তেলের জন্য যুদ্ধ

S M Ashraful Azom
0

ইসলামিক স্টেটের কাছ থেকে তেল পাওয়ার স্বার্থেই তুরস্ক গুলি করে রুশ বিমান ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করছে রাশিয়া। কথিত ইসলামিক স্টেট থেকে বছরে শত কোটি ডলারের তেল তুরস্কে যায় বলে অভিযোগ। সেই তেলবাহী ট্রাক বহরের ওপর বিমান হামলা চালাচ্ছিলো রুশ জঙ্গি বিমানগুলো। উদ্দেশ্য ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের অর্থের অন্যতম উেস আঘাত হানা। যদিও তুরস্ক এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলছে, ইসলামিক স্টেটের কাছ থেকে তেল কেনার অভিযোগ সত্য নয়। তবে এই অভিযোগকে ঘিরে বিভিন্ন যুদ্ধে তেলের ভূমিকা আবারো আলোচনায় আসছে। গতকাল শুক্রবার বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে সেরকম পাঁচটি যুদ্ধের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
 
সিরিয়া এবং ইরাক :২০১১ থেকে বর্তমান
 
ইরাক এবং সিরিয়ায় কথিত ইসলামিক স্টেটকে ঘিরে যুদ্ধে তেলের যে বিরাট ভূমিকা আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কথিত ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের আয়ের বড় উত্স তেল সম্পদ। তারা সিরিয়া তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলের বেশিরভাগটাই নিয়ন্ত্রণ করছে। ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেট প্রতিদিন দুই মিলিয়ন ডলারের তেল বিক্রি করতো। ইরাকের মসুলের কাছে অনেক তেলকূপও তাদের দখলে। এই তেল নাকি তারা চোরাচালানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পক্ষের কাছে বিক্রি করে। চোরাচালানিরা আবার এই তেল বিক্রি করে সিরিয়ার আসাদ সরকার থেকে শুরু করে  প্রতিবেশী তুরস্কের কাছে। রাশিয়া আসলে তাদের অভিযোগে এই বিষয়টির দিকেই ইঙ্গিত করেছে। বিবিসির সংবাদদাতা ফ্রাংক গার্ডনার বলছেন, তেল নিয়ে এই ব্যবসা যে চলছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এতে তুরস্কের সরকার জড়িত থাকার কোন প্রমাণ এখনো নেই।
 
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধ
 
২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যখন ইরাক যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছিলো, তখন তত্কালীন ইরাকি উপ-প্রধানমন্ত্রী তারেক আজিজ বলেছিলেন, ইরাকের তেলের লোভেই পশ্চিমা শক্তি এই যুদ্ধে যাচ্ছে। আরব বিশ্বে সে সময় এই ধারণাটাই আসলে বদ্ধমূল ছিল। ইরাকের রয়েছে বিপুল তেলসম্পদ। বিশেষজ্ঞরা একমত যে, তেলের স্বার্থ ঐ যুদ্ধের অন্যতম কারণ, তবে একমাত্র কারণ নয়। ইকনমিস্ট ম্যাগাজিন, যাদের কোনভাবেই সাদ্দাম হোসেনের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন বলা চলে না, তারাও এক নিবন্ধে এ কথা স্বীকার করেছে। ইকনমিস্টের ঐ নিবন্ধে বলা হয়, ইরাকের বিপুল তেল সম্পদ উন্মুক্ত করা এই অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য ছিল। অন্যদিকে সাদ্দাম হোসেন যেভাবে এই তেলসম্পদকে ইরাকের প্রভাব বৃদ্ধির কাজে লাগাচ্ছিলেন, সেটা বন্ধ করাও পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্দেশ্য ছিল।
 
১৯৯১ সালের প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ
 
প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের আগে যেসব যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হতো, সেগুলোতে একটা জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল ‘তেলের জন্য রক্ত নয়’। এই যুদ্ধে তেলের স্বার্থ যে সবচেয়ে বড় ছিল তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ইরাক মূলত এই তেল সম্পদের লোভেই প্রতিবেশী কুয়েত দখল করে নেয়। সাদ্দাম হোসেন অবশ্য কুয়েতকে তাদের একটি প্রদেশ হিসেবে দাবি করে। আর যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা যে কুয়েতকে দখলমুক্ত করতে চেয়েছে, সেটাও তেলের স্বার্থেই। তারা চেয়েছে কুয়েতের বিপুল তেলের সরবরাহ যেন তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
 
১৯৫৩ সালের ইরান অভ্যুত্থান
 
১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন মিলে ইরানে যে অভ্যুত্থান ঘটায়, তার পেছনে ছিল তেলের স্বার্থ। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেগের সরকারকে তারা যে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় তার কারণ তিনি ইরানে ব্রিটিশ মালিকানাধীন তেল কোম্পানিকে জাতীয়করণ করেছিলেন। পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে যে ইরানে ব্যাপক সন্দেহ তৈরি হয়, তার সূত্রপাত এখান থেকেই। এর পরিণতিতেই কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হয়, ক্ষমতাচ্যুত হন রেজা শাহ পাহলভি।
 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে বর্ণনা করা হয়। কিন্তু এই যুদ্ধেও তেলের ভূমিকা ছিল। জাপান যখন চীনে অভিযান চালায়, তার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র জাপানে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তখন এর পাল্টা জবাব হিসেবে জাপান আক্রমণ চালায় যুক্তরাষ্ট্রের পার্ল হারবারে। জাপানের অর্থনীতি পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল আমদানি করা তেলের ওপর। অন্যদিকে ইউরোপীয় রণক্ষেত্রে সে সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ, তেল সমৃদ্ধ আজারবাইজান দখল করা ছিল জার্মানদের লক্ষ্য।
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top