বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর সাংগঠনিক অনুসন্ধান : গণতন্ত্রের মোড়কে দুর্বৃত্তায়ন

S M Ashraful Azom
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর সাংগঠনিক অনুসন্ধান : গণতন্ত্রের মোড়কে দুর্বৃত্তায়ন
সেবা ডেস্ক: দেড় বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে বাংলাদেশ ছাত্রদল। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। 

তখনই কমিটির সদস্য ছিল ১৫৩ জনের। ওই সময় বলা হয়েছিল, এবারের কেন্দ্রীয় কমিটি হবে ২০১ সদস্যের। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয় এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। সংগঠনের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে ৭৩৬ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পরও দেখা যাচ্ছে সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায়নি। 

কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো আরও নাকি অনেকেই আছেন। আংশিক কমিটি ঘোষণার পর বিদ্রোহ হয়েছিল, পদপ্রত্যাশী ও পদবঞ্চিতরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। ‘পকেট কমিটি’ গঠনের অভিযোগ তুলে ছাত্রদলের একটি অংশ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করেছে। 

সেই বিদ্রোহীদের অনেকেই এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। তা সত্ত্বেও এবারও কমিটি ঘোষণার পর ‘বিদ্রোহ’ শুরু হয়েছে। এরমধ্যেই বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতারা কিংবা তাদের সমর্থকরা কয়েক দফা হামলা চালিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে-বাইরে ভাঙচুর করা হয়েছে, আগুন দেওয়া হয়েছে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বালার ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে।

‘ছাত্রদলের নতুন কমিটি হচ্ছে’ খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার আগে নেতা-কর্মীদের মধ্যে এমন আলোচনা প্রায় নিয়মিতই হতো। কিন্তু গত তিন মাসে পরিস্থিতি একদমই পাল্টে গেছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতারাও এখন আর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখান না। অন্যদিকে বিএনপির নেতারা বলছেন, আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন, পরে ছাত্রদলের কমিটি। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একসময় অহংকার করতেন। ক্ষমতায় থাকতে একবার তিনি বলেছিলেন, বিরোধী আওয়ামী লীগকে মোকাবেলার জন্য তার ছাত্রদলই যথেষ্ট। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, ছাত্রদলের ছিল রমরমা অবস্থা। মনে হতো শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নয়, গোটা দেশটাই যেন ছাত্রদলের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এখন সে রামও নেই, নেই সে অযোধ্যাও।

গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, গঠনতন্ত্রে না থাকা বিএনপির চেয়ারপারসনকে ছাত্রদলের সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে ভাবা হয়। তার স্বাক্ষরে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্রে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর। সে হিসাবে বর্তমান কমিটি সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছে। অভিযোগ রয়েছে, কমিটির নেতাদের বেশির ভাই সক্রিয় নন। সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বড়জোর শ-খানেক নেতাকে দেখা যায়।

ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব যারা পেয়েছেন, তাদের প্রায় সবারই বয়স ৩০-এর বেশি। তাদের মধ্যে নিয়মিত ছাত্রও নেই বললেই চলে। কেউ কেউ হয়তো কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও বিষয়ে নাম লিখিয়ে ছাত্রত্ব বজায় রেখেছেন। তবে অনেক নেতাদেরই ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে অর্থাৎ নিয়মিত ছাত্রদের পিতারাই এবার ছাত্রদলে নেতৃত্ব পেয়েছেন! নিয়মিত ছাত্র কিংবা কমবয়সীদের কেন ছাত্রদলের নেতৃত্বে রাখা হচ্ছে না সেটা জানতে চাইলে বিএনপি নেতৃত্বের কাছ থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

যেই সংগঠনের নেতৃত্ব তৈরি হয় কোনও ধরনের গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ধার না ধেরে, গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে সেই সংগঠন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে কিভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই সামনে আসে। মূল দলের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করে খালেদা জিয়া হয়তো ভেবেছিলেন তার সোনার ছেলেরা জাতীয় সম্মেলন সফল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে খুঁটিনাটি কাজে দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর দলীয় কার্যালয়ে আগুন জ্বলতে দেখে তিনি হয়তো এটাও বুঝেছেন যে, এদের ওপর নির্ভর করে তিনি খুব বেশি দূর এগুতে পারবেন না।

ভঙ্গুর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের বিশৃঙ্খলা দৃশ্যমান হলেও তৃণমূলের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ব্যর্থ সাংগঠনিক নেতৃত্বের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত এখন বিএনপি। কেন্দ্র আর তৃণমূলের মাঝে অঙ্গ সংগঠন আর ছাত্র সংগঠনের এমন নেতৃত্বহীনতা বিএনপিকে মূলত গ্রাস করেছে। গণতান্ত্রিক চর্চার বাইরে গিয়ে দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি করে বিএনপি অনেকটাই জনবিচ্ছিন্ন। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি তাই পুরোই ধোঁয়াশার ভিতর আছে। সামনের দিনগুলোতে বিএনপি কি পদক্ষেপ নেয় তা রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল যোগাচ্ছে।


ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top