অভিবাসন বিষয়ক সংলাপে বাংলাদেশের নেতৃত্ব

Unknown
সেবা ডেস্ক:  মানুষ সহজে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে চায় না, কিন্তু কখনো কখনো তাকে তা ছাড়তে হয় পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে।  অনেক বাংলাদেশী ঘর ছাড়ে বৃহত্তর বিশ্বে কাজের সুযোগের সন্ধানে।  এবং বছরের পর বছর পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মার অভ্যন্তরের উত্তেজনা, দ্বন্দ্ব এবং বৈষম্য সেখানকার জনগণকে তাদের সীমানা ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে বাংলাদেশ,থাইল্যান্ড, চীন এবং আরও অনেক জায়গায়।  
এই প্রপঞ্চ –- অভিবাসন ও পলায়ন শুধুমাত্র এই অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়।  অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশ শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ে বহুপাক্ষিক সংলাপে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।  এ ধরনের আলোচনা বাস্তুচ্যুত ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।  বাংলাদেশের নেতৃত্ব আবারো পরিলক্ষিত হয় এই সপ্তাহে বাংলাদেশ সরকারের “গ্লোবাল ফোরাম ফর মাইগ্রেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট” (জিএফএমডি) আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
বিশ্বব্যাপী রেকর্ড সংখ্যক জনগণ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।  অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়টি আন্তর্জাতিক আলোচনায় আলোড়ন তুলেছে, অনেক জোরেশোরে আলোচিত হয়েছে।  গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ও পরবর্তীতে শরণার্থী বিষয়ে নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায়ের সভায় প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল এটি।  এই সপ্তাহে ৭শ’র বেশী কূটনৈতিক, সরকারি কর্মকর্তা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ গ্লোবাল ফোরাম-এ অংশগ্রহণের জন্য ঢাকায় সমবেত হয়েছেন -- এ সংখ্যা প্রথমে যা ভাবা হয়েছিল তার থেকে ২শ’ জন বেশী।  অংশগ্রহণকারীরা অভিবাসনের মূল কারণ বুঝতে, উৎকৃষ্ট কর্মসূচি বিনিময়, অংশীদারিত্ব গঠন এবং কণ্টকাকীর্ণ সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে জড়ো হয়েছেন।  আমরা জনগণের জীবন রক্ষায় দেশগুলো কী বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পারে এবং মরিয়া জনগণের উপর নিষ্ঠুর পাচারকারী চক্রের শিকার কীভাবে রোধ করা যায় সে ব্যাপারে কথা বলেছি।
                
ঢাকায়, পূর্ববর্তী ফোরামের সভার মতই, আমরা আলোচনা করেছি কীভাবে অভিবাসনের আইনি পথ তৈরি করা যায় এবং এ ধারণার প্রসার করা যায়।  অভিবাসনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সর্বোপরি যে দেশ থেকে আসছে এবং যে দেশে যাচ্ছে দুই দেশকেই লাভবান করতে পারে।  বিদেশে অবস্থানরত কর্মজীবীদের পাঠানো অর্থের ওপর তাদের পরিবারগুলো নির্ভর করে থাকে এবং এই অর্থ বিশ্বের অনেক দরিদ্রতর দেশের জন্যই অধিকতর সম্পদ অর্জনের যোগান দিয়ে থাকে যা উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে প্রাপ্ত সাহায্যের চেয়েও বেশী।  বিদেশে নিয়োগকারীদের প্রয়োজন পড়ে অভিবাসীদের প্রাণশক্তি আর দক্ষতা।  এবং যে সমস্ত দেশে শ্রমিক স্বল্পতা এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আধিক্য রয়েছে অভিবাসীরা সে সব দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে।  গবেষণায় দেখা গেছে অভিবাসীরা সাধারণত সমাজে অধিকতর অবদান রাখে -- কর প্রদানের মাধ্যমে -- যা তাদের প্রাপ্ত সুবিধার চেয়েও বেশী।
এই অধিবেশনে বেশীর ভাগ অংশগ্রহণকারী মনে করেন যে যারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে তাদের সাহায্যে এবং সুরক্ষায় আমাদের অবশ্যই আরও বেশী কাজ করা উচিত এবং এ ব্যাপারে আমাদের সবার আইনগত ও নৈতিক দায়বদ্ধতা রয়েছে।  ঠিক যেমন বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একসাথে কাজ করেছে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে।  শরণার্থী রক্ষা বিশ্বের অবশ্যই অগ্রাধিকার হওয়া  উচিৎ এবং এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিৎ -- যার মধ্যে রয়েছে যে সমস্ত দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে তাদের সহায়তা করা।  ক্ষতিগ্রস্ত ও দারিদ্র্যপীড়িত অভিবাসীদের জন্য আরও প্রয়োজন আইনি প্রক্রিয়ায় এবং নিরাপদ অভিবাসন।  মানব পাচার, অভিবাসীদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাচার এবং প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি বিপর্যয়ের ফলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী মর্যাদার সাথে বাঁচতে চায় এবং তাদের জীবনের ক্ষত সারিয়ে জীবনকে নতুন করে সাজাতে চায় ।
  
