সেবা ডেস্ক: লাখো মুসল্লির পদভারে এখন মুখর ইজতেমা প্রাঙ্গণ। টঙ্গীর কহর দরিয়াখ্যাত তুরাগ নদীর তীরে আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আমবয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে বিশ্ব মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসমাবেশ ৫১তম বিশ্ব ইজতেমা। প্রতিবারের মতো এবারও ইজতেমা দুই দফায় অনুষ্ঠিত হবে। ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এই প্রথম দেশের ৩২ জেলাকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিশ্ব ইজেতমার দুই পর্বে শুধু নির্দিষ্ট ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন। এরমধ্যে প্রথম পর্বে ১৬ জেলা এবং দ্বিতীয় পর্বে বাকি ১৬ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। তবে ঢাকা জেলার মুসল্লিরা উভয় পর্বে অংশ নিতে পারবেন। আর যেসব জেলার মুসল্লি এবারের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না তারা আগামী ২০১৭ সালের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান টঙ্গী ইজতেমা মাঠ পরিদর্শন করেছেন। ইতিমধ্যে ইজতেমা উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
গতকাল ইজতেমা মাঠ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এবার পুরনো টয়লেটগুলো সংস্কারের পাশাপাশি আরো ৫শ ১২টি নতুন পাকা টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে আসতে মুসল্লিদের কোনো প্রকার সমস্যা যাতে না হয় সেদিক বিবেচনা করে সেনাবাহিনীর পক্ষে ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে ৬টি পল্টুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে টঙ্গী ডেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল হক ইত্তেফাককে জনান, ইজতেমার ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুত্ সরবরাহের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্নভাবে এখানে বিদ্যুত্ সরবরাহ করা হবে। হঠাত্ কোনো কারণে ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়লে সাথে সাথে যাতে বদল করা যায় তার জন্য স্ব স্ব স্থানে ৫টি ট্রলি ট্রান্সফরমার রাখা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসাবে ৪টি জেনারেটর সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। ডেসকোর প্রায় ২০০ কর্মী এখানে কাজ করবেন বলে তিনি জানান।
এছাড়া ইজতেমা আয়োজক তাবলিগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীরা ছাড়াও ওয়াসা, তিতাসসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলো তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। স্থানীয় ওয়াসা ও তিতাসগ্যাস কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ইজতেমা ময়দানে ১৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। যা থেকে দৈনিক প্রায় ৩ কোটি লিটার সুপেয় পানি মুসল্লিদের মধ্যে সরবরাহ করা যাবে। বিপুল সংখ্যক টয়লেট, গোসল ও ওজুখানা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ওয়াসা কর্তৃপক্ষও তাদের গাড়ির মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে পানি সরবরাহ করবে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইজতেমা ময়দানের বিদেশি মেহমানখানায় ও ইজতেমা আয়োজকদের রান্না বান্নার প্রয়োজনীয় স্থানে গ্যাস সংযোগের কাজ সম্পন্ন করেছেন।
এবারের দুই দফা ইজতেমায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইজতেমা প্রাঙ্গণে নিয়োজিত রয়েছে সাড়ে আট হাজার র্যাব-পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারীও। পুলিশের পাঁচটি ও র্যাবের আটটি টাওয়ার বসানো হয়েছে। পুলিশের ৬০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো ইজতেমা ময়দান পর্যবেক্ষণ করা হবে। টঙ্গীর বাটা গেট এলাকায় করা হয়েছে জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হবে পুরো ইজতেমা ময়দানের আইন-শৃংখলা।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিত্সা সেবা দিতে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের পক্ষে ৪টি মেডিক্যাল টিম, ১৫টি স্যানিটেশন টিম কাজ করবে। এছাড়া মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত করতে ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স ইজতেমা ময়দানে প্রস্তুত থাকবে। ইজতেমা ময়দানে ফায়ার সার্ভিসের ১২০ কর্মীর মোট ছয়টি ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। এবারের ইজতেমায় ১৫ থেকে ২০ হাজার বিদেশি মেহমান অংশ নিচ্ছেন।
প্রথম ধাপে যেসব জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন
এবার ইজতেমায় প্রথম ধাপে অংশ নেয়া জেলা ও তাদের খিত্তা নম্বর হলো- ঢাকা ১ থেকে ৬নং খিত্তা, শেরপুর ৭, নারায়ণগঞ্জ ৮ ও ১১, নীলফামারী ৯, সিরাজগঞ্জ ১০, নাটোর ১২, গাইবান্ধা ১৩, লক্ষ্মীপুর ১৪ ও ১৫, সিলেট ১৬ ও ১৭, চট্টগ্রাম ১৮ ও ১৯, নড়াইল ২০, মাদারীপুর ২১, ভোলা ২২ ও ২৩, মাগুরা ২৪, পটুয়াখালী ২৫, ঝালকাঠি ২৬ এবং পঞ্চগড় খিত্তা ২৭।
দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেবেন আরো ১৬ জেলার মুসল্লিরা
জেলা ও খিত্তাগুলো হলো- ঢাকা খিত্তা ১ থেকে ৭, ঝিনাইদহ ৮, জামালপুর ৯ ও ১১, ফরিদপুর ১০, নেত্রকোনা ১২ ও ১৩, নরসিংদী ১৪ ও ১৫, কুমিল্লা ১৬ ও ১৮, কুড়িগ্রাম ১৭, রাজশাহী ১৯ ও ২০, ফেনী ২১, ঠাকুরগাঁও ২২, সুনামগঞ্জ ২৩, বগুড়া ২৪ ও ২৫, খুলনা ২৬ ও ২৭, চুয়াডাঙ্গা ২৮ এবং পিরোজপুর খিত্তা ২৯।
মুসল্লিদের গাড়ি পার্কিং
মুসল্লিদের সুবিধার্থে গাজীপুর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস কম্পাউন্ড, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের পাশে রাস্তার উভয় পাশ, টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে টিআইসি মাঠ, গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ, চান্দনা চৌরাস্তা হাই স্কুল মাঠ, তেলিপাড়া ট্রাকস্ট্যান্ড এবং নরসিংদী-কালীগঞ্জ হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন টঙ্গীর কে-টু ও নেভী সিগারেট কারখানাসংলগ্ন, আশুলিয়া হয়ে আসা গাড়ি প্রত্যাশা মাঠ ও উত্তরা হয়ে আসা গাড়িগুলো মালেকা বানু উচ্চ বিদ্যালয়, নবাব হাবিবউল্লাহ স্কুল, উত্তরা হাই স্কুল মাঠে ও আশপাশের খোলা স্থানে রাখতে হবে।

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।