গোলাপগঞ্জের কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনের কবলে শত শত ঘরবাড়ি

S M Ashraful Azom
গোলাপগঞ্জের কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনের কবলে শত শত ঘরবাড়ি
মোঃ রুবেল আহমদ, গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি: এই গাঙ্গের ভাঙ্গন কেউ আর থামাইতে পারে না, খালি ভাঙ্গে আর ভাঙ্গে। গাঙ্গের ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি, জায়গা জমি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে হইয়া গেছি। অন্য জায়গায় ঘর বানাইয়া সরে যাইমু, তারও কোন উপায় নাই। কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলেছিলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নের বাগলা উত্তর পাড়া গ্রামের আনোয়ারা বেগম।

তিনি আরো জানান, আমার দুই ভাই আমিন আলী ও মুমীন আলীর ঘর ও কুশিয়ারা নদী খেয়ে ফেলেছে। তারাও পরিবার নিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন।

সরেজমিন বাদেপাশা ইউনিয়নের গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বাগলা উত্তরপাড়া গ্রামের সমুজ উদ্দিন, দুধু মিয়া, সিকন্দর আলী, পংকী মিয়া ও নুর উদ্দিনের বসতভিটা নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এতে করে পাঁচটি পরিবার তাদের মাথা গোজার ঠাই হারিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। এর পূর্বে ফরিজ আলী, সেবুল মিয়া, নছির আহমদ, গিয়াস উদ্দিন ও সাইফ উদ্দিনেরও বাড়িঘর নদী গর্ভে চলে গেছে।

খোজঁ নিয়ে জানা যায়, কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে উপজেলার শরিফগঞ্জ, বাদেপাশা, বুধবারীবাজার, ভাদেশ্বর ইউনিয়নের একাংশ রয়েছে হুমকির মুখে। একের পর নদী পাড়ের ঘরবাড়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেশ কয়েকটি হাট-বাজারসহ অনেক স্থাপনা নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শরিফগঞ্জ ইউনিয়নের কালার বাজার (মেহেরপুর বাজার), কদুপুর বাজার প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। ইতিমধ্যে কুশিয়ারা অঞ্চলের অন্যতম শরীফগঞ্জ বাজার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রয়েছে নদী ভাঙন ঝুঁকিতে।

পনাইর চক উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ইতিমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। খাটকাই-মেহেরপুর ডাইক রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থানে নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে করে এসব এলাকার লোকজনদের বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। বাদেপাশা ইউনিয়নের বাগলা উত্তরপাড়া, দক্ষিণ পাড়া ছয়ঘরী, আছিরগঞ্জ বাজার সহ নদীপারের শত শত ঘরবাড়ী নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

মুল্লার কোনা গ্রামের ছামাদ আহমদ জানান, কুশিয়ারা নদী ধীরে ধীরে বাদেপাশা ইউনিয়ন খেয়ে ফেলছে। এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ ইউনিয়নের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। আমকুনা খাগাইল গ্রামের তারেক আহমদ জানান, এসব এলাকার নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে ব্লক স্থাপন করতে হবে।

বুধবারীবাজার ইউনিয়নের বাগিরঘাট এলাকার কুশিয়ারা নদীর ডাইকের রাস্তা অধিকাংশ চলে গেছে নদীর গর্বে। নদীর পাড়ে ব্লক না থাকার ফলে এ এলাকা দীর্ঘদিন ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। বাগিরঘাট হাইস্কুলের সামনের রাস্তা রয়েছে ভাঙ্গনের কবলে। চন্দরপুর বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান কোঠা ইতিমধ্যে নদীর তলিয়ে গেছে নদীর গর্ভে। বর্তমানে চরম ঝুকিঁর মধ্যে রয়েছে বাজারের বিরাট একটি অংশ। যেকোন সময় আরও দোকান নদীর গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে এলাকায় কয়েকটি বাড়ী-ঘর রয়েছে চরম ঝুকিঁর মধ্যে। বাণীগ্রামের নয়াগ্রাম এলাকার কয়েকটি বসত ঘর রয়েছে ভাঙ্গনের কবলে।

এদিকে সবচেয়ে ঝুকিঁর মধ্যে রয়েছে বাণিগ্রাম, বাগিরঘাট ও চন্দরপুর এলাকা। এ ছাড়া লামা চন্দরপুর, কালিজুরি এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ী ইতিমধ্যে চলে গেছে নদীগর্ভে। ভাদেশর ইউনিয়নের গোয়াসপুর, শেখপুর, ফতেহপুর, খাটাখালিরপার সহ মোল্লাবাজারের উল্টো দিকের নদী পাড়ের এলাকাও আছে ঝুকিঁর মধ্যে। একের পর এক বসত-ভিটে, খেতের ফসলী জমি সহ বিভিন্ন স্থাপনা তলিয়ে গেছে নদীর তলদেশে।

বর্তমানে ভাঙ্গনের চরম ঝুকিঁর মধ্যে রয়েছে ওই এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, হাইস্কুল ও কবরস্থানসহ বেশ কিছু ঘর-বাড়ী। এসব এলাকার লোকজন দিনের বেলায় এলাকায় থাকলেও রাতের বেলায় তারা অন্যত্র রাত্রী যাপন করেন। কখন তাদের বাপ-দাদার বসতভিটে নদীতে তলিয়ে যায় এ আতংক তাদের তাড়া করছে।

এ ছাড়াও মীরগঞ্জ বাজার বড় একটি অংশ তলিয়ে গেছে কুশিয়ারা নদীতে। বাজারের অবশিষ্ট অংশও রয়েছে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনের কবলে। এ ইউনিয়নের গোয়াসপুর গ্রামের গৌছ মিয়া বলেন, আমার একটি বসতঘর গাঙ্গে (নদীতে) ভাঙ্গিয়া নিয়ে গেছে। এখন আমার আরও দুটি ঘর রয়েছে ভাঙ্গনের মুখে। এগুলোও যেকোন সময় নদীতে তলিয়ে যাওয়ারও আশংকা রয়েছে।



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top