সরকারি জমির কম দাম, সুযোগ নিচ্ছে মুনাফালোভীরা

S M Ashraful Azom
সেবা ডেস্ক:  রাজধানীতে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মূল্য নির্ধারণে বৈষম্য বাড়ছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মূল্য প্রতি বছর বহুগুণ বাড়লেও সেই তুলনায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জমির মূল্য বাড়ছে না। সরকারি জমি সেই আগের মতোই নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ দিচ্ছে রাজউক, পিডব্লিউডি, ঢাকা সিটি করপোরেশন, রেলওয়েসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। ফলে প্রতিবছর সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে নানা পরিচয়ে কমমূল্যে সরকারের কাছ থেকে জমি নিয়ে আবাসন ব্যবসায়ী বা অন্যদের কাছে উচ্চমূল্যে সরকারি জমি বিক্রি করা হচ্ছে। অথবা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বহুতল আবাসিক ভবন তৈরি করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা লুটে নিচ্ছে সুযোগসন্ধানীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও বারিধারায় প্রতি কাঠা জমি সর্বনিম্ন ৪ থেকে ৫ কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রধান প্রধান সড়কের পাশে এক কাঠা জমির মূল্য ৭ কোটি টাকারও অধিক। অথচ এসব এলাকায় প্রতি কাঠা জমির সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১০ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও অজ্ঞাত কারণে এসব এলাকার জমির মূল্য বাড়াতে উত্সাহী হচ্ছে না।
নগরীর অন্যান্য এলাকার সরকারি জমির মূল্যও অপেক্ষাকৃত কম। উত্তরায় প্রতি কাঠা সরকারি জমি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬ লাখ টাকায়। অথচ বেসরকারি পর্যায়ে প্রতি কাঠা জমি বিক্রি হচ্ছে ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকায়। এসব এলাকার জমিও সরকারের কাছ থেকে কমমূল্যে বরাদ্দ নিয়ে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বরাদ্দ গ্রহীতারা আর নিজেরা বাড়ি করার কথা ভাবছেন না। অনেকেই প্লট বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বৈষম্য রোধ করতে সরকারি জমির মূল্য বৃদ্ধি, প্লট হস্তান্তরে অথবা বিক্রিতে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রখ্যাত স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সরকারি জমির মূল্য বৃদ্ধিসহ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা দরকার। সরকারি প্লট গ্রহীতারা প্লট প্রাপ্তির পর তা বিক্রি বা হস্তান্তর করায় সরকারের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। এই প্রবণতা রোধে বিধি-নিষেধ আরোপসহ তিনি নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ২০ বছরেও যে মুনাফা করা যায় না, গুলশান, বনানী বা  বারিধারায় মাত্র ৫, ৭, ১০ কাঠার সরকারি জমি বাগিয়ে নিতে পারলে তা থেকে তিন/চার গুণ বেশি মুনাফা করা যায়। আর এই চক্রটিই রাজউক, ডিসিসি, পিডব্লিউডিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জমির মূল্য বৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, সরকারি ভূমির মূল্য বাড়ছে না এ কথা সঠিক নয়। প্রতিবছরই সরকারি জমি কিংবা প্লট বা ফ্ল্যাটের বিক্রয়মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখেই বাড়ানো হচ্ছে। আবাসন সংকট দূর করতে জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
এদিকে গত বছরের ২২ এপ্রিল নিবন্ধন পরিদপ্তরের এক প্রজ্ঞাপনে পূর্বনির্ধারিত ভূমির মূল্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হলেও তা সরকারি প্লট ক্রয়-বিক্রয়ে কোন ধরনের প্রভাব ফেলেনি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ঢাকা সিটি করপোরেশন, রাজউক, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও রেলওয়েসহ বিভিন্ন সংস্থা আগের মূল্য তালিকা অনুযায়ী জমি ক্রয়-বিক্রয় করছে। তবে এ ব্যাপারে সরকারি জমি, প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রির সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলো ভিন্নমত পোষণ করেছে।
রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ডিএম জয়নাল আবেদীন এ প্রসঙ্গে বলেন, উত্তরায় ইতিপূর্বে ২ লাখ টাকা কাঠায় জমি বরাদ্দ করা হলেও ২০১৫ সালে এসে তা ৬ লাখ টাকা কাঠা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে পূর্বাচলের প্রতি কাঠা জমিতে ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সোয়া ২ লাখ টাকা করে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া গুলশান, বনানী ও বারিধারায়ও ১০ লাখ টাকা করে কাঠা প্রতি জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট নিবন্ধন পরিদপ্তরের আরেক প্রজ্ঞাপনে ভূমির বিক্রয় মূল্য রাজধানীতে চার গুণ বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে গঠিত ভূমির বাজার মূল্য পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশে সরকার এই মূল্য চার গুণের বদলে দ্বিগুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top