত নয়। ইফতারে মূলত সুষম পুষ্টিযুক্ত খাবার বেঁছে নিতে হবে।
 
ক্যাফেইন নেওয়া কমিয়ে দিন
অনেকেই জেগে থাকার জন্য সেহরির সময় কফি পান করতে পছন্দ করেন।কিন্তু রোজার সময় ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য না গ্রহন করাই ভাল। কারণ ক্যাফেইন শরীরে মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। ঘন ঘন জলবিয়োগের ফলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে।
 
আসছে রোজায় উপরের বিষয়গগুলো মাথায় রেখে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম এবং হালকা ব্যায়াম করতে পারলে পুরো মাস জুরেই আপনি থাকবেন সুস্থ, সবল এবং নিশ্চিন্ত।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top