দল নিয়ে দুশ্চিন্তা ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর

Unknown
সেবা ডেস্ক:  নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী মূলত একাই নিজের নির্বাচনী প্রচারণা টেনে নিচ্ছেন। নিজ দল-জোটের শীর্ষসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মন্ত্রী-এমপি হওয়ায় নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী আইভীর পক্ষে সরাসরি প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। বিএনপি সংসদে না থাকায় যেটির সর্বোচ্চ সুবিধা নিচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের অনেকেরও ‘গা ছাড়া’ ভাব। ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা গিয়ে বৈঠক ডাকলে সেখানে তাদের সরব উপস্থিতি দেখা যায় কিন্তু আইভীর পক্ষে মাঠে নেমে ভোট চাইতে দেখা যাচ্ছে না তাদের। মাঠে দু’একজনের দেখা মিলছে কদাচিত্।
 
এ ব্যাপারে আইভী বলেছেন, ‘দলে কোনো বিভক্তি নেই। যেগুলো লেখা হচ্ছে সেটা মিডিয়ার বানানো। আমি নারায়ণগঞ্জের মেয়ে, এখানকার মানুষই আমার শক্তি, তারাই আমার ভরসা। নারায়ণগঞ্জবাসী অতীতের মত এবারও আমার পাশে আছেন।’
 
দলের স্থানীয় নেতাদের ‘রহস্যময়’ ভূমিকার পাশাপাশি ভোটের অংকে জাতীয় রাজনীতিও ভোগাতে পারে ‘নৌকা’র প্রার্থী আইভীকে। টানা প্রায় আট বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের উপর নানা কারণে ক্ষুব্ধ ভোটারদের রাগের শিকার হতে পারেন আইভী। বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ও নাসিকের মেয়র পদে তার টানা ১৩ বছর ধরে দায়িত্ব পালনের সুবিধা-অসুবিধাও রয়েছে। এলাকার অনেক উন্নয়ন ও কর আদায়ের ক্ষেত্রে সফলতার সুফল যেমন তিনি পেতে পারেন ভোটে, তেমনি গ্যাস ও পানি সংকটসহ নানা ব্যর্থতার মাশুলও গুনতে হতে পারে। ভোটারদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এতসব হিসাব-নিকাষের মধ্যেও আইভীর বড় পুঁজি ‘ব্যক্তি ভাবমর্যাদা।’ এরপরেও জাতীয় রাজনীতির হিসাবের সঙ্গে আইভীর ব্যক্তি ইমেজের রসায়ন শেষ পর্যন্ত কি দাঁড়ায়, সেটি দেখার জন্য ভোটারদের অপেক্ষা করতে হবে ২২ ডিসেম্বর ভোটের দিন পর্যন্ত।
 
কাজী জাফরউল্যাহ ও অসীম কুমার উকিলসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ইতিমধ্যে কয়েকবার নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, শহর কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি মজিবর রহমানসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে আইভীর জন্য মাঠে নেমে ভোট চাইতে দেখা যায়নি এসব নেতাকে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, ‘পরদিন শনিবার থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সব নেতা আইভীর জন্য মাঠে নামবেন।’ বাস্তবে সেটির প্রতিফলন দেখা যায়নি। অবশ্য বুধবার প্রথমবারের মত আইভীর সঙ্গে প্রচারণায় দেখা গেছে মজিবর রহমানকে।
 
এর আগে কাজী জাফরউল্যাহর সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের বৈঠকে মজিবর রহমান অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘আইভী একাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আইভী সিদ্ধিরগঞ্জে গেলেও আমি কিছুই জানি না।’ তার এই অভিযোগের পরদিন আইভী সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়ে মজিবরের বাড়িতে যান। একই ঘটনা ঘটেছে বন্দর থানা আওয়ামী লীগ নেতা এমএ রশীদের ক্ষেত্রে। আইভীর জন্য রশীদ মাঠে নামেননি, পরে আইভী নিজেই রশীদের বাড়িতে যান। যদিও মজিবর ও রশীদ দুজনই বলছেন, ‘দলের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই, নৌকার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ।’ একইভাবে শামীম ওসমানের শ্বশুরবাড়িতেও গিয়ে ভোট চেয়ে এসেছেন আইভী।
 
মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে প্রথমে ক্ষুব্ধ হলেও পরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলের সমর্থন পেয়ে খুশি হন আনোয়ার হোসেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ যখন তার প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করেন তখন তিনি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। দলীয় সমর্থন ঘোষণার পরদিন আইভী হাসপাতালে গিয়ে তাকে দেখে আসেন। সুস্থ হয়ে নারায়ণগঞ্জে ফিরলেও আনোয়ার এখন পর্যন্ত আইভীর জন্য ভোট চাইতে মাঠে নামেননি। এর মধ্যে গত শনিবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে আইভীর সঙ্গে দেখা হলে তার হাতে শামীম ওসমানের উপহার দেওয়া নৌকাখচিত দুটি শাড়ি তুলে দেন আনোয়ার। তখন আনোয়ার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমাদের দলের প্রার্থী আইভী, নৌকার বিজয়ের জন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি।’
 
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা শামীম ওসমানের ঘণিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় দলীয় বৈঠকে সব সময় সরব থাকেন খোকন। এসব বৈঠকে খোকন তার বক্তব্যে আইভীকে জয়ী করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু আইভীর জন্য মাঠে তাকে তেমন সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। তা ছাড়া এই খোকন সাহা নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের পক্ষের আইনজীবী।
 
স্থানীয় নেতাদের এ রকম ‘রহস্যময় ভূমিকা’ সম্পর্কে নির্বাচন দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘স্থানীয় নেতাদের কার কী ভূমিকা সব নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নজরে রয়েছে। দলীয় সভানেত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে—নৌকাকে বিজয়ী করতে স্থানীয় নেতাদের শতভাগ সক্রিয় ভূমিকা থাকতে হবে, এর ব্যত্যয় ঘটলে ভোটের পর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু সমস্যা ছিল, তবে সেসব কেটে গেছে, এখন সবাই আইভীর জন্য একাট্টা।’
 
২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নাসিকের প্রথম নির্দলীয় নির্বাচনে আইভীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শামীম ওসমান। তখন আইভীর পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের পাশাপাশি সুশীল সমাজসহ অন্যরাও ছিলেন। এবার দলীয় নির্বাচন হওয়ায় একদিকে আইভীর ব্যক্তিগত কর্মী-সমর্থকরা রয়েছেন, অন্যদিকে রয়েছে দল।
 
ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রগুলোতে কাদেরকে নিজের এজেন্ট হিসেবে রাখবেন—এ নিয়ে দোটানায় পড়েছেন আইভী। এ ব্যাপারে আইভী ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমি গতবারও আওয়ামী লীগের ছিলাম, এবারও আওয়ামী লীগের। কখনও আওয়ামী লীগের বাইরে ছিলাম না। কাজেই এজেন্ট দেওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’
 
গ্যাস-পানির সংকট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের সমস্যা আছে, এটা ঠিক। তবে মেয়র থাকার সময় আমি চেষ্টা করেছি সংকট কাটাতে। ইতোমধ্যে নিজেও বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এবার নির্বাচিত হতে পারলে গ্যাসের আর সমস্যা থাকবে না। আর পানি সংকট কাটাতে ওয়াসা কাজ করছে।’- ইত্তেফাক
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top