পুলিশসহ নিহত ১৩, মোদীর জরুরি বৈঠক সামরিক পোশাকে জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত পাঞ্জাব * ‘এসেছিল পাকিস্তান থেকে’ * ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ ঘণ্টা অভিযান

S M Ashraful Azom
ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের পাকিস্তান সীমান্তবর্তী গুরুদাসপুর জেলায় গতকাল সোমবার সশস্ত্র জঙ্গি হামলায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয়েছে ৮ জন। পরে সেনাবাহিনীর ১২ ঘন্টার অভিযানে তিন জঙ্গিও নিহত হয়। সামরিক পোশাকে তিন জঙ্গি মিলে একের পর এক হামলা চালায়।  হামলার পর গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এই হামলার জন্য সন্দেহের তীর ছুঁড়ছেন পাকিস্তানের দিকে। খবর এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার পত্রিকার।
 
গতকাল স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৫ টায় সেনা পোশাকে আসা তিন জঙ্গি হামলা শুরু করে। তিন জন সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি নিহত হয়েছেন পাঁচ পুলিশ কর্মীও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয় সেনাবাহিনী। এমনকি বিএসএফের পাশাপাশি ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) কর্মীদেরও ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। গোটা রাজ্য তো বটেই প্রতিবেশি রাজ্য জম্মু-কাশ্মীরেও চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘটনার জেরে উত্তাল হয় সংসদও। জঙ্গি হামলা প্রসঙ্গে লোকসভায় মঙ্গলবার বিবৃতি দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এ দিন সকালে তিনি জানান, এই ঘটনার জেরে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
 
গতকাল সকালেই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই হামলার পিছনে লস্কর ই-তৈয়বা বা জয়স-ই-মোহম্মদের হাত আছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। রাজনাথ বলেন, ‘পাকিস্তান বিষয়ে আমরা শান্তি চাই। কিন্তু দেশের সম্মান বিসর্জন দিয়ে নয়। আমরা প্রথমে হামলা চালাই না। কিন্তু কেউ আমাদের উপর আক্রমণ চালালে হাত গুটিয়ে বসে থাকব না। যোগ্য জবাব দেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে যখন ভাল সম্পর্ক গড়তে চাইছি, তখন কেন বারবার সীমান্তে হামলা চালানো হচ্ছে বুঝতে পারছি না!’ এই হামলাকে অত্যন্ত গুরুতর জঙ্গি হামলা আখ্যা দিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। গতকাল সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলির উচ্চপদস্থ কর্তারা বৈঠকে বসেন। ঘটনার সূত্রপাত সোমবার ভোরে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে কয়েকজন জঙ্গি। জম্মু-কাশ্মীর ঘেষা পাঞ্জাবের সীমান্ত শহর গুরুদাসপুর। পাঠানকোট থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে গুরুদাসপুর জেলার তৃতীয় বৃহত্তম শহর দীননগর।
 
জঙ্গিরা প্রথমে একটি টেম্পোকে থামানোর চেষ্টা করে। চালকের উপর গুলি চালায় তারা। কিন্তু টেম্পো-চালক কোনোভাবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এরপর রাস্তার ধারের একটি খাবারের দোকানে হামলা চালায় তারা। সেখানকার এক কর্মী গুলিতে নিহত হন। এরপর গুলি চালানো হয় অমৃতসর-পাঠানকোট জাতীয় সড়কের একটি চলন্ত বাসে। ঘটনায় ৪ জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। এরপর ওই একই রাস্তায় একটি মারুতি-৮০০ তে গুলি চালায় জঙ্গিরা। গুলিতে আহত হন চালক। সেই মারুতি নিয়েই তারা দীননগর থানার কাছে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা চালায়। সেখানে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে দুইজন পরে মারা যান। তবে কোনো কোনো গণমাধ্যম জানিয়েছে, হাসপাতালে হামলা চালানো হয়নি। মূলত থানার কাছে ওই হাসপাতাল অবস্থিত। থানায় হামলা করার সময় জঙ্গিদের গুলি হাসপাতালে রোগীদের শরীরে লাগে।
 
এরপরও থামেনি জঙ্গিরা। ওই মারুতি নিয়েই তারা পৌঁছায় দীননগর থানায়। সেখানে জঙ্গিরা নির্বিচারে গুলি চালায়। এমনকি পুলিশ কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা থানা চত্বরের যে ভবনে থাকেন, সেটি লক্ষ্য করেও গ্রেনেড ছোড়ে তারা। ঘটনায় ৫ জন পুলিশ কর্মী নিহত হন।
 
শুধু গোলাগুলি নয়, জঙ্গিরা যে বেশ আঁঁটঘাঁট বেধে এসেছিল তার প্রমাণও মিলেছে। তাদের হাতে ছিল একে-৪৭ রাইফেল। এছাড়া অমৃতসর থেকে পাঠানপুর-মুখী রেললাইন থেকে উদ্ধার করা হয় পাঁচটি তাজা বোমা। ওই রুটে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।
 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জঙ্গি হামলার পর সংসদভবন চত্বরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন রাজনাথ সিংহ। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়। দু’টি হেলিকপ্টার-সহ কুইক রিঅ্যাকশন টিম, বোমা স্কোয়াড, বিশাল পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রিকর বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। সেনার তরফে সম্ভাব্য সমস্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’ এ ধরনের হামলার ঘটনা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রায়ই ঘটলেও, পাঞ্জাবে এমন নজির বেশ বিরল।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top