সেবা ডেস্ক: ফেনী-২ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী কারাবাসকালীন সময়ে তার হিস্ট্রি কার্ড, রেয়াত কার্ড এবং রক্তদান সংক্রান্ত কোনো নথি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ কারাবিধির ৭৮০ (৮) ও ৫৫৮ এর বিধান মোতাবেক রেয়াত কার্ড ও হিস্ট্রি টিকেট সংরক্ষণের মেয়াদ এক বছর। ফলে কারাগারে থাকাবস্থায় নিজাম হাজারী রক্তদানের মাধ্যমে কোনো বিশেষ রেয়াতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন কিনা এবং কতবার রক্তদান করেছিলেন ও মোট কতদিন বিশেষ রেয়াত পেয়েছিলেন এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি মর্মে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন কারা কর্তৃপক্ষ।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন সাক্ষরিত এই প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসানের ডিভিশন বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী এটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী টিকু প্রতিবেদনটি আদালতে পড়ে শোনান। পরে প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানি করেন নিজাম হাজারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও নূরুল ইসলাম সুজন এবং রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী। পরে আদালত আগামী ১৪ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দেয়।
কারাগারে থাকাবস্থায় রক্তদানের বিপরীতে নিজাম উদ্দিন হাজারী কতদিন রেয়াত পেয়েছেন তা প্রতিবেদন আকারে জানাতে জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট। ওই নির্দেশের পর আইজি প্রিজন চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ ও সন্ধানীর সঙ্গে যোগাযোগ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৫৯ সালের ২১ মে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের জারি করা স্মারকের আলোকে এবং পরবর্তীকালে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের এক মেমোর ভিত্তিতে রক্তদানের বিনিময়ে বিশেষ রেয়াত সুবিধা প্রদানের নিয়ম বহল ছিলো। এ কার্যক্রম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা আধুনিক হাসপাতাল সন্ধানী ব্লাড ব্যাংক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে পরিচালিত হত। এ সুবিধার আওতায় বন্দিরা রক্তদান করে বিশেষ রেয়াতপ্রাপ্ত হতেন। যা পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এক সার্কুলারের মাধ্যমে রহিত করা হয়। রক্তদানের বিনিময়ে আসামির বিশেষ রেয়াত সুবিধার বিস্তারিত কারাবিধি ৭৬৭ এর বিধান মোতাবেক বন্দির রেয়াত কার্ড ও হিস্ট্রি টিকেট রেয়াত প্রদানের কারণ ও প্রাপ্ত রেয়াতের পরিমাণ উল্লেখ থাকত।
উল্লেখ্য, যে রেয়াত কার্ড ও হিস্ট্রি টিকেট সংরক্ষণের মেয়াদ কারাবিধির ৭৮০(৮) ও ৫৫৮ এর বিধান মোতাবেক এক বছর । ফলে চট্টগ্রাম কারাগারে এ সংক্রান্ত তথ্য না পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষ সন্ধানীর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ইউনিটে যোগাযোগ করে। সন্ধানী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক পত্রের মাধ্যমে জানান যে, পর্যাপ্ত আর্থিক স্বচ্ছলতা, জনবল, অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় এতদসংক্রান্ত রেকর্ড পত্রাদি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা দুষ্কর। ফলে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের রেকর্ড পত্রাদি ১০-১২ বছরের পুরনো। বিধায় সন্ধানী কার্যালয় স্থানান্তরের সময় বিনষ্ট হয়েছে। এজন্য সন্ধানী দুঃখ প্রকাশ করছে। তবে সন্ধানী কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত সনদ অস্বীকার করেননি বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
শুনানি নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, নিজাম হাজারী ১৩ ইউনিট রক্তদান করে ৪৮৬ দিন বিশেষ রেয়াত পেয়ে কারামুক্তি পেয়েছেন।
‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এতে বলা হয়, ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় নিজাম হাজারীর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু ২ বছর ১০ মাস কম সাজা খেটে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। দণ্ডের মেয়াদের মধ্যেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।