সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকুন : প্রধানমন্ত্রী

Nuruzzaman Khan
সেবা ডেস্ক:  সেনাবাহিনীর সদস্যদের ঐক্যবদ্ধভাবে পবিত্র সংবিধান ও দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বিকালে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের অধীনস্থ নবগঠিত সদর দপ্তর ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ ৯টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রদানকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
 
প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে দেশের সম্পদ এবং দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক আখ্যায়িত করে বলেন, পেশাদারিত্বে গুণগত মান অর্জনের জন্য আপনাদের সকলকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সত্ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। তিনি সেনা সদস্যদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে কর্তব্য সম্পাদনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করারও পরামর্শ দেন।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালেই প্রতিরক্ষা নীতিতে দিক-নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদী সমগ্র দেশকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছে। সেনাবাহিনীকেও সেই মোতাবেক সক্ষমতার দিক থেকে স্বতন্ত্র ও প্রশাসনিকভাবে সামর্থ্যবান তিনটি কমান্ডে নিয়োজিত হতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী সেই প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সেনাবাহিনীকে একটি জ্ঞানভিত্তিক পেশাদার বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আমরা সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিটি সদস্যের নৈতিক ও মানসিক শক্তি এবং পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছি।
 
অনুুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক, সেনা বাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল আনোয়ার হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ উচ্চ পর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকতাগণ উপস্থিত ছিলেন।
 
এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক, ১৭ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি ও সিলেটের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন তাকে স্বাগত জানান। সেনাবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের মাধ্যমে অভিবাদন জানায়। প্যারেড শেষে প্রধানমন্ত্রী সিলেট সেনানিবাসে বিভাগীয় সদর দপ্তরসহ ৮টি স্থায়ী প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সমপ্রসারণের অংশ হিসাবে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও বেশ কিছু ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া কোরের অত্যাধুনিক ট্যাংক, গোলন্দাজ বাহিনীর কামান, আকাশ প্রতিরক্ষার অংশ হিসাবে মিসাইল সিস্টেম, পদাতিক বাহিনীর ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল এবং আর্মি এভিয়েশনের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার সেনাবাহিনীতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
 
শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়াও সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরাপত্তার জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। মিঠামইনে একটি রিভারাইন ব্রিগেড প্রতিষ্ঠার কাজও শুরু হয়েছে। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রিগেড পর্যায়ে স্পেশাল ফোর্স গঠনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। এছাড়া বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার মধ্যবর্তী পায়রা নদী সংলগ্ন এলাকায় লেবুখালী সেনানিবাসে ১টি পদাতিক ডিভিশন গঠনের নীতিগত অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এভাবেই দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে যুগোপযোগী সেনাবাহিনী হিসাবে গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
 
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশের সৈনিকদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, স্বল্পসংখ্যক সৈন্য দিয়ে জাতিসংঘ মিশনে যাত্রা শুরু হলেও বাংলাদেশ বর্তমানে অন্যতম সর্বাধিক সৈন্য প্রেরণকারী দেশ। বর্তমান সরকারের অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও কূটনৈতিক সাফল্যের অংশ হিসাবে জাতিসংঘ মিশনের বিভিন্ন উচ্চতর পদ যেমন, ফোর্স কমান্ডার, ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার, ফোর্স চিফ অব স্টাফ এবং সেক্টর কমান্ডার হিসাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারগণ কর্মরত রয়েছেন।
 
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের সত্, কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের বাস্তবতার বিষয়ে অবগত আছি। এজন্য আপনাদের বিভিন্ন কল্যাণের বিষয়গুলোও সব সময়েই আমাদের সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। সেনাবাহিনীর সকল পদবীর সৈনিকদের জন্য বাসস্থান, মেস ও ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের উন্নত চিকিত্সা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত। তা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে যাচ্ছে। এ ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
 
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন খণ্ড চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি সেনাবাহিনী প্রধান এবং আপনাদের সকলকে সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আজ ১৭ পদাতিক ডিভিশনকে আরও পূর্ণতা দেয়ার জন্য ১টি পদাতিক ব্রিগেডসহ ৯টি নতুন ইউনিটের পতাকা উত্তোলিত হলো। এই দিনটি সেনাবাহিনীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন, পরিপূর্ণতা অর্জনের দিন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই নবগঠিত ব্রিগেড ও ইউনিটসমূহের প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এই ডিভিশনের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top