বৈদেশিক মুদ্রা
আয়ের অন্যতম হিমায়িত চিংড়ি শিল্প দুঃসময় পার করছে। আশির দশকের লাভজনক এ
শিল্পটি আজ লোকসানি শিল্পে রূপ নিয়েছে। ইতিপূর্বে গড়ে ওঠা দেশের ৭৮টি চিংড়ি
প্রক্রিয়াকরণ কারখানার মধ্যে ৫০টি বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে মাত্র ২৮টি
চিংড়ি (সাদামাছসহ) কোম্পানি চালু রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা অঞ্চলের ৫৮টির
মধ্যে ২৪টি এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২০টির মধ্যে মাত্র ৪টি কোম্পানি চালু
রয়েছে। বিদেশি বাজার ধরে রাখতে না পারলে শিল্পটি আরও নাজুক অবস্থায় পড়তে
পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এ
প্রসঙ্গে কোম্পানি মালিকরা জানান, চিংড়ি গ্রহণের সময় তাতে পুশ দেয়া কি না
তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। এজন্য বাইরে থেকে যখন চিংড়িতে পুশ দেয়া হয়
তখনই রোধ করতে হবে। আর এজন্য মত্স্য অধিদপ্তর ও প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা
দরকার। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস
প্রেসিডেন্ট শেখ মো. আব্দুল বাকী বলেন, একসময় চিংড়ি শিল্পের সাথে জড়িতদের
মূল্যায়ন করা হতো। এখনও কিছুটা হচ্ছে। কিন্তু চিংড়ি শিল্পের যে দুরবস্থা
তাতে অদূর ভবিষ্যতে তাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ হয়তো আর থাকবে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে খুলনায় যে ২৪টি চিংড়ি কারখানা চালু আছে আগামী এক বছরের
মাথায় তা হয়তো ৮/১০টিতে নেমে আসতে পারে। তাই চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশকারীদের
বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি চিংড়ি ঘেরগুলোকে মানসম্মত করাসহ
বিদেশি বাজারের প্রসার ঘটানো দরকার। খুলনা মত্স্য পরিদর্শন ও মান
নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাশেদ বলেন, মূলত কোম্পানিগুলোর
কমিশন এজেন্টের কারণেই মাছের বাজার নষ্ট হচ্ছে। কমিশন এজেন্ট প্রথা বাতিল
করা হলে প্রান্তিক চাষিরাও উপকৃত হবে। সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে
কোম্পানিগুলো চিংড়ি কিনলে তাতে অপদ্রব্য পুশের ভয় থাকবে না। বিশ্ব বাজারে
দাম কমলেও চিংড়ি শিল্পের ভবিষ্যত্ নিয়ে তিনি আশাবাদী। এ প্রসঙ্গে তিনি
বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর অন্তত ৭০ কোটি টাকার চিংড়ি বেশি রফতানি হয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এস. হুমায়ন
কবীর বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৫/২০ বছরের মাথায় চিংড়ি লাভজনক শিল্প হিসাবে
পরিচিতি পায়। লাভজনক শিল্প দেখে তত্কালীন সময়ে দেশে ১৬৮টি চিংড়ি
প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে ওঠে। কিন্তু ধীরে ধীরে সে অবস্থা হ্রাস পেতে থাকে।
বিগত তিন বছর আগেও চিংড়ি শিল্প ছিল দেশের দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী
শিল্প। বর্তমানে দেশে যে কটি চিংড়ি কারখানা রয়েছে অদূর ভবিষ্যতে সেগুলো
থাকবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এজন্য এখনই সরকারি-বেসরকারিভাবে কার্যকর
উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
রফতানি
উন্নয়ন ব্যুরোর সূত্র মতে, দেশের হিমায়িত চিংড়ি রফতানির সিংহভাগ খুলনা
থেকে বিদেশে রফতানি করা হয়। ২০০১ সাল থেকে সাদামাছসহ চিংড়ি রফতানি বাড়লেও
হঠাত্ করে ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে তা হ্রাস পেতে থাকে। তবে ডলারের মূল্য
বৃদ্ধিসহ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কিছুটা কাটিয়ে ওঠায় ২০১০-১১ অর্থবছরে আবার
ঘুরে দাঁড়ায় দেশের চিংড়ি শিল্প। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে শিল্পটি
হুমকির মুখে পড়েছে। আর এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে ঘৃণ্য ‘পুশ’ প্রথাকে।
নগরীর
পশ্চিম রূপসার নতুন বাজার এবং পূর্ব রূপসা এলাকার কিছুসংখ্যক অসাধু মাছ
ব্যবসায়ী চিংড়ির শরীরে পানি ও জেলি পুশ করে ওজন বাড়িয়ে তা স্থানীয় মাছ
কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে। পানি ও জেলি পুশ করা এই চিংড়ি বিশ্ব বাজারে
রফতানি করা হলে আমদানিকারকরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। এতে আর্থিকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হন চিংড়ি রফতানিকারকরা। পুশকারীদের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে
প্রশাসনিকভাবে অভিযান চালানো হলে কিছুদিনের জন্য এটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু
যখনই অভিযানে শিথিলতা দেখা দেয় তখনই পুশকারীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
এছাড়া পুশ প্রথার জন্য কিছু মাছ কোম্পানি মালিকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিটি কোম্পানিতে চিংড়ি রিসিভ (গ্রহণ) করার সময় উপস্থিত রিসিভ ইনচার্জ
সচেষ্ট হলেই পুশবিহীন চিংড়ি রিসিভ করা সম্ভব। কিন্তু ওই সব রিসিভ ইনচার্জরা
জেনেশুনেই পুশ দেয়া চিংড়ি গ্রহণ করে থাকেন। তাছাড়া পুশ দেয়া চিংড়ি
কোম্পানিতে যাবার সাথে সাথে যদি তা আটক করে মত্স্য বিভাগের মাধ্যমে
তাত্ক্ষণিকভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয় তাহলেও এ অনৈতিক ব্যবসা অনেকটাই ঠেকানো
সম্ভব।