
বুদ্ধিজীবী দিবসতো গত ৪৪ বছর ফিরে ফিরে আসছে। গত ৪৪ বছর অধিকাংশ সময় এই দিনটি আমার শিক্ষকদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছি। আমাদের সঙ্গে আমাদের শিক্ষকদের একটি গাঢ় সম্পর্ক ছিল। কেননা তখন ছাত্রসংখ্যা ছিল কম, মোটামুটি অনেককেই তারা চিনতেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন আবিষ্কার করি, তাদের অনেকেই শহীদ হয়ে গেছেন তখন মনে হয়েছিল নিকট আত্মীয়কে হারিয়েছি। আমাদের জেনারেশন তাদের শিক্ষকদের ভোলেনি।
আমরা যে দীর্ঘদিন ধরে ওই খুনিদের বিচার চেয়েছি তার একটি কারণ আমাদের শিক্ষকদের হত্যা করা। আমি যখন এসব বিষয়ে লেখালেখি করেছিলাম এবং লিখেছিলাম, নিজামী এসব হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তখন জামায়াতে ইসলামী থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল। সেই বিবৃতিতে লেখা ছিল, নিজামী মুনতাসীর মামুনের শিক্ষকদের হত্যার সাথে জড়িত নন। এই সব ব্যাপারে তারা নীরবতা পালন করলেও ওই একটিবার তারা বিবৃতি দিয়েছিল। অবশ্য পরে মুজাহিদতো বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। আমরা ভাবিনি যে, জীবিতকালে এই সব খুনির বিচার দেখে যেতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে সেটি সম্ভব হয়েছে।
আজ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস অন্যরকম অর্থ বহন করছে। কেননা এ বছরই বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত এবং নির্দেশদাতা মুজাহিদের ফাঁসি হয়েছে। নিজামীর দণ্ড বিষয়ে খুব শীঘ্রই রায় পাওয়া যাবে এবং আশা করি সেই দণ্ড বহাল থাকবে। কারণ আল বদরের ডেপুটির দণ্ড যদি বহাল থাকে তাহলে আল বদরের প্রধানের দণ্ড বহাল না রাখার কোনো কারণ নেই। এতে প্রমাণিত হলো, যা ঐতিহাসিক সত্য যে, আলবদররা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল নিজামী এবং মুজাহিদের নির্দেশে। তাদের দণ্ড যে কার্যকর হচ্ছে সেটাতে আমি সন্তুষ্ট; কিন্তু মনের জ্বালা মিটে না।
কারণ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার আগে তাদের ওপর যে নির্মম অত্যাচার চালানো হয়েছিল তা থেকে তো তারা রেহাই পেয়ে গেছে। এদের কারণে তাদের পরিবারগুলো ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অপমান-অবমাননা সয়েছে, দুঃখ-অভাবে দিন কাটিয়েছে। অন্যদিকে তারা সারা জীবন ক্ষমতায় থেকেছে। বিত্ত-বৈভব করেছে। তাদের উত্তরাধিকারীরা বিত্ত-বৈভবের মধ্যে বসবাস করবে; কিন্তু শহীদ পরিবারের সন্তানরা তা থেকে বঞ্চিত।
সেই জন্য আমি মনে করি, ১৯৭১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত যে সম্পদ তারা অর্জন করেছে তা বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবারের মধ্যে বণ্টন করা হোক। তাহলে হয়তো মনের ক্ষোভ ক্ষাণিকটা লাঘব হবে। তবু সান্ত্বনা পাই এই ভেবে যে, জীবিতকালে তাদের বিচার ও দণ্ড দেখে যেতে পারলাম। আমাদের সঙ্গে যারা সুদীর্ঘকাল আন্দোলন করেছেন; কিন্তু এখন প্রয়াত তারা তো এই বিচার দেখে যেতে পারলেন না। এই লেখার মধ্য দিয়ে তাদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
আমাদের বুদ্ধিজীবীরা একটি আদর্শ ধারণের জন্য শহীদ হয়েছেন। আজকে আমরা যদি এ খুনিদের এবং তাদের সমর্থকদের রাজনীতি করার সুযোগ দিই গণতন্ত্রের নামে তাহলে সেই আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হয় না। আমাদের এ লড়াইটা এখন হবে সেই খুনিদের রাজনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে নেয়া এবং বাংলাদেশ যে মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই নীতিগুলো বাস্তবায়িত করা।

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।