সেবা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার জন্য আমরা ১৫ বছর মেয়াদি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এ লক্ষ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি চিকিত্সকদের আরো আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিসিপিএস এই মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স (বিসিপিএস)’র ১৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি চিকিত্সকদের উদ্দেশে আরো বলেন, ‘আপনারা রোগীদের চিকিত্সা সেবাটা ভালোভাবে দেবেন। একটা কথা মনে রাখবেন, ওষুধের চাইতে একজন ডাক্তারের মুখের কথাতেই অর্ধেক অসুখ ভালো হয়ে যায়। কারণ আমরা তো রোগী হই, মাঝে মাঝে এটা বুঝি।’
চিকিত্সা সেবার মানোন্নয়নে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিত্তবানদের সংখ্যা বাড়ছে। তারা এই অর্থ-সম্পদ নিজের কাছে না রেখে চিকিত্সা সেবায় যথেষ্ট অনুদান দিতে পারেন। নিজের নামে একটা ওয়ার্ড করে দিতে পারেন, অ্যাম্বুলেন্স দিতে পারেন। লাইব্রেরিটা উন্নত করে দিতে পারেন। শেখ হাসিনা বলেন, চিকিত্সা শুধু একটি পেশা নয়, একটি মহান ব্রত। আপনারা নিষ্ঠা ও মেধা প্রয়োগ করে বিশেষজ্ঞ হয়েছেন। আর্ত-পীড়িতদের সেবাদানের জন্য সামর্থ্য অর্জন করেছেন। এখানেই শেষ নয়, আপনাদের মধ্যে সেবাদানের মনোভাব তৈরি করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ শিক্ষার জন্য আমরা সব সুবিধা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। একের পর এক বিশেষায়িত হাসপাতাল করে দিচ্ছি। আপনারা এ সব সুবিধা কাজে লাগিয়ে জ্ঞান অর্জন করেন, রোগীদের সর্বোত্তম সেবা দেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, জাতির পিতা জনগণের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিত্সা—এ পাঁচটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে তা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে ১৯৭২ সালে দেশে মানসম্মত চিকিত্সা শিক্ষা ও বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের চাহিদা মেটাতে এই কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ এন্ড সার্জনস্ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেন। জনগণ কেন্দ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্য কাঠামোকে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা চিকিত্সকদের মর্যাদা ১ম শ্রেণিতে উন্নীত করেছিলেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি সেবিকাদের মর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেছেন। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর দেশে প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। এখন আমরা প্রত্যেক ডিভিশনে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার স্থানীয় পর্যায় থেকে—গ্রাম, ইউনিয়ন ও উপজেলা ভিত্তিক তিন স্তর বিশিষ্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে প্রায় ৩০ ধরনের ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের ফলে মোবাইল ফোনকে জনগণের হাতের নাগালে এনে দেওয়ার মাধ্যমে তার সরকার সকল জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে মোবাইল ফোনে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং বিভিন্ন হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা প্রবর্তন করেছে। চিকিত্সা শাস্ত্রের প্রসারে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩৪৫টি নতুন চিকিত্সা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। চিকিত্সা শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে মোট ১২ হাজার ৮০৪টি আসন বাড়ানো হয়েছে।
শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করেছে এবং মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার এবং লেকটেটিং মাদার ভাতা চালু করেছে। ২৭ মার্চ ২০১৪-তে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পোলিওমুক্তি সনদ লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী অটিজম আন্দোলনে তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, সায়মা ওয়াজেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই অটিজম শিশুদের লুকিয়ে রাখা বা তাকে নিয়ে অভিভাবকদের মুখ লুকানো ভাব অনেকাংশেই বন্ধ হয়েছে। বরং স্পেশাল চাইল্ড হিসেবে তাদের বিশেষ যত্নে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য দেশে বিদেশে সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সে তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা অত্যন্ত কম, নার্সের সংখ্যা আরো কম। এ রকম একটা পরিবেশে মন-মানসিকতা ঠিক রেখে চিকিত্সা দেওয়ায় যে প্রচণ্ড একটা প্রেসার থাকে, সেটা আমরা বুঝতে পারি। তারপরও চিকিত্সকরা তাদের মানবিক গুণাবলি দিয়ে সেই চ?্যালেঞ্জ জয় করতে পারবেন বলে আমি আশাবাদী।
প্রধানমন্ত্রী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এফসিপিএস এবং এমসিপিএস ডিগ্রি অর্জনকারী বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের মাঝে সনদ এবং কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বর্ণ পদক বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সমাবর্তন বক্তৃতা প্রদান করেন বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স (বিসিপিএস) সভাপতি অধ্যাপক মো. সানাওয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। স্বাগত বক্তৃতা করেন কলেজের সাবেক সভাপতি এসএএম গোলাম কিবরিয়া। অনুষ্ঠানে বিসিপিএস সভাপতি অধ্যাপক মো. সানওয়ার হোসেন সমাবর্তনে সনদ লাভকারী শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সার্বিকভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। যে বিশ্বব্যাংক মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল, সেই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে দেশের অগ্রগতি ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অবস্থান যে ভুল ছিল তা তারা স্বীকার করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল উন্মুক্ত
এবং ১১টি ড্রেজার উদ্বোধন করবেন আজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল উন্মুক্ত এবং ১১টি ড্রেজারের উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় স্থাপিত চাইল্ড হেলপ লাইনের কার্যক্রম এবং বাগেরহাট জেলার মংলায় নির্মিত ৫০ হাজার মেটিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কনক্রিট গ্রেইন সাইলোর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।-ইত্তেফাক