নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার: দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশের মাটিতে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
![]() |
| তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকবে রাজধানী, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কঠোর নির্দেশনা |
আগামী ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিনে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে ঘিরে দেশজুড়ে চলছে সাজ সাজ রব। বিএনপির শীর্ষ এই নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে সরকার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনটিতে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি রাখা হবে না। রাজধানী ঢাকাসহ বিমানবন্দর এলাকায় গড়ে তোলা হবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৮তম সভা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। তাঁর দেশে নিরাপদ আগমন নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সম্পূর্ণ সতর্ক এবং সমন্বিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে পুরো অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।”
তিনি আরও জানান, ২৫ ডিসেম্বর বিমানবন্দর থেকে শুরু করে এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং গুলশান পর্যন্ত পুরো রুটটিতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পুলিশ, র্যাব, এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। যেহেতু ওইদিন লাখো মানুষের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাতেও বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জোর দিয়ে বলেন, “সরকার জননিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রায় দেড় যুগ পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান যেন কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ছাড়াই ঘটে, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।”
আরও পড়ুন:
২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়ার পর দীর্ঘ সময় লন্ডনে কাটিয়েছেন তারেক রহমান। মাঝে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, একের পর এক মামলা এবং নানা চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে তাঁকে। বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন একটি স্বপ্নের মতো বিষয় ছিল, যা এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার মাটিতে এসে পৌঁছাবেন। দলের পক্ষ থেকে তাকে বীরোচিত স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিমানবন্দর এলাকায় তাকে স্বাগত জানাতে লাখো জনতা উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি কঠোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
তারেক রহমানের এই দীর্ঘ প্রবাস জীবনের প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে। এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি গ্রেফতার হন। কারাগারে থাকাকালীন নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেই থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
লন্ডন থেকেই তিনি দলের হাল ধরেন। বিশেষ করে ২০১৮ সালে মা বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে স্কাইপ ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও ঘোষণা করা হয়। এমনকি তাঁর বক্তব্য প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও পলায়নের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বদলে যায়। এই ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ সুগম করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার সাজার রায় বাতিল হয় এবং অনেক মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পান।
২৫ ডিসেম্বর সরকারি ছুটির দিন (বড়দিন) হওয়ায় রাস্তায় সাধারণ অফিসগামী মানুষের চাপ কম থাকবে। তবে তারেক রহমানকে একনজর দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বনানী, গুলশান ও বারিধারা এলাকায় মানুষের ঢল নামবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভিড় সামলাতে এবং তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ ট্রাফিক প্ল্যান করা হয়েছে। জনসমাগমের কারণে যাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি না হয় এবং রোগী ও জরুরি সেবার গাড়ি যাতে চলাচল করতে পারে, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে, তফসিল ঘোষণার পরপরই তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাঁর উপস্থিতি দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করবে এবং নির্বাচনী মাঠে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে।
দেশে ফিরেই তারেক রহমান সরাসরি যাবেন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁর মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ বছর পর মা ও ছেলের এই সাক্ষাৎ হবে অত্যন্ত আবেগঘন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণেই মূলত তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দীর্ঘ নির্বাসন শেষে তারেক রহমানের এই ফিরে আসা বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আশ্বাসের পর সাধারণ মানুষ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা আশ্বস্ত হয়েছেন যে, ২৫ ডিসেম্বর একটি শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন হবে। এখন শুধু সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা।
সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন
রাজনীতি- নিয়ে আরও পড়ুন

অবশেষে ট্রাভেল পাস হাতে পেলেন তারেক রহমান: ২৫ ডিসেম্বর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন চূড়ান্ত

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসনের অবসান: ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

তারেক রহমানের বার্তা: অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ দলীয় স্বার্থ নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

ঢাকা-১৭ আসনে আন্দালিব রহমান পার্থের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে হিরো আলম

নাহিদ ইসলামের পিআর আন্দোলনকে 'রাজনৈতিক প্রতারণা' মন্তব্যের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী


খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।