সেবা ডেস্ক: চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও বছরের শেষ দিকে এসে দেখা যাচ্ছে, তা পূরণ হয়নি। এ অবস্থায় সরকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩১ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা করা হলো। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা কমলো ২৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা এনবিআরবহির্ভূত খাতের। গতকাল রবিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা কমার অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কাঙ্ক্ষিত গতি নেই। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নেও ধীরগতি। এ ছাড়া মোবাইল ফোন কোম্পানি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সিগারেট কোম্পানিসহ বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও প্রত্যাশিত রাজস্ব আসছে না। এনবিআরবহির্ভূত খাতেও আশানুরূপ রাজস্ব আদায় হয়নি। গত বছর অর্থমন্ত্রী প্রায় ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরকে বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেন। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি বিশ্বাস করি, রাজস্ব আদায়ের এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক থাকলে এবং রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা বিবেচনায় নিলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। তবে অর্থনীতিবিদরা এ লক্ষ্যমাত্রাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতি ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি উচ্চাভিলাষী ছিল। কিন্তু জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে এ প্রবৃদ্ধি অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হওয়া উচিত। কিন্তু সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা দেড় লাখ কোটি টাকা হলে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হলো। অথচ রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের চেষ্টায়ও কোনো ঘাটতি নেই। এর অর্থ হলো, যে প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, প্রকৃত পক্ষে তা নেই। তিনি আরো বলেন, গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে যে প্রবৃদ্ধি, তা পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চাইতেও কম। এটি অর্থনীতির গতিমন্থরতা প্রমাণ করে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, এবার এনবিআরকে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেও একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হয়েছিল। আলোচ্য সময়ে দেড় লাখ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছিল। অবশ্য বছর শেষে এনবিআরের আদায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে ব্যাংকসহ বড় আকারের কর দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত আয়কর আসছে না। ভ্যাট ও শুল্কখাতেও একই অবস্থা। এনবিআরের প্রাথমিক হিসাবে গত মার্চ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ১৫ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে রয়েছে। আলোচ্য সময়ে কেবল আয়কর খাতেই ঘাটতি ৭ হাজার ৭শ কোটি টাকা। অতীতে দেখা গেছে, বছরের শেষ তিন মাসে রাজস্ব আদায় তুলনামূলক অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু এনবিআর সূত্র বলছে, রাজস্ব আদায় একই হারে নাও বাড়তে পারে। তবে এনবিআর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বকেয়া ও মামলা আটকে থাকা বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের জন্য। এ লক্ষ্যে বেশকিছু কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে।


খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।