সেবা ডেস্ক: গেল সপ্তাহে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় এসেছিলেন দুই বাংলার প্রিয়মুখ ঋতুপর্ণা। ঢাকার উত্তরায় বন্ধুবত্সল এক শিল্পীর বাসায় রাত্রিযাপন করেছিলেন তিনি। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। তাবত্ দুনিয়াজুড়ে তিনি ঋতুপর্ণা নামে পরিচিত হলেও পরিবারের সবার কাছে তিনি আদর আর ভালোবাসার ‘চুমকি’। ব্যস্ততার ফাঁকে সময় দিলেন তিনি। তাকে নিয়ে লিখেছেন অভি মঈনুদ্দীন।
যুগে যুগে, কালে কালে ঋতু বদলায় কিন্তু সত্যি, যে ঋতুপর্ণাকে সেদিন সকালে কাছে থেকে দেখেছি—এই ঋতু যেন একটুও বদলায়নি। এই ঋতু যেন ‘শ্বেত পাথরের থালা’, ‘দাদাগিরি’ ‘দহন’, ‘স্বামী কেন আসামী’, ‘সাগরিকা’, ‘রাঙ্গা বউ’, ‘পারমিতার একদিন’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ কিংবা আরও কত না দর্শক সমাদৃত হওয়া চলচ্চিত্রের ঋতু। এই ঋতু সত্যিই আজও বদলায়নি। হয়তো ঋতুপর্ণা বদলাবার নয়, তাই আজও বদলায়নি। তাই তো আজও এপার বাংলা কিংবা ওপার বাংলায় তার জনপ্রিয়তা-দর্শকপ্রিয়তা ঠিক সেই আগেরই মতো। ঋতু হয়তো জানেন দর্শকের মাঝে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়। জানেন বলেই আজও তিনি আগেরই মতো। গোলাম সাব্বিরের ক্যামেরায় পরপর দু’বার পোশাক বদল করে ছবি তুললেন ঋতুপর্ণা। ঘণ্টাব্যাপী সময় নিয়ে তিনি ছবি তুললেন। তাই, বিশেষ ধন্যবাদ এই চলচ্চিত্র নন্দিনীকে।
এরপর গল্পে গল্পে উঠে আসে নানা কথা। প্রায় দুই যুগ আগের কথা। ঋতু যখন চলচ্চিত্রে কাজ করতে এলেন তখন তার বাবা বিশেষ করে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু পরে যখন মেয়ে ভালো একটি অবস্থানে চলে এলেন, তখন সে বাঁধা আর রইল না। ঠিক তেমনি ১৯৯৯ সালে বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি থেকেও যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছেন ঋতুপর্ণা। বিশেষ করে তার স্বামী সঞ্জয় চক্রবর্তী মনেপ্রাণে তাকে সহযোগিতা করেছেন। আর তাই হয়তো ছেলে অঙ্কন চক্রবর্তী, মেয়ে ঋসোনা চক্রবর্তীকে নিয়ে বেশ সুখের সময় পার করছেন ঋতুপর্ণা। গল্প তখন ঢাকাকেন্দ্রিক। প্রশ্ন রাখি, আগে তো বেশ কিছু চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন ঢাকায়। এখন করতে ইচ্ছে করে না? হেসেই জবাব দিলেন, ‘আমার মায়ের বাড়ি কিন্তু মানিকগঞ্জ, আর বাবার বাড়ি বিক্রমপুর। তাই আমি এই বাংলারই মেয়ে কিন্তু। এখানকার চলচ্চিত্রে কাজ করার আগ্রহ আমার প্রবল। আগে তো কাজ করেছি বেশকিছু চলচ্চিত্রে। এই তো কিছুদিন আগেও ‘এক কাপ চা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। গল্প ভালো হলে অবশ্যই কাজ করব, কেন নয়। কিন্তু আমি এখন নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে চাই। এর আগে যারা আমাকে নিয়ে এখানে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, তারা আমার কমার্শিয়াল একটি অবস্থান তৈরি করে দিয়েছিলেন। তাই আমি বিশ্বাস করি, আমাকে যদি নতুনভাবে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে অবশ্যই দর্শক আমার সিনেমা দেখতে হলমুখী হবেন। আমি এদেশের মেয়ে বলেই আমার আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে বলছি।’
জানতে চাই ঋতুপর্ণার কাছে, নায়িকা হয়ে তো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্র পরিচালনা করার কোনো ইচ্ছে আছে কী? ঋতু এবার একটু ভাবলেন। এরপর বললেন, ‘দেখুন সত্যি বলতে কী আমি মনে করি আমার যে বয়স, এখনো আসলে অভিনেত্রী হিসেবে দর্শককে ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। পরিচালনা অনেক কঠিন কাজ। এ কাজটা না হয় আরও পরে করা যাবে। তাছাড়া আমি মনে করি টেকনিক্যাল বিষয়ে অনেক কিছু জানা না থাকলে নির্দেশনায় আসাটাও ঠিক নয়।’ ইতিহাসের ছাত্রী ঋতুপর্ণার জন্ম ৭ নভেম্বর। কথা প্রসঙ্গ ঋতু বলেন, ‘আমি কখনো দুই বাংলা কথাটাকে মেনে নিতে পারি না। ভৌগলিক সীমারেখা দিয়ে বাংলাভাষা তথা বাংলা সংস্কৃতিকে দুইভাগে বিভক্ত করা আমার কাছে দুর্ভাগ্যের মতো মনে হয়। আমি তো বাংলাদেশে এসেছি বহুবার এবং চলচ্চিত্রও করেছি। এখানেও দু-একজন আমার খুব কাছের বন্ধু আছে। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে আমি তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। এ চলচ্চিত্রগুলো দেখে কি মনে হয় যে, আমরা দুই বাংলার মানুষ?’
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আরও বলেন, ‘এই মুহূর্ত আমার জন্য খুবই স্পেশাল। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আমার জীবনের অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। বহুবার আমি এখানে এসেছি কিন্তু এবারের আসা এক ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে আমাকে।’ আরেক প্রশ্নের উত্তরে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘আমি কমার্শিয়াল ও আর্ট ফিল্মের মধ্যে অভিনয়ের পার্থক্য করতে চাই না। এখানে চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলাই আসল। অ্যাক্টর হলো মাটির পতুলের মতো। অনেক সময় আমাদের নিজেদের জীবনের সঙ্গে চরিত্রও মিলে যায়। আমাদের বাঙালিদের মধ্যে অনেক ভালো ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন। এখন অনেক মহিলা নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাণে আসছেন এটা আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। আমরা অভিনয়শিল্পীরা স্বপ্নের মধ্যে ডুবে থাকি। আগামীতে নতুন নতুন শিল্পীরা যাতে এই চলচ্চিত্র জগতে ভূমিকা রাখতে পারে এজন্য কাজ করে যেতে চাই।’