পুলিশের কাজে ক্ষুব্ধ ইসি

S M Ashraful Azom
0

পৌরসভা নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায় থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার সংক্রান্ত অসংখ্য অভিযোগ এসেছে কমিশনে। দায়িত্বে অবহেলার দায়ে চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেনকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। এছাড়াও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ওসি, হবিগঞ্জ সদরের ওসি এবং নরসিংদীর মাধবদীর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আসায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
 
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক ইত্তেফাককে বলেন, ‘নির্বাচনী কাজে কারোর বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার ও অবহেলার অভিযোগ পেলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চাঁদপুরের ছেংগারচর পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে মতলব উত্তরের ওসিকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
 
ইসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুলিশ নিরপেক্ষ না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। পুলিশ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছে। এজন্য নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে গত ১০ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল ইসি। কিন্তু বাস্তবে পুলিশ নির্বাচনে পরিবেশ সৃষ্টির চেয়ে অনেক স্থানে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তার করছে। এজন্য কমিশন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে। ইতিমধ্যে রিটার্নিং একজন কর্মকর্তা ও ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
 
ইসির বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, মতলব উত্তর থানার ওসি কবির হোসেন এক প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে ছেংগারচর পৌরসভা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী হেকমত আলীর অফিসে গিয়ে একদল যুবক জোর করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল আলম জজকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে বলে স্বাক্ষর নিয়ে যায়। এসময় সেখানে পুলিশ অনুপস্থিত ছিল। পুরো এলাকায় তখন আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বেলা সাড়ে চারটার দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে কমিশনের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে জোর করে নেয়া স্বাক্ষরের কাগজ ফেরত আনে।
 
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় ওসি কোনো ভূমিকা না রাখায় ক্ষুব্ধ হয় ইসি। বিষয়টি নিয়ে গতকাল কমিশন সভায় আলোচনার পরে ওসি কবির হোসেনকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। আজ এ সংক্রান্ত চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
 
এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে চাঁদপুরের ছেংগারচর পৌরসভায় বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদিন খোকনের মনোনয়ন প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এখানে প্রাথমিকভাবে পুলিশ কোনো ভূমিকা রাখেনি। পরে একজন নির্বাচন কমিশনারের নির্দেশে ওই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হয়। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত রবিবার প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। গতকাল বিএনপির প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়।
 
এদিকে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার ওসি মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে একযোগে অভিযোগ জমা দিয়েছেন ওই পৌরসভার বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীরা। এই অভিযোগের বিষয়ে জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। জেলার পুলিশ কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, এর আগেও ওই ওসির বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগের বিষয় পুলিশ প্রশাসন থেকেই বিভাগীয় তদন্ত চলমান রয়েছে। কমিশন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নথি প্রস্তুত করা হয়েছে।
 
এছাড়া নরসিংদীর জেলার মাধবদীর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহ আলমের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানোর অভিযোগকে গুরুত্বসহকারে নেয়া হয়েছে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া হবিগঞ্জ সদরের ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে কমিশনে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম বলেন, একাধিক ওসিসহ বেশ কয়জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে। কমিশনের বিবেচনার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কমিশনে অনুমোদন হওয়ার পরপরই যাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠানো সম্ভব হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 
 
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের এলাকায় বিশেষ নজরদারি
 
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাচনী এলাকায় যেসব পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে বিশেষ নজরদারি করবে নির্বাচন কমিশন। ইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ওই এলাকায় বেশি বেশি আচরণ বিধি লংঘনের অভিযোগ আসছে। এজন্য কমিশনের নির্দেশে মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট এলাকায় গোপনে নজরদারি করা হচ্ছে।
 
বিএনপির অভিযোগের পর ইসির তদন্ত কমিটি
 
বিএনপির এক প্রার্থীর জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহারে স্বাক্ষর করানো সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে ইসি। গতকাল ইসির জরুরি বৈঠকে তিনটি পৌরসভার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে।
 
ইসিতে এসে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, চাটখিল পৌরসভার মেয়র পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোস্তফা কামালকে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অজ্ঞাত স্থানে তাকে আটকে রেখে জোরপূর্বক মনোনয়ন প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর নেয় সন্ত্রাসীরা। রাত ১০টার দিকে তাকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়া হয়। মনোনয়ন দাখিলের পর থেকেই তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে তাত্ক্ষণিক রিটার্নিং কর্মকর্তাকে টেলিফোনে জানানোর পরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
 
তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় ৫টায় শেষ হলেও এর অনেক পরে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়া কাগজ রিটার্নিং কর্মকর্তা গ্রহণ করেছেন। আইনানুযায়ী প্রার্থী নিজে অথবা লিখিতভাবে অনুমোদিত কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। কিন্তু বিএনপি প্রার্থী নিজে জমা দেননি বা কাউকেই প্রতিনিধি মনোনীত করেননি। তাই তার প্রত্যাহারপত্র গ্রহণ সম্পূর্ণরূপে অবৈধ হয়েছে।
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top