শান্তি চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সরকারকে বাধ্য করতে আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বাত্মক হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছেন সন্তু লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির দেড়যুগ পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বুধবার দুপুরে রাঙ্গামাটিতে জনসংহতি সমিতির গণসমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন। সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা হরতাল-অবরোধ ছাড়াও অফিস-আদালত বর্জন, ভূমি অধিগ্রহণ ও পর্যটন প্রতিরোধসহ ১০ দফা আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণা করেন ।
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, সমাবেশে সন্তু লারমা অভিযোগ করেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের নামে গত আঠারো বছরে কেবল টালবাহানাই হয়েছে। জুম্ম জনগণ মুক্তি লাভ করেনি। সরকার যে সমস্যার জন্ম দিয়েছে তাদেরই তা সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, জুম্ম জনগণ ভূমি হারাচ্ছে। অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার, সাংস্কৃতিক অধিকার সংরক্ষণ সমস্যা রয়ে গেছে। পাহাড়কে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্র এগিয়ে নিতে চলছে সামরিকীকরণ। জুম্ম জনগণ তাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
রাঙ্গামাটির জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই গণসমাবেশে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে হাজার হাজার পাহাড়ি নারী-পুরুষ যোগ দেন। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে সন্তু লারমা বলেন, সমস্যার সমাধান না করে শান্তি চুক্তিকে তিনি গলা টিপে মেরে ফেলেছেন। জেলা পরিষদ দলীয়করণ করে চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, রাজনীতিক শাহ আলম, নাগরিক কমিটির নেতা গৌতম দেওয়ান, আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র নাথ সরেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে একটি শোভাযাত্রা শহরের নানা সড়ক ঘুরে জনসংহতি কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা লোকাল
পলিটিক্স :ড. গওহর রিজভী
লোকাল পলিটিক্সের কারণে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড.গওহর রিজভী। রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে চুক্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য বলেন। দীপংকর তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় নারী সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু।
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের দাবিতে বিকালে নগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সমাজ বিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, ভূমি সমস্যা সমাধান করে শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
চুক্তি বাস্তবায়নে রোডম্যাপ প্রণয়নের দাবি
ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে ‘পার্বত্য চটগ্রাম চুক্তি: একটি জাতীয় অঙ্গীকার’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা বলেন, ‘যখন কোন সরকার চুক্তি করে তা বাস্তবায়ন করাও সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। সরকার চুক্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তাদের অর্জনের কথা বলেছে, কিন্তু এ অর্জন সেদিন হবে যখন পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হবে।’
জাতীয় নাগরিক উদ্যোগ আয়োজিত এই আলোচনা সভায় বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন, জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার এমপি প্রমুখ ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং সরকারের মধ্যে শান্তি চুক্তিটি সম্পাদিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে শোভাযাত্রা, সমাবেশ, প্রতিবাদী মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।


খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।