ঝিনাইদহের কলেজ ছাত্রের গুলিবিদ্ধ লাশ চুয়াডাঙ্গায় উদ্ধার

Seba Hot News
সেবা ডেস্ক:  ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ১০ দিন আগে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া কলেজ ছাত্রের মাথায় গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছুন্নাতলা মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে একইভাবে তুলে নিয়ে যাওয়ার এক মাস পর কালীগঞ্জের দুই শিবির নেতাকর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল যশোর থেকে। 
গতকাল চুয়াডাঙ্গা থেকে যে কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তার নাম সোহানুর রহমান (১৭)। সে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ঈশ্বরবা গ্রামের মহসিন আলীর ছেলে। সোহানুর কালীগঞ্জ শহীদ নূর আলী কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল।
গত ১০ এপ্রিল সোহানুর রহমানকে তার গ্রামের জামতলা এলাকা থেকে চার-পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে ইজিবাইকে তুলে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় তার বাবা কালীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। গত ১৭ এপ্রিল ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে সোহানুরকে ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছিল তার পরিবার।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, গতকাল সকাল ৯টার দিকে ছুন্নাতলা মাঠে কাজ করতে গিয়ে কৃষকরা এক তরুণের লাশ পড়ে থাকতে দেখে। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর সেখান থেকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এই তরুণকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
ওসি আরো জানান, পরে মর্গে গিয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ঈশ্বরবা গ্রামের মহসিন আলী লাশটি তাঁর ছেলে সোহানুরের বলে শনাক্ত করেন।
মহসিন আলী জানান, সোহানুর রহমান তাঁর বড় ছেলে। গত ১০ এপ্রিল বিকেলে চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে আসা অসুস্থ মাকে বাস থেকে নামিয়ে আনার জন্য সে কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের ঈশ্বরবা জামতলা এলাকায় অপেক্ষা করছিল। তখন একটি ইজিবাইকে করে আসা চার ব্যক্তি তার সামনে এসে নামে। সাদা পোশাকধারী ওই ব্যক্তিরা নিজেদের পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে সোহানুরকে জোর করে ইজিবাইকে তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল।
মহসিন জানান, তিনি থানা পুলিশের কাছে অনেকবার ছেলের খোঁজ নিয়েছেন, কিন্তু পুলিশ সোহানুর নামের কাউকে আটক করেনি বলে জানিয়ে দেয়।
জিডি করার বিষয়টি জানিয়ে মহসিন বলেন, ‘যেখানেই লাশ উদ্ধারের খবর পেতাম সেখানেই ছুটে গিয়ে দেখতাম আমার ছেলের লাশ কি না। হঠাৎ আজ (বুধবার) সকালে খবর পাই, চুয়াডাঙ্গার ছুন্নাতলা গ্রামের মাঠে একটি লাশ পড়ে আছে। ছুটে গেলাম সেখানে। গিয়ে জানতে পারলাম লাশ মর্গে নিয়ে গেছে। মর্গে ছুটে গিয়ে দেখলাম আমার ছেলের লাশ পড়ে আছে।’
ময়নাতদন্ত শেষে চুয়াডাঙ্গা থেকে সোহানুরের লাশ গতকাল বিকেল ৪টার দিকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে তার আত্মীয়স্বজন। ছেলের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই সোহানুরের মা পারভীনা বেগম শোকে শয্যাশায়ী।
সোহানুরের আত্মীয়স্বজন বলে, সে খুব মেধাবী ছাত্র হিসেবে কলেজে পরিচিত ছিল। শোকাহত এই স্বজনদের প্রশ্ন, এই বয়সে সোহানুরের কী এমন অপরাধ ছিল যে কারণে তাকে এমনভাবে গুলি করে হত্যা করা হলো?
কালীগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সোহানুর রহমান নিখোঁজের ঘটনায় আমার থানায় জিডি হয়েছিল। আমরা অনুসন্ধান করে তাঁকে উদ্ধার করতে পারিনি। এখন চুয়াডাঙ্গা থেকে লাশ উদ্ধার হওয়ায় এই ঘটনার তদন্তের সঙ্গে আমরা সমন্বয় করব।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৩ এপ্রিল যশোর সদর উপজেলার লাউখালী শ্মশানঘাট থেকে পুলিশ কালীগঞ্জের শিবিরের দুই নেতাকর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে। তাদের মধ্যে সংগঠনটির কালীগঞ্জ পৌর শাখার সভাপতি আবুজার গিফারীকে গত ১৮ মার্চ পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী কয়েক ব্যক্তি। তিনি যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। অন্যজন শিবিরের কর্মী। তাঁর নাম শামীম হোসেন। তিনি ঝিনাইদহ সরকারি কেশব চন্দ্র (কেসি) কলেজের ছাত্র ছিলেন। গত ২৪ মার্চ একইভাবে শামীমকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top