যে কারণে আওয়ামী লীগের দুস্ত থেকে দুশমন তারা

S M Ashraful Azom
যে কারণে আওয়ামী লীগের বন্ধু থেকে শত্রু তারা
সেবা ডেস্ক: এক সময় আওয়ামী লীগের খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ যেন ছন্দপতন। তারা এখন আওয়ামী লীগ বিরোধিতায় গভির ভাবে লিপ্ত। প্রকাশ্যে-গোপনে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিশ্বাস ভাঙার অনেক অভিযোগও। বন্ধু থেকে পরিণত হয়েছেন শত্রুতে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা নিয়েও যারা সরকারের ক্ষতি করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তাদের তালিকায় যে নামটি প্রথম আসে তিনি হলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দুর্নীতির অভিযোগে ওয়ান-ইলেভেনের সময় চাকরি হারাতে বসেছিলেন। কিন্তু প্রথম এবং শেষবারের মতো সতর্ক করে তাকে ক্ষমা করা হয়।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রথমে আপিল বিভাগের বিচারপতি, তারপর প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগ্রহে তিনি প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরই একের পর এক সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন বিচারপতি সিনহা।

জানা যায়, সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বেই একটি ‘জুডিশিয়াল ক্যু’এর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তার অংশ হিসেবে বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগ। এরপর তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুন:প্রবর্তন করার আপিলও গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন বলে গুঞ্জন আছে। শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করে সিনহা অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়।

হা-মীম গ্রুপের স্বত্বাধিকারী এ কে আজাদও ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য। শেখ হাসিনার আশীর্বাদের কারণেই তিনি সকলের সমর্থন পেয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের সভাপতি হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দুই আমলে তিনি সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন পেয়েছেন। পেয়েছেন ব্যাংক, ব্যবসা। সেই এ কে আজাদের বিরুদ্ধেই সরকারের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। তিনি দুইজন সম্পাদককে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও সমালোচনার ক্লাব খুলেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া সরকার বিরোধী আন্দোলনে অর্থ যোগান দেওয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। গুরুতর অভিযোগ হলো, এ কে আজাদ লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়াকে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। বর্তমানে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছেন। আয়কর ফাঁকি, ভ্যাট ফাঁকিসহ ২৭৫ কোটি টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। দুদক বলছে, ১৭৫ কোটি টাকা আজাদ বিদেশে পাচার করছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে।

স্বাধীনতাবিরোধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট এবং ব্লগারদের উদ্যোগে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গড়ে উঠেছিল ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই মঞ্চের প্রশংসা করে সংসদে বক্তব্য রেখেছিলেন। ফলে সারা দেশের মানুষের সমর্থন পেয়েছিল তারা। আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য সমর্থনের কারণে ইমরান এইচ সরকার গণজাগরণ মঞ্চের নেতা হন। ছাত্রলীগের সমর্থনেই উত্থান ঘটে ইমরানের।

কিন্তু এই গণজাগরণ মঞ্চকে ইমরান নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইলে সে অওয়ামী লীগের সমর্থন হারায়। ফলে হঠাৎ করেই তিনি হয়ে উঠেন সরকারের কট্টর সমালোচক। ইমরান এখন বিএনপির চেয়েও বড় সমালোচক সরকারের। আওয়ামী লীগে তিনি বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই পরিচিত। ইমরান এইচ সরকারের গণজাগরণ মঞ্চ এখন সরকার বিরোধী প্লাটফর্ম।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, এ কে আজাদ ও ইমরান এইচ সরকারের মতো এরকম বিশ্বাস ভঙ্গ কারীদের সংখ্যা কম না। যারা আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় বেড়ে উঠে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছেন। তাদের এই উল্টোযাত্রা এবং ঘুরে যাওয়া নিয়ে অনেক গুঞ্জন আছে।

সূত্রমতে, এই তিন ব্যক্তির সাথেই বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবার পর বিভিন্ন প্রলোভনে পড়েই বিভিন্ন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এবং সরকার বিরোধী অবস্থান গ্রহন করেন। তবে ইতিমধ্যে তাদের স্বপ্ন ভঙ্গের আভাসও তারা পেতে শুরু করেছেন বলেও জানা যায়।



ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top