আলাইনা হাসানের বাবা

S M Ashraful Azom
সেবা ডেস্ক:  হেলমেটটা খুলে হাতে নিয়েছেন, আরেক হাতে ব্যাট। পায়ে প্যাডজোড়া একটু ঢিলে হয়ে ঝুলছে। নাকে কয়েক বিন্দু ঘাম। দূর থেকে হেটে আসতে থাকা মানুষটিকে দেখে মনে হলো, অনুশীলন নয়, ছোটখাটো যুদ্ধ করে এসেছেন।
একটু এগিয়ে পরিচিত মুখগুলো দেখে সৌজন্যভরা হাসি উপহার দিলেন। এ অবদি সবই স্বাভাবিক চলছিলো। এর মধ্যেই কে একজন জিজ্ঞেস করলেন, 'মেয়ে কেমন আছে?'
এই একটা প্রশ্নে হঠাৎ করেই মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের রং যেনো বদলে গেলো। নাতিশীতোষ্ণ দুপুরটা এক পলকে স্বর্গের মতো স্নিগ্ধ হয়ে উঠলো। মুখটা ভরে উঠলো লক্ষ ওয়াট বাল্বের আলোর মতো উজ্জল হাসিতে। একেবারে অচেনা এক চেহারা নিয়ে থমকে দাড়িয়ে গল্প জুড়ে দিলেন। মেয়ের একটার পর একটা গল্প করে, নানান রসিকতা করে ভেতর থেকে বের করে আনলেন অচেনা এক মানুষকে; একজন সদ্য জন্ম নেওয়া বাবাকে।
হ্যা, বাংলাদেশের ক্রিকেটের অধুনা বহুল আলোচিত ‘বাবা’ সাকিব আল হাসান। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জন্ম নিয়েছে সাকিবের কন্যা আলাইনা হাসান অবরি। আর বাংলাদেশে জন্ম হয়েছে একজন বাবার।
সাকিব অন্তরঙ্গ মহলে আড্ডাপ্রিয় মানুষ হলেও সাংবাদিককূলের কাছে খুব আমুদে, আড্ডাবাজ লোক কখনোই নন। এতো বছর পার করেও সাংবাদিকদের সামনে নিতান্ত প্রয়োজনের কথাতেই শেষ করতে চান আলাপ। কিন্তু বৃহস্পতিবার এই বাবা হয়ে ওঠা সাকিব যেনো এক বদলে যাওয়া মানুষ হয়ে উঠলেন। এই সাকিবের গল্প করায় ক্লান্তি নেই, আড্ডা দেওয়ায় ক্লান্তি নেই; কিন্তু শর্ত একটাই- গল্প হতে হবে মেয়ে কেন্দ্রিক।
মেয়ের জন্মের সময় কাছে ছিলেন না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে এসেছিলেন। এক ম্যাচ খেলে আবার উড়ে যেতে হয়েছিলো কন্যার আগমন সংবাদ পেয়ে। আবার ভেতরে এসে বিপিএল খেলে ছুটে গিয়েছিলেন মেয়ের কাছে। অবশেষে একটু শান্ত হয়ে গত পরশু রাতে ফিরেছেন ঢাকায়। ফিরেছেন শরীরে মেয়ের আদর আর ভালোবাসার গন্ধ এবং অনেক অনেক গল্প নিয়ে।
একগাল হেসে হাত-পা নেড়ে দেখাচ্ছিলেন কিভাবে মেয়েকে কোলে নিতেন, কিংবা কিভাবে বুকে করে ঘুম পাড়াতেন, 'আমি তো আগে কোনো দিন এতো ছোট বাচ্চা কোলেই নেইনি। ভাবছিলাম, মেয়েকে কিভাবে কোলে নেবো। পরে দেখি, সোজা আছে (হাসি)। পরে তো আমার কাছেই থাকতো। আমি ওকে বুকে নিয়ে শুয়ে থাকতাম। ও আমার বুকের ওপর উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে থাকে।'
এমনকি মেয়ে বড় হয়ে কী হবে, সে নিয়েও আলোচনায় বেশ আগ্রহ বাবার, 'ক্রিকেটার মনে হয় হবে না; আমেরিকান মেয়ে তো। গলফার বা টেনিস প্লেয়ার হতে পারে। ওর বাবা মা তো তেমন লম্বা না; ওরও লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা কম। লম্বা হলে বাস্কেটবলও খেলতে পারে।'
তারপর এক পলক সিরিয়াস হয়ে বললেন, 'যা খুশী হোক। মানুষ হলেই হলো। ওই যে বলে না, ছেলে-মেয়ের ওপর নিজের স্বপ্ন চাপিয়ে দেওয়া, তা কিছুতেই করবো না।'
গল্প অবশ্য মোটেও কন্যায় সীমাবদ্ধ রইলো না। নিউইয়র্ক শহরে ঘোরার অভিজ্ঞতা, ইংল্যান্ড-বাংলাদেশের সাথে পার্থক্য, দু একজন পরিচিত মানুষকে দেখে ফেরার গল্প হলো। এক দুই টুকরো ক্রিকেটের আলাপও হলো। দলে নতুন ডাক পাওয়া নুরুল হাসান সোহানকে দেখে অভিনন্দন জানানো, তার জন্য ব্যাট আনার নিশ্চয়তা দেওয়া হলো। আর এর মধ্যেই অধিনায়ক মাশরাফিকে দেখে আরও একটু প্রান্তবন্ত হয়ে মেতে উঠলেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে কন্যা বিষয়ক গল্প আর কিছুতেই ফুরায় না।
শুধু কন্যা বলে নয়, এবারের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণটা সাকিবের জন্য আরও একটা কারণে নতুন ব্যাপার ছিলো। মাকে নিয়ে এই প্রথম বিমানে চড়লেন, দেশের বাইরে গেলেন। সাকিবের চকচকে চোখ বললো, এটাও অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা ছিলো, 'মাকে নিয়ে তো আগে এভাবে কোথাও যাইনি। একবার আইপিএল দেখতে মা আর ছোট বোন গিয়েছিলো। এবার মজা হয়েছে। আমি আর মা এতোটা পথ পাড়ি দিলাম।'
অবশ্য মাকে নিয়ে গিয়ে একটা ‘বিপদ’ও হয়েছে!
এই প্রথম সাকিবের শ্বশুরবাড়ি গেলেন মা শিরিন আখতার। সেখানে গিয়েই সাকিবের শ্বাশুড়ি আর তিনি একটা ‘দল’ করে ফেলেছেন। দু জন একদিকে, আর সাকিব-শিশির আরেক দিকে। তো কী নিয়ে চলছে এই ‘দলাদলি’? সেই সাকিবের মেয়েকে নিয়ে।
সাকিব বলছেন, আর হাসির দমকে কেপে কেপে উঠছেন, 'আর বলবেন না। ডাক্তার বলেছে, মেয়েকে পরিমাপ মতো খাওয়াতে। আমি আর শিশির তাই বলি। কিন্তু মেয়ের দাদী আর নানী এক পক্ষ। তারা সুযোগ পেলেই শুধু খাওয়ায়। মা আর শিশিরের মা তো সারাদিন কোল থেকেই নামায় না। নিজেদের ঘুম আর খাওয়া ছাড়া ওই নাতি নিয়েই আছেন দু জন।'
লোকে ভূস্বর্গ খুজতে কতো কতো দূর যায়, একটা পরিবারই তো একটা স্বর্গের টুকরো!

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top