কাপ্তাই হ্রদে ‘নীলকৌড়ি’ লেকভিউ আইল্যান্ড হাতছানিতে ডাকছে ভ্রমণপিপাসুদের

Unknown
সেবা ডেস্ক:  সদ্য গত বর্ষার ছোঁয়ায় নীল ছুঁয়ে আছে কাপ্তাই হূদের জলে। সেই জল মিতালী করছে বন পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে। আর শীততো আসি আসি করছেই। এমন সময়ে কাপ্তাই হূদের জলে বন-পাহাড়ের মিতালীতে মেতে উঠেছে ‘নীলকৌড়ি’। পূর্ণিমা রাতে সেই নীলকৌড়ির পিঠে চড়ে ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে এক কপোত-কপোতি।
 
এমন অপার্থিব সৌন্দর্যের কথা ভাবতেই শিহরণ জাগে মনে! কিন্তু নীলকৌড়ির পিঠে কীভাবে চড়বে ভালোবাসার কপোত-কপোতিরা! হয়তো অবাক জিজ্ঞাসা! আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই নীলকৌড়ি ছোট কোনো পাখি নয়। এটি আসলে ৫০ ফুটের একটি অভিজাত বজরা নৌকা। বজরা মূলত অভিজাত শ্রেণীর নৌকা হিসেবে ব্যবহার হয়ে এসেছে। অভিজাত নৌকা ‘নীলকৌড়ি’ এখন ভাসছে কাপ্তাই হূদে। যে কেউ চাইলে কোনো এক চাঁদনী রাতে অথবা শেষ বিকেলে কিংবা গোধূলিতে সঙ্গী, পরিবার-পরিজন নিয়ে এই বজরা নিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন কাপ্তাই হূদের জলে।
 
কী আছে নীলকৌড়িতে
 
ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২০ ফুট প্রস্থের এই বজরা তৈরি করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ‘নীলকৌড়ি’র ভিতরে থাকা-খাওয়ার জন্য রয়েছে দারুণ সুব্যবস্থা। বেতের তৈরি দুটি ডাবল খাট, বসার জন্য সোফা-চেয়ার দিয়ে বানানো ড্রইং কর্ণার, শৌচাগারসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। অর্ডার করলেই সেখানে খাবারের ব্যবস্থা হবে। সুপ্রশস্ত ছাদেও রয়েছে বসার ও শোয়ার বিশেষ ব্যবস্থা।
 
হূদের বুকে ‘লেকভিউ আইল্যান্ড’
 
সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের পাহাড়ঘেরা কাপ্তাই ক্যাম্প এলাকা কিছুদিন আগেও ছিল সংরক্ষিত। তবে শান্তিচুক্তির শর্তমতে ক্যাম্পটি ইতিমধ্যে উঠে গেছে। আর সেখানকার প্রায় চার একর পাহাড়কে ‘লেকভিউ আইল্যান্ড’ নামকরণ করে সেখানে বাহারি কটেজ তৈরি করেছে সেনাবাহিনী। যেখানে থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি রাখা হয়েছে নানা বিনোদনের ব্যবস্থা। যে কেউ চাইলেই এই আইল্যান্ডে বেড়াতে যেতে পারবেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরাই পুরো পর্যটন এলাকাটির পরিচালনা ও নিরাপত্তায় কাজ করছে।
 
কাপ্তাই বাঁধ পেরিয়ে বামদিকের ছোট্ট টিলায় তৈরি করা হয়েছে ‘হিলটপ রিসোর্ট’। মনোরম এই রিসোর্টে সুইমিং পুলসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এই রিসোর্টের আঙিনা থেকেই কাপ্তাই বাঁধ, স্লুইসগেট, লেকের স্বচ্ছ জলরাশি আর লেকভিউ আইল্যান্ডের দেখা মিলবে। হিলটপের ঘাট থেকেই নৌকা নিয়ে যাওয়া যাবে লেকভিউ আইল্যান্ডে। আইল্যান্ডের ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে উপরে উঠতেই সবুজাবৃত ‘রিসোর্ট কর্ণফুলী’ স্বাগত জানাবে। রিসোর্ট পার হয়ে পা বাড়াতেই চোখে পড়বে পানিতে ভাসমান ‘নীলকৌড়ি’ বজরা।
 
 
লেকভিউতে যা আছে
 
চার একরের এই আইল্যান্ডকে ইয়েলো এবং অরেঞ্জ জোনে ভাগ করে সাজানো হয়েছে। ইয়েলো জোনে রয়েছে কটেজ, বসার ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। আর বাড়তি বিনোদন হিসেবে সাজানো হয়েছে অরেঞ্জ জোনকে। সেখানে তৈরি করা হয়েছে কিডস কর্ণার, যাতে শিশুদের জন্য নানা ধরনের খেলনা রাখা আছে। আর বড়দের জন্য গাছের উপর তৈরি করা হয়েছে দুটি মাচা। একটি থেকে অন্য মাচায় যেতে তৈরি করা হয়েছে মিনি ঝুলন্ত সেতু। যার কিছু অংশ কাঁচ দিয়ে তৈরি। রয়েছে বড়শি দিয়ে লেকের জলে মাছ ধরা কিংবা দ্রুতগতির স্পিডবোটে লেকে দাপিয়ে বেড়ানোর সুযোগ। আবার কটেজের পাশাপাশি তাঁবুতে রাত যাপনের সুযোগও রাখা হয়েছে।
 
খরচ কত
 
২৪ ঘন্টার জন্য ‘নীলকৌড়ি’র  ভাড়া ১০ হাজার টাকা। আর প্রতি ঘন্টায় ৩ হাজার টাকা। আবার দিনের বেলায় জনপ্রতি ৮শ টাকা ভাড়ায় ৬-১০ জন নিয়ে বজরায় সময় কাটানো যাবে। লেকভিউতে ৫০ জন বনভোজন করতে চাইলে বন্ধের দিন ১৫ হাজার, অন্যদিন ১০ হাজার টাকা এবং ৫০ জনের অধিক হলে জনপ্রতি ২২৫ টাকা খরচ হবে। এর বাইরে চেয়ার, টেবিল, মিউজিক সিস্টেম ও খাবারের জন্য বাড়তি খরচ পড়বে।  স্পিডবোটে এক কিলোমিটার এলাকা ঘুরতে খরচ হবে ২০০ টাকা। প্রতি তাঁবুতে দুইজন করে থাকলে দিনে এক হাজার টাকা খরচ হবে। বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে প্রতি সিটের জন্য দিতে হবে ৫শ টাকা।
 
এছাড়া ‘রিসোর্ট কর্ণফুলী’তে প্রতিটি এসি কক্ষে থাকতে চার হাজার, নন-এসি দুই হাজার, ‘হিলটপ রিসোর্টের’ প্রতিটি এসিকক্ষ চার হাজার টাকা খরচ পড়বে। খাবারের জন্য আলাদা দাম।
 
বুকিং, যাতায়াত
 
ফেসবুকে ‘লেকভিউ আইল্যান্ড’ নামে একটি অফিসিয়াল পেইজ আছে। সেখানে থাকা মোবাইল নম্বরে কথা বলেই সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় বুকিং দেওয়া যাবে। আর চট্টগ্রাম শহর থেকে কয়েকটি রুটে কাপ্তাই যাওয়া যায়। তবে চট্টগ্রাম নগর থেকে অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়ক হয়ে দুই ঘন্টায় কাপ্তাইয়ে যাওয়া যায়।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top