দলের শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির চূড়ান্ত রায়ের পর থেকে নিশ্চুপ বিএনপি। সারা দিনে কোনো শীর্ষ নেতার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া। রায় নিয়ে কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। কয়েকজনের সঙ্গে আলাপে বোঝা যাচ্ছে, একদিকে একাত্তরের মানবতাবিরোধীর মতো স্পর্শকাতর বিষয়, অন্যদিকে দলের শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড, এ অবস্থায় প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে উভয় সংকটে পড়েছে দলটি। তাই চুপ থাকার কৌশলই শ্রেয় মনে করছেন তারা। তবে দলের একটি সূত্র বলছে, বিষয়টি বিব্রতকর হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর সম্ভাবনা আছে। আর এ জন্য দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশনার অপেক্ষা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এদিকে বৃহস্পতিবার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিনের অনুষ্ঠান বাতিল করেছে দলটি। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা অভিযুক্ত হলেও বিএনপির ছিলেন মাত্র দুজন। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় দেয়ার কিছুদিন পর তিনি মারা যান। আর অন্যজন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়ার পর তিনি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। সেখানে ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকলে তিনি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। সেটিও আজ নাকচ হয়ে গেলে তার সামনে এখন আছে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ। আবদুল আলীমসহ রাজনৈতিক মিত্রদের বিচার নিয়ে বরাবরই নিশ্চুপ ছিল বিএনপি। তবে সাকার গ্রেপ্তার ও বিচার নিয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে কখনো কখনো বক্তব্য এলেও বুধবার চূড়ান্ত রায় হওয়ার পর আর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার কাছে টেলিফোনে প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করলেও কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। এদিকে এমন সময় সাকার চূড়ান্ত রায় হলো যখন দলের চেয়ারপারসন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কারাগারে। দলের অন্য নেতাদের অনেকে কার্যত নিষ্ক্রিয়। এই অবস্থায় রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেয়া-না দেয়ার কৌশলও ঠিক করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে দলটিকে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপনের বক্তব্য ছিল, “সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রিভিউ করেছেন। আমরা আশা করি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।” কিন্তু বুধবার ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় হওয়ার পর কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি রিপন। বুধবার সন্ধ্যার দিকে দলটির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নেতা বলেন, “অপেক্ষা করুন। সবকিছুর প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে দিতে হয় না।” আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া বা কর্মসূচি দেয়ার সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নে ওই নেতা বলেন, “সিনিয়র নেতারা এ নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে কিছু না কিছু তো দেখতে পারবেন। কারণ এটা তো ন্যায়বিচার হয়নি। বিচার-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল না।” 