স্বাভাবিকভাবেই দেশগুলোর তাদের নিজেদের সীমানা নিয়ন্ত্রণের সার্বভৌম অধিকার রয়েছে। বিপদজনক ও অব্যবস্থাপনাময় অভিবাসন জীবনের প্রতি হুমকি স্বরুপ এবং তা চোরাচালানকারী, পাচারকারী, এবং অপরাধচক্রকে সমৃদ্ধশালী করে এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমিয়ে দেয়।  যাই হোক, চিন্তাশীল জাতিসমূহ সীমানা নিয়ন্ত্রণের উপায় ও অভিবাসন নীতি উন্নয়নে সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছে যা নাগরিকদের, শরণার্থী ও অভিবাসীদের সুরক্ষা দেয়ার সাথে সাথে বৈধ অভিবাসনের সর্বাধিক সুবিধাও লাভ করে।
এ বছরের “জিএফএমডি” সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত “নিউ ইয়র্ক শরণার্থী ও অভিবাসন ঘোষণার” আলোচনাকে এগিয়ে নিয়েছে।  এই দলিলে শরণার্থীদের নিরাপদ, সুশৃঙ্খল, ও নিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে দু’টি ভিন্ন চুক্তির আহবান করা হয়েছে।  এই চুক্তির ভিতরে বিশ্ব যেভাবে শরণার্থী ও অভিবাসন সংকটে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে -– যদি দেশগুলো ইতিবাচকভাবে এই বিষয়গুলো গ্রহণ করতে তাদের অনীহা কাটিয়ে উঠতে পারে।
  
এ কারণেই আমি বিশ্বাস করি “জিএফএমডি” এবং বিশ্বব্যাপী অন্যান্য অভিবাসন সংলাপ অপরিহার্য।  এসব আলোচনার মাধ্যমে দেশগুলো একত্রিত হয়ে অভিবাসনের চ্যালেঞ্জসমূহ ও সুবিধাদি নিয়ে সমানভাবে আলোচনা করতে পারে। বিশ্বব্যাপী সকল দেশের সরকার অনুধাবন করেছে যে এখনই সময় এ ব্যাপারে কাজ করার।  ইতিবাচক ও বাস্তবানুগ নেতৃত্বের মাধ্যমে –- যে ধরনের নেতৃত্ব বাংলাদেশ প্রমাণ করে দেখিয়েছে “গ্লোবাল ফোরাম ফর মাইগ্রেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট” আলোচনার আয়োজন করে। অভিবাসীরা এবং যে সমাজ এর আয়োজন করেছে -- উভয়েই এর সুফল ভোগ করবে।
লেখক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top